কাজ হারানো দুঃস্থদের জন্য ত্রিশ হাজার টাকা দিলেন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক

ভাস্করব্রত পতি, তমলুক : করোনা মহামারী স্তব্ধ করে দিয়েছে জন জীবনের স্বাভাবিক ছন্দ। কেড়ে নিয়েছে অনেক প্রাণ। কাজ হারিয়েছেন অনেক মানুষ। এখনো দ্রুতহারে ছড়াচ্ছে সংক্রমণ। এর মধ্যেই অনুষ্ঠিত হতে চলেছে বাঙ্গালীর শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপূজা। পুজোর আগে স্বজনহারানো এবং কাজ হারানো এই অসহায় দুঃস্থ মানুষগুলির পাশে দাঁড়ালেন এক অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক পণ্ডিত তারানন্দ চক্রবর্তী। দুর্গাপূজা উপলক্ষে এই অসহায় দুঃস্থ মানুষগুলিকে নতুন বস্ত্র দেওয়ার জন্য ভারত সেবাশ্রম সংঘের বাঁকুড়া শাখার অধ্যক্ষ মহারাজের হাতে তাঁর পেনশন অ্যাকাউন্ট থেকে ত্রিশ হাজার টাকার চেক তুলে দেন তারানন্দ বাবু। অধ্যক্ষ মহারাজ জানান, এই বিপর্যয়ের দিনে এই ভাবে দুঃস্থ মানুষের সেবাকার্যে তারানন্দ বাবুর মত একজন পেনশনভোগীর এইভাবে এগিয়ে আসা এক দৃষ্টান্তমূলক ঘটনা।
তারানন্দবাবু হলেন বাঁকুড়া জেলার তালডাংরা থানার হাড়মাসড়া গ্রামের বাসিন্দা। তিনি ছিলেন বাঁকুড়া জেলার সারেঙ্গা থানার জামবনি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সংস্কৃত শিক্ষক ও সহকারি প্রধান শিক্ষক। চাকুরি থেকে অবসর গ্রহণ করেছেন দীর্ঘদিন আগেই। বর্তমানে তিনি অশীতিপর এক বৃদ্ধ। বাড়ির বাইরে বিশেষ বের হন না। কিন্তু করোনা উদ্ভূত পরিস্থিতিতে স্বজনহারানো ও কাজ হারানো অসহায় মানুষদের দুরবস্থা তাঁর মত সততার ঘেরাটোপে থাকা, সাদামাটা গ্রাম্য জীবনে অভ্যস্ত, সহজ সরল মানুষকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে। তাই এই বিপর্যস্ত মানুষগুলির সেবাকার্যের জন্য বাঁকুড়া শাখার অধ্যক্ষ মহারাজের হাতে তাঁর পেনশন অ্যাকাউন্ট থেকে এই সঞ্চয় তুলে দেন তিনি।
তাঁর পাণ্ডিত্যের পুরস্কার স্বরূপ ২০০১ সালের ৫ই সেপ্টেম্বর তৎকালীন রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে নতুন দিল্লির ” বিজ্ঞান ভবনে” পেয়েছেন জাতীয় শিক্ষকের বিরল সম্মান। রাজ্য সরকারের কাছ থেকেও একাধিকবার সম্মানিত হয়েছেন। ২০১৯ সালে কলকাতা সংস্কৃত কলেজ ও ইউনিভার্সিটি থেকেও পেয়েছেন বিশেষ সাম্মানিক। তারানন্দ বাবু জানান, বাঁকুড়া বিশ্বপ্রেমিক সংঘের অধ্যক্ষ স্বামী প্রশান্তানন্দ মহারাজ জীর ভাবাদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়েই এইরকম সেবামূলক কার্য তিনি দীর্ঘদিন ধরে করে আসছেন। এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, কোরোনা এবং আমফান বিপর্যয়ে যখন স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল জনজীবনের স্বাভাবিক ছন্দ, সেই সময়ও এই সমস্ত বিপর্যস্ত মানুষের সেবা কার্যের জন্য ভারত সেবাশ্রম সংঘের বাঁকুড়া শাখার অধ্যক্ষ মহারাজের হাতে তাঁর পেনশন অ্যাকাউন্ট থেকে ত্রিশ হাজার টাকার চেক তুলে দিয়েছিলেন তারানন্দ বাবু।
আরও পড়ুন: কম দৈনিক সংক্রমণ, করোনায় মৃতের সংখ্যাও কমল
পুরনো দিনের স্মৃতিচারনা করতে গিয়ে তারানন্দ বাবু জানান, সেই সময় ষষ্ঠীর দিন মর্নিং হয়ে বিদ্যালয় ছুটি হতো। বাড়ি পৌঁছাতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে যেত। পূজো উপলক্ষে তাঁদের জন্য কি উপহার নিয়ে আসছি, তা জানার জন্য ছেলেমেয়েরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতো। আজ তাঁরা সকলেই প্রতিষ্ঠিত। এই বিপর্যয়ের দিনে তাঁরাও বিপর্যস্ত মানুষের সেবা কার্যে অংশগ্রহণ করেছে। আমিও এই বিপর্যস্ত মানুষগুলির সেবাকার্যের জন্য আমার পেনশন অ্যাকাউন্ট থেকে এই সামান্য সঞ্চয় তুলে দিয়েছি সঙ্ঘের অধ্যক্ষ মহারাজের হাতে।
এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, তারানন্দ বাবুর ছেলে হেরম্বনাথ চক্রবর্তী বর্তমানে ঝাড়গ্রাম জেলার গোপীবল্লভপুর এক নম্বর ব্লকের অন্তর্গত নয়াবসান জনকল্যান বিদ্যাপীঠে সংস্কৃত শিক্ষক হিসেবে কর্মরত। তিনি, কোরোনা এবং আমফান এই জোড়া প্রাকৃতিক বিপর্যয়েও বিপর্যস্ত মানুষের সেবাকার্যের জন্য ভারত সেবাশ্রম সংঘের ঝাড়গ্রাম জেলার পুখুরিয়া শাখার অধ্যক্ষ মহারাজের হাতে কুড়ি হাজার টাকার চেক তুলে দিয়েছিলেন। পরবর্তীক্ষেত্রে শিক্ষক দিবসের প্রাক্কালে দুস্থ শিক্ষার্থীদের সাহায্যার্থে ঝাড়গ্রাম রামকৃষ্ণ মিশনের সম্পাদক মহারাজের হাতে তুলে দিয়েছিলেন কুড়ি হাজার টাকার চেক। হেরম্ববাবু জানান, এই সমস্ত জনহিতকর কার্যে বাবা বরাবরই পাশে থেকেছেন, উৎসাহ দিয়েছেন এবং এই ভাবে এগিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।