অতিমারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আরও সহানুভূতিশীল হতে হবে মানুষকে: গৌতম

কৃষ্ণা দাস, শিলিগুড়ি : করোনা অতিমারীর সময়ে সমস্ত মানুষকেই মানবিক হয়ে এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করার আহ্বান জানালেন পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব। এই করোনা ভাইরাসের সংক্রমন নিয়ে সম্প্রতি শিলিগুড়িতে একটা আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। আর তাতেই রোগকে ভয় পেয়ে রোগীদের তাচ্ছিল করার একটা প্রবনতা লক্ষ্য করা যায়। আর তাতেই মর্মাহত হয়ে মন্ত্রী সাধারণ মানুষকে আরও বেশি সহানুভুতিশীল হয়ে এই রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে মানুষকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
করোনা রোগের মোকাবিলায় শিলিগুড়ি ইনডোর স্টেডিয়ামকে নির্বাচিত করে ৩৩টি ওয়ার্ডের একটি সেফহোম করার একটি প্রস্তাব গ্রহন করে জেলা প্রশাসন তথা শিলিগুড়ি পুরসভার করোনা বিষয়ক টাস্ক ফোর্স। সেইমত গত বৃহস্পতিবার মহকুমা শাসক সহ প্রশসনীক আধিকারিকরা স্টেডিয়ামের পরিকাঠামো খতিয়ে দেখতে যান। কিন্তু এলাকার মানুষ তা জানতে পেরে তাদের ঘিরে বিক্ষোভ দেখায়। সেখানে সেফ হোম করার প্রতিবাদ জানায়। সেই সঙ্গে সম্প্রতি এক নার্সিং স্টাফের করোনা নেগেটিভ হওয়া স্বত্তেও পাড়া প্রতিবেশিরা তাকে তাচ্ছিল্ল করে একঘরে করে রাখে বলে মন্ত্রী উষ্মা প্রকাশ করেন।
ক্ষুব্ধ মন্ত্রী জনসাধারণের কাছে আবেদন জানিয়ে বলেন, এই অতি মাহামারিতে মানুষকে আরও বেশি সংবেদনশীল হতে হবে। তিনি জানান, গত টাস্ক ফোর্সের মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছিল শিলিগুড়ির ইনডোর স্টেডিয়ামটিকে সেফ হোম করার বিষয়ে।
সেখানে প্রশসনলক মন্ডলির সদস্য শংকর ঘোষেরও সন্মতি ছিল। কিন্তু তার অভিযোগ, স্থানীয় ২৯নম্বার ওয়ার্ডের সাধারণ মানুষের পাশাপাশি ওয়ার্ড কো-অর্ডিনেটারও পর্যন্ত প্রতিবাদ জানায়। যদিও সেই সময় সব ঠিক হয়ে গেছে বলে বিবৃতি দিয়েছিলেন মহকুমা শাসক৷ কিন্তু সব কিছু যে ঠিক হয় নি তা পর্যটন মন্ত্রী গৌতম দেবের বক্তব্যে এদিন স্পষ্ট হয়ে যায়। এদিন তিনি এক ভিডিও বার্তায় সাম্প্রতিকালে শিলিগুড়ির মানুষের আচরণে দুঃখ প্রকাশ করে বলেন ইনডোর স্টেডিয়ামে সেফ হেম করতে দিতে বাধা দিলে তিনি নিজে রাস্তায় থেকে ব্যবস্থা নেবেন। তিনি আরও জানান, আজ তার শিলিগুড়ি পুরসভার প্রশাসক অশোক ভট্টাচার্য ও জেলাশাসক এস পুন্নমবলমের সাথে এ বিষয়ে কথা হয়েছে। তারা উভয়েই ইনডোর স্টেডিয়ামে সেফ হোম করার বিষয়ে দুদিন সময় চেয়েছেন। আগামী মঙ্গলবার পুরসভায় মহকুমা শাসকের সাথে কমিশনার সহ ওয়ার্ডের কো-অর্ডিনেটর সহ প্রশাসক মন্ডলীর সদস্যদের একটি বৈঠকের পর পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে তিনি ভিডিও বার্তায় জানান। তবে শিলিগুড়িতে সম্প্রতিকালের কয়েকটা ঘটনায় তিনি মর্মাহত। এই ধরণের ঘটনা গুলি নিয়ে ক্ষুব্ধ মন্ত্রী কো-অর্ডিনেটরের নেতৃত্ব নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। সেই সঙ্গে তিনি যেভাবে শিলিগুড়িতে করোনা সংক্রমন বৃদ্ধি পাচ্ছে তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন গতকাল শিলিগুড়িতে ১০১ জন আক্রান্ত হয়েছে।
শিলিগুড়ি উত্তর পুর্ব ভারতের গেটওয়ে প্রচুর মানুষ আসেন এখানে। সেই সঙ্গে শিলিগুড়ি ঘন জনবসতি পুর্ণ এলাকা সে কারনে এখানে সংক্রমণের প্রবণতা বেশি। এখানে সেফ হোমের প্রয়োজনীয়তা যে কতখানি তা তিনি বুঝিয়ে বলেন। এভাবে বারবার স্থানীয়রা বাধা দেওয়ার ঘটনাকে তিনি দুর্ভাগ্য জনক বলে মন্তব্য করেন পাশাপাশি তিনি বলেন, এই সময়টা রাজনীতি করার সময় নয়। এই অতিমারির সময় সকলকে একসাথে লড়াই করতে হবে।
আর জনপ্রতিনিধিরা সামনে থেকে নেতৃত্ব দেয়, তারাই যদি পেছন দিকে চলে যাওয়ার কথা বলে তাতে এই সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসা কঠিন হবে। তার মতে পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে এগিয়ে যাওয়াই নেতৃত্ব পরিস্থিতিকে ভয় পেয়ে পিছিয়ে যাওয়া নেতৃত্ব নয়। সেই সঙ্গে তিনি এক প্রকার হুশিয়ারী দিয়ে বলেন এখানে সেফ হোম করতে দিতে হবে। না হলে প্রশাসনের তরফে যা ব্যবস্থা নেওয়ার তিনি নিজে রাস্তায় থেকে সেই ব্যবস্থা নেবেন। সেই সঙ্গে সাধারণ মানুষকেও করোনার বিরুদ্ধে সঙ্ঘবদ্ধ লড়াইয়ের আহ্বান জানান মন্ত্রী গৌতম দেব।