করোনা-কালে ভার্চুয়াল মাধ্যম ও ভ্রাম্যমাণ গাড়িতে দুর্গাদর্শনের অতিরিক্ত বিশেষ পরিকল্পনা পুজো কমিটিগুলির

অভীক বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা: শহরের বড় বড় দুর্গাপূজার মণ্ডপে এক সময়ে যত বেশি সংখ্যক মানুষ একসঙ্গে প্রবেশ করতেন, সেই পুজোকে তত বেশি জনপ্রিয় মনে করা হত। কিন্তু করোনা কালে ভিড় হওয়া তো দূর, বেশির ভাগ দর্শকই এভাবে মণ্ডপমুখী হবেন কি না, তা নিয়েই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। তাই নিজেদের পুজোকে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছতে ভার্চুয়াল মাধ্যমের সাহায্য নিচ্ছে সমস্ত পুজো কমিটি। আবার অনেকে ব্যবস্থা করছেন ভ্রাম্যমাণ গাড়িতে এলইডি স্ক্রিনের মাধ্যমে দুর্গাদর্শনেরও।
তাই এবার ভিড় টেনে নয়, বরং ভিড় কমিয়ে সেরার শিরোপা পেতে চাইছেন পুজো উদ্যোক্তারা। আর সেই প্রতিযোগিতায় নামতে গিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া, ভার্চুয়াল মাধ্যম, এলইডি টিভি লাগানো ভ্রাম্যমাণ গাড়ি ব্যবহারে ঝুঁকছেন। প্রত্যেক বার মণ্ডপে ভিড় সামলাতে বিপুল পরিমাণ স্বেচ্ছাসেবীর প্রয়োজন হয়।
কিন্তু চলতি বছরে যেহেতু মণ্ডপে ভিড় সামলানোর সমস্যা নেই, তাই এই দলকেই নিজেদের সোশ্যাল মিডিয়া, ফেসবুক পেজ থেকে হোয়্যাটসঅ্যাপে নিজেদের পুজোর প্রত্যেক মুহূর্তের আপডেট পোস্ট করার কাজে লাগানোর জন্য ব্যবহার করা হবে। তাদের জন্য তাদের বিভিন্ন দলেও ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে শুধু এ রাজ্যে নয়, দেশ থেকে বিদেশের বাঙালিরাও তাদের ভিনদেশের ঘরে বসেই প্রিয় শহরের দুর্গাপুজো উপভোগ করতে পারবেন।
প্রসঙ্গত, থিমের চমকে ভিড় টেনেই বড় হয়েছে শহরের একাধিক পুজো। আর ভিড়ের ওপর নজর রাখার জন্য আগে থেকেই মণ্ডপের সিসিটিভিতে নজর রাখার জন্য পুজো কমিটির একটি টিম সবসময়েই তৈরি থাকত। কিন্তু শহরের একাধিক পুজো মানুষকে দেখতে হবে ভার্চুয়াল মাধ্যমেই।
তাই পুজোর পাশাপাশি ভার্চুয়াল মাধ্যমে যাতে প্রতি মুহূর্তের আপডেট দেওয়া যায়, তার জন্য বিশেষ সক্রিয়তা দেখাচ্ছে পূজা কমিটিগুলি। শুধু নিজস্ব ফেসবুক পেজেই নয়, যে যে ওয়েবসাইট এবং অ্যাপ সাধারণ মানুষের কাছে পুজো পৌঁছে দিতে চায়, তাদের সকলের সঙ্গে সমন্বয় রক্ষা করবে পুজোর এই ডিজিটাল টিম। নিউ আলিপুরের সুরুচি সঙ্ঘ, বেহালা নতুন দল হোক বা উত্তর কলকাতার কাশী বোস লেন, সকলেই এই নতুন চ্যালেঞ্জের জন্য প্রস্তুত।
শুধু তাই নয়, বিশাল বিশাল এলইডি স্ত্রিন সহ শহরের পথে নামছে বেশ কিছু গাড়িও। যাতায়াতে যাদের সমস্যা রয়েছে বা বিভিন্ন সমস্যার কারণে যারা মণ্ডপে আসতে পারছেন না, তাদের জন্য ভ্রাম্যমাণ গাড়িতে ভার্চুয়াল প্রতিমা দর্শনের ব্যবস্থা করেছেন উদ্যোক্তারা।
যোধপুর পার্ক ৯৫ পল্লির শহরের প্রথম সারির পুজোগুলির মধ্যে অন্যতম। ভিড় কমাতে পাড়ায় পাড়ায় ভ্রাম্যমাণ গড়িতে ভার্চুয়াল প্রতিমা দর্শনের ব্যবস্থা করেছেন উদ্যোক্তারা। পুজো কমিটির কর্মকর্তা তথা কলকাতা পুরসভার প্রশাসক বোর্ডের সদস্য রতন দে’র কথায়, ‘প্রতিমা দর্শনে কেউ আসতে চাইলে তো বাধা দিতে পারি না। তবে, যতটা সম্ভব ভিড় এড়ানোই আমাদের লক্ষ্য। এর জন্য বেশ কয়েকটি ভ্রাম্যমাণ এলইডি টিভি লাগানো গাড়ি কেনা হচ্ছে। সেই টিভিতে সকাল থেকে বিকেল দেখানো হবে পুজোর খুঁটিনাটি। মণ্ডপে না আসলেও চিন্তা নেই। বাড়িতে বসেই দেখা যাবে পুজো।’
উত্তর কলকাতার কাশী বোস লেনে মণ্ডপে দর্শন ছাড়াও ক্লাবের ওয়েবসাইট, ফেসবুক পেজে লাইভ পুজো দেখতে পারবেন দর্শকরা। কলাবউ স্নান, সন্ধিপুজো, সন্ধ্যা আরতি অথবা দশমীর বরণ—সবই দেখা যাবে। পুজো কমিটির তরফে সোমেন দত্ত বলেন, ‘আগে থেকেই বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়াতে দিয়ে দেওয়া হবে প্রত্যেকটি লিংক।
সেই লিংকের মাধ্যমে মণ্ডপ থেকে প্রতিমা দর্শন করা যাবে এক ক্লিকেই। থাকছে ইউটিউব চ্যানেলে।’ ঠিক যে পদ্ধতিতে ঠাকুর দেখা যাবে এবার সুরুচি সঙ্ঘেও। বেলেঘাটা ৩৩ পল্লিও এবার আর ভিড় টানার প্রতিযোগিতায় নেই। জোর দেওয়া হচ্ছে ভার্চুয়ালে। তা সত্ত্বেও যাঁরা আসবেন তাঁদের মন্ডপে ঢোকা এবং বেরোনোর স্যানিটাইজার গেট পেরিয়ে তবেই ঢুকতে হবে।
পুজো কমিটির তরফে সুশান্ত সাহা বলেন, ‘মণ্ডপে দর্শনার্থীদের আসা বন্ধ করা সম্ভব নয়। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে দূরবর্তী অঞ্চল থেকে দর্শনার্থীরা আসতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। তাই অনলাইনে পুজো দেখানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আগে জীবন, পরে উৎসব-যাপন।’