পাঠানো হল দূর্গাপুরের কোভিড-১৯ হাসপাতালে, কলকাতা থেকে পালিয়ে আসা করোনা আক্রান্ত মহিলাকে কেন্দ্র করে তুলকালাম রেল শহর চিত্তরঞ্জনে
শুভেন্দু বন্দোপাধ্যায়, আসানসোল: কলকাতা থেকে পালিয়ে আসা করোনা আক্রান্ত এক রোগীকে ঘিরে মঙ্গলবার রাতে তুলকালাম কান্ড ঘটলো পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোলের রেল শহর চিত্তরঞ্জনে।
বলতে গেলে রাতভোর চলা সেই কান্ডকে কেন্দ্র করে রেল শহর চিত্তরঞ্জনে প্রবেশ করার ৩ নং গেটে রীতিমতো চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। আতঙ্ক ছড়ায় চিত্তরঞ্জনের পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী রুপনারায়নপুর এলাকায়। অভিযোগ, কলকাতার একটি চিকিৎসা চলাকালীন করোনা পজিটিভ হওয়া চিত্তরঞ্জনে রেলের কেজি হাসপাতালে ড্রেসার পদে কাজ করা ঐ মহিলা স্বাস্থ্য কর্মী রাতের অন্ধকারে চিত্তরঞ্জন শহরে লুকিয়ে ঢোকার চেষ্টা করেছিলেন। একাধিক নাটকীয় ঘটনার পরে শেষ পর্যন্ত পুলিশের উদ্যোগে ঐ রোগীকে দূর্গাপুরে কোভিড ১৯ হাসপাতালে বুধবার ভোররাতের দিকে পাঠানো হয়।
স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতাল থেকে ঐ রোগীকে কলকাতার এক সরকারি হাসপাতালে পাঠানো হয় মঙ্গলবার সন্ধ্যায় করোনা ভাইরাসের চিকিৎসার জন্য। সেখান থেকে অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে সোজা চিত্তরঞ্জনে পালিয়ে আসেন তিনি। করোনা আক্রান্ত স্বাস্থ্য কর্মীর পালিয়ে যাওয়ার খবর কেজি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানতে পারে। তারা সঙ্গে সঙ্গে তা আরপিএফকে জানায়। চিত্তরঞ্জন শহরে ঢোকার দুটি গেটের মোতায়েন থাকা আরপিএফকে সতর্ক থাকতে বলা হয় । নিজের পালিয়ে আসার বিষয়টি ফোনে
রুপনারায়নপুরের হিন্দুস্তান কেবলসের নিউ কলোনির বাসিন্দা ভাইকে জানান ঐ মহিলা স্বাস্থ্য কর্মী। মহিলা নিজে একজন স্বাস্থ্যকর্মী হয়েও, চরম দায়িত্বজ্ঞানহীনের পরিচয় দিয়ে স্বামীকে নিয়ে গোপনে এলাকায় ঢোকার চেষ্টা করায় হতবাক সবাই । জানা যায়, প্রথমে রাত বারোটা নাগাদ অ্যাম্বুলেন্সকে প্রায় দুশো মিটার দূরে ছেড়ে পায়ে হেঁটে ঐ মহিলা ৩ নং গেট দিয়ে শহরে ঢোকার চেষ্টা করেন। সেখানে বাধা পেয়ে, ফিরে হিন্দুস্তান কেবলস সংলগ্ন এলাকায় ভাইয়ের বাড়ি যান। ভাইয়ের পরিবার দরজা না খুলেই তাদেরকে ফেরত দেয় বলে, দাবি করা হয়েছে । এরপর আবার রাত আড়াইটে নাগাদ নাম ভাঁড়িয়ে ঐ মহিলা আবার চিত্তরঞ্জনে ঢোকার চেষ্টা করেন। কিন্তু তার এই গোপন অভিসন্ধির কথা চিত্তরঞ্জন রেল কতৃপক্ষের কাছে আগেই পৌঁছে যায়। সেইমতো রাতেই শহরে ঢোকার সমস্ত গেট সীল করে নিশ্ছিদ্র পাহারা বসানো হয়।
ইতিমধ্যেই খবর পেয়ে রুপনারায়নপুর পুলিশ ফাঁড়ির পুলিশ, চিত্তরঞ্জন থানার পুলিশ ও আরপিএফ সেখানে পৌঁছে যায়। আলোচনার পরে ঐ মহিলাকে শেষ পর্যন্ত বুধবার ভোরে চিত্তরঞ্জনের ৩ নং গেট থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে দূর্গাপুরে কোভিড ১৯ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানান আসানসোল দূর্গাপুর পুলিশের ডিসিপি (পশ্চিম) অনমিত্র দাস। মহিলার স্বামীকেও ঐ হাসপাতালে পাঠানো হয়, তার লালারস পরীক্ষার জন্য । করোনা আক্রান্ত ঐ মহিলা এইভাবে চলে আসায় চিত্তরঞ্জন ও রুপনারায়নপুর এলাকায় যে সংক্রমণ ঘটে নি তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। সেইজন্য বুধবার সকালেই তার সংস্পর্শে আসা ভাইয়ের পরিবারের পাঁচজনকে পিঠাইকেয়ারি গ্রামীন হাসপাতালে এনে লালারস পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়। প্রশাসন তাদেরকে কোয়ারান্টাইনে রাখার ব্যবস্থা করছে বলে জানা গেছে।
এছাড়াও কেজি হাসপাতালের ২জন চিকিৎসক, ১১ জন নার্স সহ মোট ৩১ জনকে হোম কোয়ারান্টাইনে পাঠানো হয়েছে বলে রেল সূত্র থেকে জানা যায়। এছাড়াও চিত্তরঞ্জন রেল ইঞ্জিন কারখানার জেনারেল ম্যানেজারের অফিস ২৭ ও ২৮ মে বন্ধ রেখে সম্পূর্ণ স্যানিটাইজেশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। একইভাবে ঐ মহিলা স্বাস্থ্য কর্মী চিত্তরঞ্জন হাসপাতাল কলোনির যে আবাসনে থাকতেন সেই রাস্তা ও আশপাশের আবাসনগুলি বুধবার সম্পূর্ণ স্যানিটাইজেশন করেছে রেল কর্তৃপক্ষ। চিত্তরঞ্জনের আমলাদাহি বাজার এলাকার ভাইস ওয়ার্ডেন সুদীপ্ত কুন্ডু বুধবার দুপুরে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করে জানিয়ে দেন রবিবার বাজার বন্ধ রাখতে হবে। রবিবার বেশি ভীড় হওয়ায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও বাজারের দোকানগুলি প্রতিদিন না খুলে যদি, একদিন অন্তর খোলা যায় (বিশেষ করে কাপড়ের দোকান) তার জন্য বলা হয়েছে রেলের তরফে।