
যুগশঙ্খ ডিজিটাল ডেস্ক: শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের বিচ্ছেদের পথ কার্যত প্রশস্ত হয়ে গিয়েছে। যত সময় যাচ্ছে, তৃণমূলের থেকেও ঘুরিয়ে বার্তা দেওয়া হচ্ছে যে শুভেন্দু-পর্বে দ্রুত ইতি টানতে চাইছে ঘাসফুল শিবির। দলীয় সাংসদ সৌগত রায় সংবাদমাধ্যমকে সেই ইঙ্গিতই দিলেন। তাঁর কথায়, শুভেন্দুর বিষয়টি এখন ‘ক্লোজড চ্যাপ্টার’।
শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে তৃণমূলের দূরত্ব ক্রমশ বাড়ছিল। সম্পর্কের বরফ গলাতে দলের তরফে তাঁর সঙ্গে বারবার কথা বলছিলেন সৌগত রায়। মঙ্গলবার রাতে উত্তর কলকাতার শ্যামবাজারের কাছে একটি বাড়িতে ওই বৈঠকে অভিষেক, শুভেন্দু ছাড়াও ছিলেন তৃণমূলের দুই সাংসদ সৌগত এবং সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। বৈঠকের পর সৌগত দবি করেন, ‘‘সমস্ত সমস্যা মিটে গিয়েছে। শুভেন্দু জানিয়েছে, ও দল ছাড়ছে না। বিধায়ক পদও ছাড়ছে না। বাকি শুভেন্দুই পরে জানাবে।’
প্রথম থেকেই শুভেন্দুর ‘মানভঞ্জন’-এ সক্রিয় ছিলেন সৌগত। তিন দফায় শুভেন্দুর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ফোনে শুভেন্দুর বাবা তথা পূর্ব মেদিনীপুরের তৃণমূল কংগ্রেস জেলা সভাপতি শিশির অধিকারীর সঙ্গে কথা বলেছেন। তৃতীয় দফায় গত মঙ্গলবারের বৈঠকে শুভেন্দুর সঙ্গে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরকে সামনা-সামনি নিয়ে আলোচনা করেছিলেন। সেদিন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলেছিলেন শুভেন্দু। বৈঠকের পর দৃঢ়ভাবে সৌগত জানিয়েছিলেন, সব সমস্যা মিটে গিয়েছে। তৃণমূলেই থাকছেন শুভেন্দু।
তবে সূত্রের খবর, মঙ্গলবার রাতে পাঠানো এসএমএসে প্রথমেই তৃণমূলের বর্ষীয়ান সাংসদ সৌগত রায়ের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। জানিয়ে দেন ‘আর একসঙ্গে কাজ করা সম্ভব নয়।’ শুভেন্দুর বক্তব্য ছিল, তাঁর উপর ‘একতরফা ভাবে সব চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে’। ঠিক হয়েছিল, তিনি ৬ তারিখ সাংবাদিক বৈঠক করে নিজের রাজনৈতিক অবস্থান স্পষ্ট করবেন। তার আগেই সৌগত প্রকাশ্যে সব বলে দিয়েছেন বলে শুভেন্দু উষ্মাও প্রকাশ করেন। এদিকে এই মেসেজ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে জানান তৃণমূল সাংসদ।
আরও পড়ুন: আইন প্রত্যাহারের দাবিতে অনড় কৃষকরা, শনিবার ফের বৈঠক
সৌগতর দাবি, ‘যথেষ্ট সৌহার্দ্যপূর্ণ’ পরিবেশে আলোচনা হয়েছিল। সে কথাই তিনি ‘সত্যনিষ্ঠ ভাবে’ সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন। তার পর শুভেন্দু যদি তাঁর অবস্থান বদল করে থাকেন, তা হলে সেটা তাঁর বিষয়। বৃহস্পতিবার সৌগত রায় সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, তাঁর তরফে আর শুভেন্দু অধিকারীকে কিছু বলার নেই। উনি নিজে যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার নেবেন। এ থেকে স্পষ্ট, আর আলোচনার কথা ভাবছে না তৃণমূল। তৃণমূলের নেতাদের একাংশ অবশ্য এর পরেও ‘নাটকীয় পট পরিবর্তন’-এর আশা ছাড়ছেন না। কিন্তু মমতার ঘনিষ্ঠমহল সূত্রের কথা অনুযায়ী, শুভেন্দুকে ছাড়াই বিধানসভা ভোটের প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দিয়ে দিয়েছেন দলনেত্রী। বুধবার রাতে তিনি দলের এক প্রথমসারির সাংসদকে সে কথা জানিয়েও দিয়েছেন।
শুভেন্দুকে উদ্দেশ করে সৌগত রায়ের চরম কটাক্ষের পর তেমনই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।শুভেন্দুকে উদ্দেশ করে সৌগত রায়ের চরম কটাক্ষের পর তেমনই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। বৃহস্পতিবার বরানগরে শুভেন্দুকে কার্যত ‘ইঁদুর’-এর সঙ্গে তুলনা করে তৃণমূল সাংসদ বলেন, ‘পার্টি যখন কঠিন সময়ের মধ্যে থাকে, তখন কিছু ইঁদুর আছে, যারা জাহাজ ডুবল ভেবে ঝাঁপ দেয় বিজেপি সমুদ্রে। মরে যাবে। আমি বলছি, দায়িত্ব নিয়ে। আমি সৌগত রায়। তিনবার আপনারা আমায় জিতিয়েছেন।’