
মনীষা ভট্টাচার্য: মহেশ ভাট্ট। বলিউড ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে এক সময় রাজ করতে চলা পরিচালক। একের পর এক ব্লকব্লাস্টার ছবির নির্মাতা তিনি। এক সময় ছবির পরিচালনা থেকে সরে আসেন। কিন্তু তাঁকে নিয়ে আলোচনা চলতেই থাকে। বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে তিনি আবারও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে কেন তা সবাই জানেন। সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যু তদন্তে তাঁর নাম যুক্ত হয়েছে। কারণ সুশান্তের প্রেমিকা রিয়া অভিনীত ‘জলেবি’ ছবির প্রযোজক ছিলেন মহেশ ভাট্ট এবং সেই সূত্রে মহেশের সঙ্গে রিয়ার সম্পর্ক সামনে আসে।
অন্যদিকে সুশান্তের কেসে আলোচিত হয় নেপোটিজম নিয়ে, সেখানেও তাঁর নাম উঠে আসে। পাশাপাশি ‘সড়ক ২’ ছবির ক্ষেত্রেও আলোচিত হয় তাঁর কথা। বছর কুড়ি পরে আবার পরিচালকের দায়িত্ব কেমন সামলালেন দেখা যাক। দেখা যাক, এত আলোচনার পর ছবির রেটিং-ই বা কেমন হল।
১৯৯১ সালে মুক্তি পাওয়া ‘সড়ক’ ছবির সিক্যুয়াল এই ‘সড়ক ২’। নয়ের দশকের হিট জুটি সঞ্জয় দত্ত ও পূজা ভাট্ট অভিনীত ‘সড়ক’ মন কেড়েছিল দর্শকের। সিক্যুয়ালের শুরুতেও সেই রোম্যান্সের ছোঁয়া। শুধু শুরুতে নয়, মাঝে মাঝেই সেই পুরনো দৃশ্য ফিরে ফিরে এসেছে। নতুন ছবিতে সঞ্জয় দত্তের (রবি কিশোর) বিষাদঘন জীবনে প্যাসেঞ্জার হিসেবে আসে আলিয়া ভাট্ট (আর্যা)। মা মরা আর্যা তার প্রেমিকের সঙ্গে কৈলাস যাবে, আর তার যাত্রাপথের অনেকটা রাস্তা রবিজি পৌঁছে দেবে।
পথ চলতে চলতে আর্যা জানায় তার জীবনের কথা, প্রেমিকের কথা (আদিত্য রায় কাপুর), মায়ের মৃত্যুর কথা। সে চায় যে ভণ্ড সাধুবাবার কথায় তাঁর মাসি (প্রিয়াঙ্কা বোস) তাঁর মাকে খুন করল, সেই সাধুবাবা (মকরকন্দ দেশপাণ্ডে)এবং মাসিকে শিক্ষা দিতে। বর্তমান সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করে আর্যা সেই ভণ্ডবাবার বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলে। সে বিশ্বাস করত তাঁর বাবা (যিশু সেনগুপ্ত) তাঁকে ভালবাসে। সে জানে সাধুবাবার এই সব কার্যকলাপ শুধুই তাঁর মায়ের রেখে যাওয়া সম্পত্তি দখলের জন্য যা ২১ বছর হয়ে গেলে সে-ই পাবে। তাই তাঁকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিতে চায় তার মাসি যাঁকে সাহায্য করছে ওই সাধুবাবা।
২ ঘণ্টা ১৪ মিনিটের সিনেমায় এই গল্পই বলার চেষ্টা করেছেন পরিচালক। বাস্তবে সম্পত্তি হাতানোর জন্য তন্ত্রমন্ত্রের প্রয়োগ কতটা হয় জানি না, তবে ছবিটা পুরোটাই একটা ট্র্যাপ, যে ট্র্যাপ থেকে আর্যাকে উদ্ধার করতে রবি কিশোর স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এগিয়ে আসেন। কিন্তু কেন আসেন? কি তাঁর স্বার্থ বোঝা যায় না। তাহলে এতক্ষণ হটস্টারে ছবিটি দেখবেন কেন? দেখবেন মূলত তিনটি কারণের জন্য। সঞ্জয় দত্তের অভিনয়। পরিণত বয়সের সঞ্জয়ের অভিনয়ও পরিণত। অন্যদিকে যিশু সেনগুপ্ত। ‘রাজকাহিনি’-র পর আরও একবার তাঁকে খলনায়কের চরিত্রে দেখা গেল। এযাবৎকাল তাঁকে যে সব হিন্দি ছবিতে দেখা গেছে তাতে তাঁর স্ক্রিন প্রেজেন্স ছিল খুবই কম। কিন্তু মহেশ ভাট্ট তাঁকে এই ছবিতে অনেকটাই জায়গা দিয়েছেন এবং অভিনেতা তার সদব্যবহারও করেছেন। ভালো মানুষ সেজে থাকতে থাকতে হঠাৎ করেই দাঁত-নখ বেরিয়ে আসা এবং একদম শেষে শঠতার যে রূপ তিনি চিত্রিত করেছেন তাঁর অভিনয়ে তা প্রশংসার দাবি রাখে। আলিয়া ভাট্ট অন্য পরিচালকের পরিচালনায় বেশি ভা্লো। তবে বাবার অ্যাকশন-কাটে তিনি মন্দ নন। আর অবশ্যই ভালো এ ছবির গান এবং সিনেমাটোগ্রাফি।
যে পথ একদিন দুটি হৃদয়কে মিলিয়েছিল শুধু ভালবাসার শর্তে,আজ সেই পথেই কত হিংসা, ঈর্ষা, লোভ, মিথ্যাচার, ক্ষমতার লড়াই, তবু ভালবাসা আছে ভালবাসাতেই-এমন বার্তাই কি দিতে চাইলেন বর্তমানে বিতর্কিত পরিচালক মহেশভাট্ট? বর্তমান এই টালমাটাল পরিস্থিতিতে এই ছবিকে বয়কটের ডাক দিয়েছেন অনেকেই। ট্রেলার মুক্তির পরে আনলাইকের বন্যা বয়ে গেছে। ছবি মুক্তির পরেও চলেছে কম রেটিং দেওয়ার খেলা। ইন্টারনেট মুভি ডেটাবেস-এর রেকর্ড অনুযায়ী ৯৮২১ জন ইউজার এ ছবিকে ১০ এর মধ্যে ১.১ রেটিং দিয়েছেন। তবে আমি বলব সব অঘটন ভুলে, সঞ্জয় দত্ত ও যিশু সেনগুপ্তের জন্য এ ছবি অন্তত একবার আপনি দেখতেই পারেন।