করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হল শিলিগুড়ি রেগুলেটেড মার্কেট

সঞ্জিত সেনগুপ্ত, শিলিগুড়ি: করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় শিলিগুড়ি সহ দার্জিলিং জেলায় কনটেইনমেন্ট জোনের সংখ্যাও বাড়ছে। শনিবার দার্জিলিংয়ের জেলাশাসক এস পুন্নাম বালম এক লিখিত বিবৃতিতে জানিয়েছেন, গোটা জেলায় এখন মোট ২০ টি কনটেইনমেন্ট জোন রয়েছে। এরমধ্যে শিলিগুড়ি পুরসভা এলাকাতেই রয়েছে দশটি।
আর শিলিগুড়ি শহরে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ার ক্ষেত্রে রেগুলেটেড মার্কেটকে সংক্রমণের সম্ভাব্য বড় কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সেইমতো সোমবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য এই বাজার বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে জেলা প্রশাসন।
সম্প্রতি শহরের যে কজন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন তাদের একটি বড় অংশ এই রেগুলেটেড মার্কেটের সংস্পর্শে ছিলেন বা এসেছিলেন। এখানকার এক মাছ ব্যবসায়ীও সম্প্রতি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তারপর প্রথমেই শুক্রবার থেকে এই রেগুলেটেড মার্কেটের মাছ বাজার সাতদিনের জন্য বন্ধ করেছিল জেলা প্রশাসন।
কিন্তু শহরে করোনা সংক্রমণের গতিপ্রকৃতি বিবেচনা করে গোটা বাজারটি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসন। করোনা সংক্রমণের শুরু থেকেই শিলিগুড়ি রেগুলেটেড মার্কেট নিয়ে বিভিন্ন মহল আশঙ্কা প্রকাশ করেছিল। কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল এই বাজারের সামগ্রিক পরিস্থিতি দেখে প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করার পরামর্শ দিয়েছিল। তার পরেও এই বাজারে করোনা প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলার ব্যাপারে পুরসভা বা জেলা প্রশাসন কোনও উদ্যোগ নেয়নি বলে অভিযোগ।
ওয়াকিবহাল মহল বিস্ময় প্রকাশ করে জানিয়েছে, করোনা সংক্রমণ দেখা দেওয়ার পরও এই বাজারে ভিন রাজ্য থেকে আসা শয়ে শযে পণ্যবাহী ট্রাক স্যানিটাইজ না করে বাজারে ঢোকানো হয়েছে। শুধু তাই নয় করোনার হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত বিভিন্ন রাজ্য থেকে ট্রাক এসেছে। সেই ট্রাকের সঙ্গে আসা পরিবহন কর্মীরা এখানে এসে দিনের পর দিন অবাধে চলাফেরা করেছেন। এব্যাপারে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেও অবস্থার কোনও পরিবর্তন হঘটানো যায়নি।
অবশেষে শহরে করোনা সংক্রমণ ব্যাপক আকার নিতেই এই বাজারের ঝুঁকির দিকটি প্রশাসনের নজরে আসে। এক মাছ ব্যবসায়ী আক্রান্ত হওয়ার পাশাপাশি আরও এমন অনেকে আক্রান্ত হয়েছেন যারা এই বাজারে যাতায়াত করতেন। এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে প্রশাসন অবশেষে শিলিগুড়ি রেগুলেটেড মার্কেট বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়। ওয়াকিবহাল মহলের মতে অনেক দেরিতে ঘুম ভাঙলো প্রশাসনের।
এদিকে অনির্দিষ্টকালের জন্য এই হোলসেল বাজার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ফল সবজি ও মাছ ব্যবসায়ীদের যেমন বড়সড় ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, সেরকম সাধারণ মানুষ ফল ও সবজির আকাশছোঁয়া মূল্য বৃদ্ধির আশঙ্কা করছেন। নাগরিকদের ধারণা, এই বাজার বন্ধ হয়ে গেলে পণ্য সরবরাহ বন্ধ থাকবে। সে ক্ষেত্রে খোলাবাজারে স্থানীয়ভাবে যে পরিমাণে সবজি বা ফল আসবে তা চাহিদার তুলনায় অনেকটাই কম হবে। অপ্রতুল এই ফল ও সবজি যদি পার্শ্ববর্তী জেলা ও পাহাড়ে চলে যায় তাহলে এই নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর আকাল দেখা দিতে পারে। সে ক্ষেত্রে প্রতিটি জিনিসের দাম আকাশছোঁয়া হতে পারে। যদিও এ ব্যাপারে প্রশাসনের তরফে আশ্বস্ত করা হয়েছে।