
তাজ উদ্দিন, শিলচর: শিলচরের পুরনো ক্লাবগুলির মধ্যে ‘যোগাযোগ সংঘ অন্যতম’। ১৯৫৮ সালে এলাকার বাণী সংঘ ও কিশোর সংঘ নামে দুটি ছোট ক্লাবকে একীকরণের মাধ্যমে যোগাযোগ সংঘ গঠিত হয়। সেই বৈঠকে পৌরোহিত্য করেছিলেন পূর্ণেন্দু ভট্টাচার্য।
যোগাযোগের ক্লাবঘর রয়েছে রামকৃষ্ণ মিশন রোডে। তবে ঝালুপাড়া, বিবেকানন্দ রোড, রামকৃষ্ণ মিশন রোড এবং টিকরবস্তির বিশাল এলাকা নিয়ে একসময় ছিল ক্লাবের কর্মকাণ্ড। এসব এলাকার যুবকরা দীর্ঘদিন স্থানীয় খেলোয়াড় হিসেবে যোগাযোগ সংঘের প্রতিনিধিত্ব করেছেন বিভিন্ন ছোটখাটো টুর্নামেন্টে। তবে তবে ক্লাবটি শিলচর ডি এস এ-র অ্যাফিলিয়েশন পায় অনেক দেরিতে, ১৯৮৭ সালে। এর আগে আগে টানা তিনবার শিলচর এ ডিভিশন লিগ ক্রিকেটে চ্যাম্পিয়ন হয় তারা। ফুটবলে জেতে বি ডিভিশন লিগ।
একসময় অধুনালুপ্ত গ্রেভ ইয়ার্ড গ্রাউন্ড (এই মাঠকেও পুলিশ গ্রাউন্ড বলা হত) ছিল এই অঞ্চলের খেলাধুলার কেন্দ্রবিন্দু। মাঠটি এখন আসাম রাইফেলস কমপ্লেক্সে ঢুকে গেছে। প্রথমদিকে ফুটবলই ছিল মূল খেলা। ১৯৮০-র দশক পর্যন্ত বরাক উপত্যকার সব জায়গায় ফুটবলই প্রাধান্য পেয়েছে।
যোগাযোগ সংঘের হয়ে যারা স্থানীয় এলাকা থেকে খেলা শুরু করেছিলেন তাদের মধ্যে ফুটবলার সুহাস তালুকদার, রঞ্জু ঘোষ, পদম বাহাদুর ছেত্রী, ছবিলাল গুরুং, যতীন্দ্র মোহন দাস, রতন ঘোষ, অরুণ দত্তরায়, মলয় নন্দী, তমাল দত্তরায় উল্লেখযোগ্য। তবে তাঁরা শিলচরের ক্রীড়া জগতে সুনাম কুড়িয়েছেন অন্যান্য ক্লাবের হয়ে। অ্যাফিলিয়েশন পাওয়ার আগেই বি ডিভিশনে ফুটবল ও ক্রিকেট দল নামায় যোগাযোগ সংঘ। ১৯৮৩-৮৪ মরশুমে বি ডিভিশন ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হয়ে এ ডিভিশনে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে। তবে বেশিদিন টিকে থাকতে পারেনি। এখন তো ফুটবলে তাদের দলই নেই।
ক্রিকেটে একসময় শিলচর জেলা দলে দাপট দেখিয়েছে যোগাযোগ সংঘ। ১৯৮৩ থেকে ১৯৮৪ পর্যন্ত টানা তিনবার শিলচর লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়। ক্লাবের জার্সিতে যাঁরা খেলেছেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন বিমল ধর, বিশ্বজিৎ ধর, সুজয় দত্তরায়, অমিতাভ রায়, অমল দাস, শিবাশিস দত্ত, সুবীর দত্ত রায়, অভিজিৎ রায় চৌধুরী, রাজেন্দ্র প্রসাদ সিং, দেবাশিস রায় চৌধুরী, প্রাণেশ দেব প্রমুখ। ফুটবল ও ক্রিকেটে সমান দক্ষতা ছিল সুরঞ্জন দেব ও রামকৃষ্ণ দেবের। ক্লাবের ভাল ক্রিকেটাররা সময়ে সময়ে অন্য বড় ক্লাবে চলে গেছেন। স্থানীয় প্রাক্তন তারকা ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় সমীর নাথ একসময় যোগাযোগ সংঘের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।
২০০৪ সালে রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী মিসবাহুল ইসলাম লস্কর যোগাযোগ সংঘের ভবন নির্মাণের জন্য ৩০ হাজার টাকা দেন। তিনি একসময় ডি এস এর জেনারেল কাউন্সিলে ক্লাবের প্রতিনিধিত্বও করেন। ক্লাব ভবনের পাশাপাশি রয়েছে দূর্গা মন্ডপ এবং নাটকের মঞ্চ। ও হ্যাঁ, ক্লাবের সদস্যরা এখনও নিয়মিত নাট্য চর্চা করে থাকেন। এখানকার সুজিত দেব, প্রণব ব্রহ্মচারী, শেখর দেবরায়রা সংস্কৃতি জগতে পরিচিত মুখ।
বর্তমানে ক্লাবের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে রয়েছেন বকুল নাথ। সচিবের দায়িত্ব পালন করছেন সুজয় দত্ত রায়। শুরুর দিকে ক্লাব পরিচালনায় সুভাষ তালুকদারের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। এরপর মাণিক তালুকদার ক্লাবের হাল ধরেন। এখন বলতে গেলে টিকে থাকার জন্যই খেলার জগতে রয়েছে যোগাযোগ সংঘ। একমাত্র ক্রিকেটেই অংশ নিচ্ছে তারা। ২০১৯-২০ মরশুমে এ ডিভিশন ক্রিকেটে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে যোগাযোগ সংঘ। সেই সুবাদে ২০২০-২১ মরশুমে সুপার ডিভিশনে খেলার ছাড়পত্র পেয়েছে তারা।