কৃষি বিলের প্রতিবাদে আজ ভারত বনধ কৃষকদের, ধরনা বিক্ষোভে উত্তপ্ত পাঞ্জাব, হরিয়ানা-বাংলা…

যুগশঙ্খ ডিজিটাল ডেস্ক: কৃষি বিলের প্রতিবাদে আজ শুক্রবার ভারত বন্ধের ডাক দিয়েছে দেশের অধিকাংশ কৃষক সংগঠন। পঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ-সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বন্ধের সমর্থনে শুরু হয়েছে বিক্ষোভ, পথ অবরোধ। বন্ধের সমর্থনে রাজ্যেও কৃষকদের রয়েছে ধরনা কর্মসুচি।প্রসঙ্গত, ইতিমধ্যেই রাজ্যসভায় পাশ হয়ে গিয়েছে বিতর্কিত তিনটি কৃষি বিল। বিল পাশের সময় ৮ বিরোধী সাংসদের বিরুদ্ধে উচ্চকক্ষে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগ উঠেছিল। সোমবার রাজ্যসভার চেয়ারম্যান এম ভেঙ্কাইয়া নাইডু তাঁদের সাসপেন্ড করেন। কেবল রাজ্যসভা নয়, সারা দেশেই কৃষকরা শুরু করেছেন প্রতিবাদ আন্দোলন।
প্রতিবাদরত কৃষকরা শুক্রবার সকালে দিল্লি-অমৃতসর হাইওয়ে অবরোধ করেন। অযোধ্যা-লখনউ হাইওয়েতে প্রবল যানজটের খবর মিলেছে। পঞ্জাব ও হরিয়ানায় ধর্মঘট পূর্ণতা পাবে বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ সেখানে কৃষকদের সমর্থনে রয়েছে শাসক কংগ্রেস, বিরোধী আম আদমি পার্টি এবং NDA-এর শরিক SAD। পঞ্জাবে ইতমধ্যেই তিনদিনের রেল রোকো কর্মসুচি শুরু করেছেন কৃষকরা। দাবি মানা না-হলে তাঁরা ১ অক্টোবর থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য রেল রোকো কর্মসুচি নেবেন বলে হুমকি দিয়েছেন।
বিতর্কিত কৃষি বিল ও শ্রমবিধির বিরুদ্ধে গোটা দেশে আন্দোলন শুরু হয়েছে। বিশেষত উত্তর ভারতের কৃষিপ্রধান রাজ্য পাঞ্জাব ও হরিয়ানায় কৃষক বিক্ষোভের আগুন জ্বলছে। পাঞ্জাবে বৃহস্পতিবার থেকে ৩ দিনের রেল অবরোধ কর্মসূচি শুরু হয়েছে। শুক্রবার পাঞ্জাব বন্ধের ডাক দিয়েছে কৃষক সংগঠনগুলি। এদিন অমৃতসর ও ফিরোজপুর-সহ বহু স্টেশনে রেল লাইন অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন কৃষকরা। এর জেরে ২৪-২৬ সেপ্টেম্বর ২৬টি যাত্রিবাহী ও ৮টি মালবাহী ট্রেন বাতিল করা হয়েছে। কয়েকটি ট্রেনের রুট পরিবর্তন করেছেন ভারতীয় রেল কর্তৃপক্ষ। অক্টোবর থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের হুমকিও দিয়েছেন আন্দোলনকারী কৃষকরা। হরিয়ানাতেও বহু জায়গায় রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখাচ্ছে কৃষক সম্প্রদায়। সেখানে আন্দোলনরত কৃষকের ওপর পুলিশি নির্যাতনের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে শাসক দল বিজেপি-র শরিক জেজেপি-র কয়েক জন বিধায়ক।
Punjab: Farmers, under the aegis of Bharatiya Kisan Union and Revolutionary Marxist Party of India (RMPI), block Amritsar-Delhi National Highway near Phillaur in Jalandhar, in protest against #FarmBills passed in the Parliament. pic.twitter.com/6zsXZ5VhnW
— ANI (@ANI) September 25, 2020
