ডা: কাফিল খানকে জেল থেকে ছাড়ার নির্দেশ হাইকোর্টের, খুশি CAA বিরোধীমহলে

মোকতার হোসেন মন্ডল, কলকাতা : এলাহাবাদ হাইকোর্ট ডাঃ কাফিল খানকে শীঘ্র মুক্তি দেওয়ার জন্য সরকারকে নির্দেশ দেয়। আর তার পরেই খুশির হাওয়া বইছে সিএএ বিরোধী আন্দোলনকারীদের মধ্যে। ফেসবুক, টুইটারে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।
নো এনআরসি মুভমেন্টের অরূপ মজুমদার জানান,’ডা: কাফিল খান বিভিন্ন রাজ্যে বিভিন্ন সময়ে স্বাস্থ্য বিপর্যয় মোকাবিলায় নি:স্বার্থ ভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে নিজের এক বিশেষ পরিচিতি গড়ে তুলেছিলেন। ২০১৯ এ এনআরসি, এনপিআর ও সিএএ বিরোধী আন্দোলন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়লে স্বাভাবিকভাবেই ডা: কাফিল খানও সেই আন্দোলনের সমর্থনে গলা মেলান।
এই সাধারণ গণতান্ত্রিক কাজের জন্য তাকে একের পর এক ধারায় চূড়ান্ত স্বৈরাচারী ভাবে দীর্ঘদিন জেলে আটকে রাখার পর জনতার দাবি এবং আইনকে গুরুত্ব দিয়ে আজ অবশেষে এলাহাবাদ হাইকোর্ট জামিন দেয়।
স্বাভাবিক কারণেই আমরা এতে খুশি। তবে এখনও অনেক প্রতিবাদী বন্দী রয়েছেন। তাদের সকলকে মুক্ত করার সংগ্রাম আমরা জারি রাখবো।
পাশাপাশি আমাদের মূল লড়াই এনআরসি, এনপিআর ও সিএএ-র বিরুদ্ধে আপোষহীন লড়াই চলবেই।
মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআর-এর রাজ্য সহ সভাপতি রঞ্জিত শূর বলেন,’
আজ এলাহাবাদ হাইকোর্টের রায়ে এটা পরিস্কার, সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগে ডাঃ কাফিল খানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। সরকারের সমালোচনা করায়, ভিন্ন মতের কারণে প্রতিহিংসা বশত সাজানো অভিযোগে জেলে পোরা হয়েছিল তাঁকে। আদৌ হিংসা ছড়াননি, উস্কানি দেননি তিনি। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এটা বুঝতে আইন বিভাগের এত দীর্ঘ সময় লাগল? নাকি এটাও একটা পরিকল্পিত খেলা। একজন নামী মানব দরদী ডাক্তারকে বিনাদোষে ৬০/৭০ দিন জেলের ঘানি টানিয়ে দেওয়া যায় এটা দেখিয়ে দেওয়া হল। তুমি যেই হও সরকারের বিরুদ্ধে বললে জেলে যেতে হবে, কেউ কিছু করতে পারবে না- এই বার্তা দিয়ে দেওয়া হল। আদালত সেক্ষেত্রে সময় নস্ট করে, হিয়ারিং না করে প্রকারান্তরে সরকারকে মদত দিল? প্রশান্ত ভূষণের মামলায় বিচার ব্যবস্থার বিরুদ্ধেও মানুষ সোচ্চার হতে আজ তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হল। কারণ এরপর জনরোষ ফেটে পড়তে পারত। আজ তাই একই দিনে প্রায় একই বক্তব্য রেখে মুক্তি দেওয়া হল দিল্লির দেবাঙ্গ কলিতাকেও। সরকার ও বিচার বিভাগ জনরোষকে বাগে আনতে আজ তাঁদের মুক্তি দিল। আরও অসংখ্য প্রতিবাদী মানুষ জেলে আছেন এখনো। মানুষ বুঝেছে প্রতিবাদই পারে সরকার এবং আদালতের অনিচ্ছুক হাত থেকে প্রতিবাদীকে মুক্ত করতে। তাই প্রতিবাদ চলবে। তাঁদের মুক্তি প্রতিবাদের জয়।’
নাগরিক পঞ্জি বিরোধী যুক্ত মঞ্চের নেতা প্রসেনজিৎ বসু বলেন,'”এলাহাবাদ হাইকোর্ট ডাক্তার কাফিল খানের বিরুদ্ধে এনএসএ আইনের ধারায় আনা অভিযোগকে খারিজ করে তাঁকে মুক্তি দিয়েছে। আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে কাফিল খানের সিএএ বিরোধী বক্তৃতা প্রসঙ্গে হাই কোর্ট বলেছে যে ওই বক্তৃতা জাতীয় সংহতির পক্ষে এবং হিংসার বিরুদ্ধে। এর থেকে আবার প্রমাণ হোল যে কেন্দ্রের মোদী সরকার এবং উত্তর প্রদেশের যোগী সরকার এনআরসি-সিএএ বিরোধী আন্দোলনকারীদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসাচ্ছে। বিচার-ব্যবস্থা যদি নিরপেক্ষভাবে কাজ করে তাহলে ন্যায়-বিচার হবে, সকল রাজনৈতিক বন্দীরাই রেহাই পাবে।”
জামায়াতে ইসলামী হিন্দের রাজ্য সভাপতি মাওলানা আব্দুর রফিক জানান,’কাফিল খানের লড়াইকে সম্মান জানাই। আশা করি ভবিষ্যতেও তিনি দেশের জন্য লড়াই করবেন।কাফিলের জন্য যারা আন্দোলন করেছেন তাদেরও ধন্যবাদ জানাই। সিএএ, এনআরসি নিয়ে আন্দোলন করেছেন এমন অনেকে এখনো জেলে আছে,তাদের মুক্তির দাবি জানাচ্ছি। মার্চ পর্যন্ত সিএএ-এর বিরুদ্ধে যে আন্দোলন করেছি তা জারি থাকবে, গণসংগঠনগুলিকে এ বিষয়ে আরও নজর দিতে হবে।’
সংখ্যালঘু যুব ফেডারেশনের রাজ্য সম্পাদক মুহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন,’ডা. কাফিল খানকে গ্রেপ্তার করে তার প্রতি যে অবিচার করা হয়েছে মহামান্য এলাহাবাদ হাইকোর্টের রায়ে তা আরো একবার প্রমান হলো। ডা. কাফিল খান সহ ক্যা, এনপিআর, এনআরসি বিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের কণ্ঠরোধ করতে চেয়েছে বিজেপি সরকার। এভাবে মূলত সংখ্যালঘুদের গ্রেপ্তার ভারতীয় গণতন্ত্র ও বাক্ স্বাধীনতার পরিপন্থী।
যে সমস্ত আন্দোলনকারীদের গ্রেপ্তার করে রাখা হয়েছে তাদের অবিলম্বে মুক্তি দেওয়া হোক।’