কৃষক পরিবারের ছেলের অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি, ম্যাসেজ থেরাপিস্ট হিসেবে নিযুক্ত হলেন টিম ইন্ডিয়ায়

বাবলু বন্দ্যোপাধ্যায়, কোলাঘাট: রূপনারায়ন তীরের জামিট্যা গ্রাম। কোলাঘাটের অনতিদূরেই এই গ্রাম। সেই গ্রামের কৃষক পরিবারের ছেলে দয়ানন্দ গরানি। ভারতীয় টিমের সঙ্গে আজ অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ম্যাসাজ থেরাপিস্ট কাম থ্রো ডাউন পেসালিসট হিসাবে নিযুক্ত। গ্রামে গরানি পরিবারে উষ্ণ অভিনন্দনের বার্তা, আর এই বার্তা যখন পরের পর আসছে তখন বাড়িতে রত্নাগর্ভ মা রত্না দেবীর চোখে জল। ছেলে আজ ভারতীয় টিমের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে পা রেখেছে।
রত্না দেবীর পাশেই বসেছিলেন বাবা লক্ষীকান্ত গোরানি তিনি বললেন ছেলেও আমার সঙ্গে মাঠে যেত, তবে মায়ের কাছেই সব আব্দার করত। যখন যা পরতো মা আর্থিক সাহায্য দিত ছেলেকে। কিন্তু আর্থিক অনটন তাদের পিছু ছাড়েনি।এখন ও মাটির বাড়ি, টিনের চাল, প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে ভারতীয় ক্রিকেটের মূলস্রোতে এক কথায় বলতে হয় তার অদম্য ইচ্ছাশক্তিতেই তার এই সাফল্য। ছোট থেকেই ক্রিকেট ভালো বাসতো। ডানহাতি মিডিয়াম প্রেসারে বল করতো। ২০০৭ সালে কোলাঘাট থেকে কলকাতা যুবভারতী স্টেডিয়াম ফ্রেন্ডস অফ দা স্টেডিয়ামের ক্যাম্পে প্র্যাকটিস করতে যেত।
অনটন এমনই ছিল যাতায়াতের অর্থ ছিল না। ক্রিকেট কে ভালোবাসার টানে কৌশিক ভৌমিক এর কাছে মাত্র কুড়ি টাকার খরচে প্রশিক্ষণ নিত। অনেক চড়াই-উতরাই পার হয়ে কলকাতা পুলিশ দলে খেলার সুযোগ। তারপর আর ঘুরে তাকাতে হয়নি। রাজস্থানের রঞ্জি দলের ট্রেনার তার উৎসাহে ম্যাসিওর ও থ্রো ডাউন স্পেশালিস্ট হিসাবে কাজ শুরু ।
২০১৬ সালে অন্ধ প্রদেশ ক্রিকেট দলে নিযুক্ত। সেখানেই ডান ও বাম হাতে বোলিং শুরু। ডানহাতে ১৬০ ও বাম হাতে ১৩০ কিলোমিটার গতিবেগে বল করার অদ্ভুত ক্ষমতা। ডানহাতি ও বামহাতি দু’রকম ব্যাটসম্যানদের বিরুদ্ধে প্রস্তুতি নিতে সুবিধা করে তার এই বল। ব্যাঙ্গালুরুতে জাতীয় ক্রিকেট একাডেমিতে ও প্রশিক্ষিত। চলতি আইপিএলের আগে প্রিটি জিন্টার কিং ইলেভেন পাঞ্জাব দলে নিযুক্ত হন। ভালো পারফর্মেন্স দেখানোর জন্যেই আজ ভারতীয় দলে সুযোগ।
এখন দেখার বিষয় অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে কোলাঘাটের দয়ানন্দ তার এই বেড়ে উঠার যে নিরালস প্রচেষ্টার সার্থক রুপ কতখানি এনে দিতে পারে। তা নিয়ে এখন কোলাঘাট সহ সারা পশ্চিমবঙ্গের ক্রিকেটপ্রেমী মানুষ অধীর আগ্রহে তাকিয়ে।