আরও পড়ুন: পশ্চিমবঙ্গ এখন ইসলামি সন্ত্রাসবাদের নতুন কেন্দ্র…
হরিয়ানার ‘ভারতীয় কিষান ইউনিয়ন’ জানিয়েছে, তারা কোনও কোনও সংগঠনের দেশব্যাপী বনধের প্রস্তাবকেও সমর্থন করেছেন। এক বিবৃতিতে পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী অমরিন্দর সিং জানিয়েছেন, তাঁর সরকার কৃষকদের পাশে রয়েছে। সেই কারণে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে ১৪৪ ধারা ভঙ্গের কোনও অভিযোগ নথিবদ্ধ করা হবে না। এদিকে কৃষি বিলের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী প্রতিবাদ আন্দোলন শুরু করে দিয়েছে কংগ্রেসও। কৃষি বিলের বিরুদ্ধে ২ কোটি স্বাক্ষর সংগ্রহের অভিযান শুরু করেছে তারা। যুব কংগ্রেস দেশের নানা স্থানে পথে নেমে বিক্ষোভ দেখিয়েছে কংগ্রেসের মুখপাত্র অভিষেক সিংভি মোদি সরকারকে অভিযুক্ত করে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী বিলের ব্যাপারে সকলকে ভুল বুঝিয়েছেন। তাঁর দাবি, এই বিলের ফলে দেশের কৃষক শ্রেণি কর্পোরেট দাসত্বের শিকার হবে।
কৃষি বিলের প্রতিবাদে বিহারের দ্বারভাঙায় শুক্রবার সকালে মোষের পিঠে চেপে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখায় রাষ্ট্রীয় জনতা দল। তারা ছাড়াও সে রাজ্য কংগ্রেস ও তৃণমূল এই বিলের বিরোধিতা করেছে। কর্নাটক-তামিলনাড়ু হাইওয়েও অবরোধ করা হয়। অবরোধ হয় অযোধ্যা-লখনউ হাইওয়েতেও।
আরও পড়ুন: দেশে মোট আক্রান্ত পার হল ৫৮ লক্ষ, সুস্থ ৮১ হাজার
এ দিকে, কৃষি বিলের বিরুদ্ধে শুক্রবার ধর্মতলায় গান্ধীমূর্তির পাদদেশে ধর্নায় বসবে তৃণমূলের কিষান খেতমজদুর সংগঠন। গোটা রাজ্যে অন্য কৃষক সংগঠনগুলো সেই সময়ে জাতীয় ও রাজ্য সড়ক অবরোধে ব্যস্ত থাকবে। বৃহস্পতিবার রাজ্যের বিভিন্ন গ্রামীণ হাটবাজারে তৃণমূলের কিষান খেতমজদুর সংগঠনের সদস্যরা কৃষি বিলের প্রতিবাদে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। সংগঠনের সভাপতি বেচারাম মান্না বলেন, ‘আমরা অন্তত চার-পাঁচ হাজার কৃষক নিয়ে কলকাতায় যাব। প্রয়োজনে আমরা রক্ত দিয়ে পোস্টার লিখে প্রতিবাদ জানাব।’ মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিনের ধর্না-মঞ্চে হাজির হতে পারেন, এমনই ইঙ্গিত দিয়েছেন বেচারাম। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় বঞ্চনার বিরুদ্ধে তৃণমূলের কিষান-খেতমজদুর সংগঠনের ‘মেঠো প্রতিবাদ’ চলাকালীন টেলিফোনেই গোটা রাজ্যের কৃষককূলকে বার্তা দিয়েছিলেন মমতা। আবার ধর্মতলায় সিএএ নিয়ে ধর্না চলাকালীন উৎসাহ দিতে মুখ্যমন্ত্রী হঠাৎই সেখানে উপস্থিত হয়েছিলেন।
কৃষকদের ডাকা আজকের ভারত বনধকে ইতিমধ্যেই সমর্থন জানিয়েছে কংগ্রেস সহ বিজেপি বিরোধী অধিকাংশ দল। কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালা জানিয়েছেন, ‘কৃষি বিলের বিরুদ্ধে আজ রাজপথে নামা কৃষকদের পাশে দাঁড়াবেন দলের কর্মী-সমর্থকরা।’ সমাজবাদী পার্টি, আরজেডিও আজকের বনধ সমর্থনের কথা ঘোষণা করেছে।