
যুগশঙ্খ, ওয়েবডস্ক: অন্ধকার গলির মধ্যে, দাঁড়িয়ে ওরা। কি বৃষ্টি, কি বজ্রপাত, শরীর অসুস্থ সব কিছুকেই হেলায় হারিয়ে জীবনযুদ্ধের পথে ওরা। তার মধ্যেই কেউ স্বপ্ন দেখছে মেয়ে ভালো স্কুলে পড়িয়ে শিক্ষিকা করে তুলবে, আবার কারুর ইচ্ছে বুড় বাপ-মা গুলি দুবেলা দুমুঠো খেয়ে বাঁচুক। সমাজ ওদের ব্রাত্য করেছে। কিন্তু রাতের অন্ধকারে সবচেয়ে দামি ওরাই। আর কিছু অশ্রাব্য গালিগালাজ ওদের লক্ষ্য করে দিতে শিখেছে সমাজ। ওরা যৌনকর্মী, সাহেবি ভাষায় সেক্স ওয়ার্কার। কিন্ত সমাজ তাকে ভোগ করার জিনিস মনে করে রেখেছে। কিন্তু এবার সুপ্রিম কোর্টের রায় সমাজে স্বীকৃতি পাবার আশায় বুক বেঁধেছে যৌনকর্মীরা।
অন্য আর পাঁচটা পেশার মতো যৌনকর্মকে পেশা হিসাবে দেখতে হবে। এরসঙ্গে যুক্তদের অন্য পেশার কর্মীদের মতো সমান অধিকার দিতে হবে বলে যুগান্তকারী নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। শুধু তাই নয়, স্বেচ্ছায় এই পেশায় আসা কর্মীদের কাজে অহরহ পুলিশি হস্তক্ষেপ এবং ফৌজদারি মামলা দায়েরের প্রবণতাতেও লাগাম পরিয়েছে দেশের শীর্ষ আদালত।
বিচারপতি এল নাগেশ্বর রাও-এর নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপচির বেঞ্চ যৌনকর্মীদের অধিকার রক্ষার জন্য ৬টি নির্দেশ জারি করেছে। যেখানে বলা হয়েছে, যৌনকর্মীরা আইনের সুরক্ষা পাওয়ার সমান অধিকারী। ফৌজদারি আইন অবশ্যই বয়স ও সম্মতির ভিত্তিতে সকল ক্ষেত্রে সমানভাবে প্রযোজ্য হবে। যখন এটা স্পষ্ট যে যৌনকর্মীদের একজন প্রাপ্তবয়স্ক ও স্বেচ্ছায় এই পেশা বেছে নিয়েছে তখন পুলিশ অবশ্যই হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। পাশাপাশি অপরাধমূলক ব্যবস্থাও নিতে পারবে না।
সুপ্রিম কোর্ট আরও বলেছে, পেশা যাই হোক না কেন সংবিধানের ২১ ধারা অনুযায়ী এদেশের প্রত্যেক নাগরিকের একটি মর্যাদাপূর্ণ জীবনের অধিকার রয়েছে।
আদালতের মতে, যৌনপল্লিতে পুলিশি অভিযানের সময় যৌনকর্মীদের গ্রেফতার, দণ্ডিত করা, হেনস্থা করা উচিত নয়। কারণ যৌনকর্ম বেআইনি নয়, শুধুমাত্র যৌনপল্লি চালানো বেআইনি। শুধু তাই নয়, মা যৌনপেশায় আছেন, শুধু সেই যুক্তিতে সন্তানকে তাঁর মায়ের কাছ থেকে সরিয়ে নেওয়া যাবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে শীর্ষ আদালত। পাশাপাশি কোনও যৌনকর্মী যদি তাঁর বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধের অভিযোগ নিয়ে পুলিশের কাছে যান, তা হলে সেটিও সমান মনোযোগের সঙ্গে পুলিশকে দেখতে হবে। আর কোনও ঘটনা ঘটলে যৌনকর্মীদের পরিচয় যেন প্রকাশ্যে না আসে, সে ব্যাপারেও স্পষ্ট নির্দেশিকা দিয়েছে আদালত।