
অরিজিৎ মৈত্র: বাঙালির দুর্গাপুজোর ইতিহাসে বিভিন্ন রাজবাড়ির দুর্গাপুজো উল্লেখযোগ্য আজও। সামাজিক, রাজনৈতিক পরিবর্তনের প্রতিবিম্ব বারবার দেখা গেছে দুর্গাপ্রতিমায়। বলা হত, মায়ের একচালা মূর্তি একান্নবর্তী পরিবারের চিহ্ন। ধীরে ধীরে সমাজ যখন একান্নবর্তী থেকে নিউক্লিয়ার হয়েছে, তখনও তার ছাপ প্রতিফলিত হয়েছে মাতৃমূর্তিতে। তবু এখনও যে কটি একান্নবর্তী রাজপরিবার রয়েছে তাতে মায়ের অধিষ্ঠান একচালাতেই হয়। তবে এ বছর করোনা নাক গলিয়েছে সেখানেও।
বর্তমান করোনা পরিস্থিতি বদলে দিয়েছে অনেক কিছুই।
এই বদল ঘটেছে সারা বিশ্বজুড়ে। এর ঢেউ এসে লেগেছে বঙ্গের সেরা উৎসব দুর্গাপুজোতেও। সর্বজনীন পুজোর পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে বনেদি বাড়ির সাবেকি পুজোতেও। উত্তর কলকাতার পরিচিত ও জনপ্রিয় বনেদি বাড়ি শোভাবাজার রাজবাড়ির পুজোতেও এই বছর দেখা যাবে বেশ কিছু পরিবর্তন। সরকারি বার্তার প্রয়োগ অক্ষরে অক্ষরে পালিত হবে মূর্তির মাধ্যমে।
স্যোশাল ডিস্টেন্সিংয়ের কথা মাথায় রেখে একই চালচিত্রের সামনে দেবী দুর্গাকেও মেনে চলতে হবে এই নিয়ম। এবার চারদিনের জন্য পিতৃগৃহে এসে দূরত্ব বাড়িয়ে দিতে হবে তাঁর সন্তানদের সঙ্গে। মানে প্রতিটি মূর্তির মাঝে রাখা হবে কয়েক ফুটের দূরত্ব। পুজোর দিনগুলিতে ঢাক বাজবে ডিজিটাল সিস্টেমে, কারণ এই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিতে ঢাকিদের অন্য জেলার থেকে বাড়িতে নিয়ে এসে ঢাক বাজানোর বিষয় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে করোনা। তবে তাদেরও বঞ্চিত করা হবে না। তাদের প্রাপ্য অর্থ পাঠিয়ে দেওয়া হবে যথাসময়ে। সানাই বাজানোর ক্ষেত্রেও একই নিয়ম পালন করা হবে।

প্রতি বছর পুজোতে ২৫ রকমের বৈচিত্র্যময় মিষ্টি তৈরি করা হয় বাড়িতে। সেই মিষ্টি তৈরি করতে ময়রা আসেন বাইরে থেকে। এবার সেখানেও ব্যতিক্রম। বন্ধ রাখা হচ্ছে সেই প্রথাও। মিডিয়ার জন্য থাকছে নো এন্ট্রি। সাংবাদিকদের যাতে পুজো সংক্রান্ত খবর পরিবেশন করতে সুবিধে হয়, সেই জন্য প্রতি মুহূর্তের আপডেট এবং ছবি পোস্ট করা হবে স্যোশাল মিডিয়ায়। বির্সজনের দিনও ঘটবে কিছু বদল। চালচিত্র এক থাকলেও যেহেতু প্রতিটি মূর্তি আলাদা থাকবে, তাই কুলিদের পক্ষেও সুবিধে হবে গঙ্গাবক্ষে মূর্তি বিসর্জন দিতে। এবার স্থানীয় কুলিদের সাহায্যে মাতৃমূর্তি নৌকোতে করে মাঝ গঙ্গায় নিয়ে যাওয়ার বদলে ঘাট থেকেই ভাসিয়ে দেওয়া হবে।
আরও পড়ুন:জীবনের ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ড ছেড়ে বিদায় নিলেন দ্রোণাচার্য পুরস্কারজয়ী কোচ পুরুষোত্তম রাই
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শোভাবাজার রাজপরিবারের এক সদস্য জানালেন, করোনা আতঙ্কের মধ্যে সাবধানতা অবলম্বনের জন্যেই এহেন পরিবর্তন। আশা করা যায় আগামী বছর এই পরিস্থিতির থেকে কিছুটা স্বস্তি মিলবে। তখন আবার অতীতের ঐতিহ্য অনুযায়ী ফি বছরের প্রথা মাফিক পুজো হবে।