গেরুয়া ঝড় রুখতে রাম-গণেশ বিরোধিতা……. মমতাকে আক্রমণ বঙ্গ বিজেপির

রক্তিম দাশ, কলকাতা: গেরুয়া ঝড় রুখতেই রাম-গণেশ বিরোধিতা। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে এই অভিযোগেই সরব বঙ্গ বিজেপি। একুশের নির্বাচনের প্রচারে বঙ্গ বিজেপির প্রচারের অন্যতম ইস্যু হতে চলেছে এই হিন্দুত্ব আবেগ। পাশাপাশি রাজ্যজুড়ে শাসকের রাজনৈতিক সন্ত্রাসকেও প্রচারের অন্যতম হাতিয়ার করতে চলেছে বাংলার গেরুয়া ব্রিগেড। সূত্রের খবর, এই দুই অস্ত্রেই ভোটযুদ্ধে জেতার নীল নকশা বানিয়ে ফেলেছে গেরুয়া শিবির।
এই মুহূর্তে একুশের নির্বাচনী কৌশল ঠিক করতে পাঁচদিন ব্যাপী রুদ্ধদ্বার বৈঠক চলছে বঙ্গ বিজেপির। দিলীপ ঘোষ, মুকুল রায়রা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বদের নিয়ে সঙ্গে নিয়ে প্রতিটি জেলার নেতা এবং দলের সহযোগী মোর্চার নেতাদের সঙ্গে প্রতিদিন দীর্ঘ বৈঠকে বাংলার প্রতিটি বুথে সাংগঠনিক অবস্থার চুল-চেরা বিশ্লেষণের পাশাপাশি রণকৌশল চূড়ান্ত করার দিকে নজর দিচ্ছেন এমনটাই সূত্রের খবর।
সূত্র মতে, রাজ্যের বিভিন্ন এলাকার স্থানীয় সমস্যা, দুর্নীতি সহ একাধিক বিষয়ে শাসকদলের ব্যর্থতার পাশাপাশি গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর থেকে রাজ্যজুড়ে রাজনৈতিক সন্ত্রাসের কথাও প্রচারে আনার জন্য জোর দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিজেপির একরাজ্য নেতার কথায়, ‘আমফান আর করোনার জোড়া ফলায় শাসকদল এখন ব্যাকফুটে এর ফসল তুলতে এখন মরিয়া গেরুয়া শিবির। এর ফলশ্রুতি দেখা যাচ্ছে, প্রায় প্রতিদিনই রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে তৃণমূল ও অনান্য দল থেকে ব্যাপক হারে নেতা-কর্মীরা বিজেপি যোগ দিচ্ছেন। শহর থেকে গ্রাম সর্বত্রই তৃণমূলের প্রতি মানুষের মোহভঙ্গ হচ্ছে বলে মনে করছে গেরুয়া শিবির।গত লোকসভায় উত্তরবঙ্গে বিজেপির ভালো ফল হলেও দক্ষিণবঙ্গে তৃণমূল প্রায় অটুট ছিল। কিন্তু সম্প্রতি দক্ষিণবঙ্গে আমফান দুর্নীতিকে কেন্দ্র করে বিশেষত গ্রামীণ এলাকাগুলিতে গেরুয়া শিবিরের যোগদানের প্রবণতা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গিয়েছে। যা বিজেপিকে বাড়তি আস্থা যোগাচ্ছে, একুশে দক্ষিণবঙ্গে ভালো ফলের আশা তৈরি করছে।’
আরও পড়ুন:করোনা ভাইরাসের প্রকোপ কমতে আরও দুবছর সময় লাগবে: হু
সূত্রের আরও খবর, কলকাতা সহ শহরাঞ্চলে করোনা আবহে স্বাস্থ্য পরিকাঠামো নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এর পাশাপাশি অস্বাভাবিক বিদুৎ বিল নিয়েও শহুরে মানুষ ব্যাপক ক্ষুব্ধ। এই দুটি ইস্যুতেই বিজেপি এবং যুব মোর্চার আন্দোলন সাড়া জাগিয়েছে বলেই মনে করছে গেরুয়া শিবির। হেমতাবাদের বিজেপি বিধায়ক থেকে নেতা-কর্মীদের অস্বাভাবিক মৃত্যু ব্যাপক রাজনৈতিক সন্ত্রাসের যে আবহ তৈরি হয়েছে তা গেরুয়া শিবিরকে একুশের ভোটে মাইলেজ দিতে পারে বলেও মনে করছে বঙ্গ বিজেপি।
এর পাশাপাশি বাংলায় হিন্দুত্বের জোয়ার আসছে বলেই মনে করছে গেরুয়া শিবির। রামমন্দিরের ভূমিপুজোর দিন লকডাউন না হলে হিন্দুত্বের এই আবেগ চরম মাত্রায় পৌঁছত বলেই বঙ্গ বিজেপির দাবি। স্পষ্টতই এই আবেগকে একুশের ভোটে কাজে লাগতে চায় গেরুয়া শিবির।
বিজেপির রাজ্য সভাপতি তথা দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘হিন্দুত্ববাদের প্রতি উষ্মা বা বিদ্বেষবোধ এটা যারা তৈরি করেছে তারা তথাকথিত সেকুলার, ব্রিটিশ শিক্ষায় শিক্ষিত। তাঁরা বলেন রাম নাকি আমাদের দেবতা নন। গোবলয়ের দেবতা, উত্তরপ্রদেশের দেবতা। আজকে গণেশ পুজোর আগে দুদিন ধরে লকডাউন চলল। এরা বলেন, গণেশ নাকি বাঙালির দেবতা নন। দেবতা কি কোনও জাতির হয়? নির্দিষ্ট ভাবে হয় কি? আমাদের মধ্যে অনেকেই দক্ষিণ ভারতের দেবতা পুজো করেন। কেউ সাঁইবাবার পুজো করেন। তারা কি বাঙালি নন? এখন যারা ক্ষমতায় রয়েছেন তারাও এটা প্রচারে আনছেন।’
আরও পড়ুন:মানসিক অবসাদে আত্মঘাতী প্রাক্তন রাইফেল শুটার
দিলীপবাবুর অভিযোগ, ‘তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার আগেও ইদ, মহরম পশ্চিমবঙ্গে পালিত হত, কিন্তু রাস্তার মোড়ে মোড়ে ইফতার পার্টি আর রাস্তা দখল করে নমাজ পড়া হত না। এটা এখন বাঙালির উৎসব হয়ে গেল। অথচ রাম, গণেশ বাঙালির বাঙালির দেবতা নয়। ওরা মনে করছে হিন্দুত্বে যদি জাগরণ হয়, হিন্দুত্বের যদি প্রকাশ হয় তাহলে বিজেপি রাজনৈতিক লাভ পেতে পারে। তাই বিজেপিকে রোখার জন্য, হিন্দুত্বকে রোখার জন্য চেষ্টা হচ্ছে। তাই জন্য আজ গণেশপুজোর আগে লকডাউন চলছে। কিন্তু মহরমের আগের দিন লকডাউন থাকলেও তা তুলে নেওয়া হল। মুসলিম বন্ধুরা হাট-বাজার করবেন বলে। আমি এটার বিরোধিতা করছি না সেভাবে। কিন্তু আমার বক্তব্য, আপনি সবার মুখ্যমন্ত্রী সবাইকে দেখবেন। সবার কথা ভাবছেন না কেন?’