
যুগশঙ্খ ডিজিটাল ডেস্ক: বাংলা দখলের জন্য যখন গেরুয়া পড়ার তোড়জোর করছে, দিল্লিতে এক সপ্তাহের বৈঠক ডেকেছে। দিল্লিতে বিজেপির যে বৈঠক চলছে তার মূল লক্ষ্য ছিল বাংলায় বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজ্য বিজেপিকে একদম শক্তপোক্ত করে মাঠে নামিয়ে দেওয়া। তার জন্য কলকাতা থেকে দিল্লি উড়ে গেছে কৈলাশ, দিলীপরা। বেশকিছু দিন অন্তরালে থাকার পর সবাইকে চমকে দিয়ে বিজেপির বৈঠকে যোগ দেওয়ার জন্য বান্ধবী বৈশাখীকে নিয়ে দিল্লিতে যান শোভন চট্যোপাধ্যায়। কিন্তু, নর্থ অ্যাভিনিউতে দিলীপ ঘোষের ফ্ল্যাটে আয়োজিত বৈঠকে দেখা মেলেনি তাঁদের। শোভন নেই কেন? জানতে চাইতেই বাঁকা জবাব দিলেন বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। বললেন, ‘জানি না কোন বৈঠকের জন্য তাঁকে কে ডেকেছেন। তবে, এই বৈঠকের জন্য তিনি যোগ্য নন। বৈঠকে ডাকাও হয়নি।’
গতবছর আগস্টের মাঝামাঝি এই দিল্লিতেই শীর্ষ নেতৃত্বের উপস্থিততি বিজেপিতে যোগদান করার পর থেকে সক্রিয় রাজনীতি থেকে কার্যত স্বেচ্ছাবসর নিয়েছিলেন শোভনবাবু, সেই সময় মাঝে একদিন কলকাতায় বিজেপি দফতরে বিশেষ বান্ধবীকে নিয়ে সম্বর্ধনায় যোগ দেওয়া ছাড়া এই এক বছরে তাঁকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।হঠাত্ দিল্লির বৈঠকে তাঁকে দেখে সম্ভবত কিছুটা অবাকই হয়েছেন দিলীপ ঘোষ। শোভনের দিল্লি আসা প্রসঙ্গে রাজ্য বিজেপি সভাপতি বলেন, তাঁর কাছে নাকি শোভন চট্টোপাধ্যায়ের উপস্থিত থাকার কোনও খবরই ছিল না।দিলীপ ঘোষ বলরন, ” আমি যতদূর জানি, শোভন চট্টোপাধ্যায়ের দিল্লির এই বৈঠকে থাকার কথা নয়। কিন্তু কে তাঁকে ডেকেছে জানি না! আমার সঙ্গে ওনার কোনও কথাই হয়নি।”
২০১৯-এর ১৪ আগস্ট দিল্লিতে বিজেপি সদর দফতরে-বৈশাখী। বিজেপির আর কোনও কর্মসূচিতে শোভন চট্টোপাধ্যায়কে দেখা যায়নি। কখনও কলকাতায় অমিত শাহ সভা করতে এসেছেন, কখনও জগৎপ্রকাশ নড্ডা মিছিল করেছেন— প্রতি বারই ডাক পেয়েছেন শোভন। কিন্তু নানা কারণে কোনও বারই শেষ পর্যন্ত বিজেপির মঞ্চে আর শোভন পৌঁছননি। এখন গুঞ্জন শুরু হয়েছে তাঁরা আবার সক্রিয় হতে চাইছেন। এ ব্যাপারে বিজেপি-র রাজ্য ও কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে একপ্রস্থ আলোচনাও সেরে নিয়েছেন তাঁরা। সেইমতো দিল্লিতে আয়োজিত রাজ্য বিজেপি-র সাংগঠনিক বৈঠকে যোগ দেওয়ার জল্পনা শুরু হয়েছে। তাঁরা দিল্লিতে পৌঁছেছেন। কিন্তু, তাঁরা বৈঠকে আমন্ত্রিত নন। দিলীপ ঘোষের এদিনের মন্তব্যের পর আরও একবার শোভন-বৈশাখীর সক্রিয় ভূমিকা নিয়ে সংশয় থেকে গেল বলেই মনে হচ্ছে। এই ঘটনার থেকে এটা স্পস্ট ফের ব্রাত্য রয়ে গেলেন শোভন।
আরও পড়ুন: পশ্চিমবঙ্গের আইনশৃঙ্খলার অবনতি নিয়ে জেপি নাড্ডার কাছে নালিশ কৈলাস বিজয়বর্গীয়র
একা শোভন চট্টোপাধ্যায় নন, বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ও বিজেপির হয়ে সক্রিয় হচ্ছেন বলে খবর পাওয়া গিয়েছে। তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরেও শোভন-বৈশাখী প্রায় এক বছর নিষ্ক্রিয় ছিলেন। এই সময়ের মধ্যে তাঁদের নিয়ে নানা জল্পনা ছড়াতে থাকে। ভাইফোঁটায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে শোভন-বৈশাখীর পদার্পণ, নবান্নে মমতার সঙ্গে বৈশাখীর বৈঠক, মুখ্যমন্ত্রীর আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে চলচ্চিত্র উৎসবে শোভনদের হাজিরা এবং তাঁদের সঙ্গে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নিরন্তর যোগাযোগ— সব মিলিয়ে জল্পনা তৈরি হয়েছিল যে, তৃণমূলেই ফিরবেন শোভন। তবে সে জল্পনা সত্যি হয়নি। বিজেপির হয়ে যদি শোভন সক্রিয়ও হন, তা হলেও একা শোভনই, বৈশাখী নন এমন গুঞ্জনও ছিল। শুধু শোভনকে নিয়েই বিজেপি আগ্রহী, বৈশাখীকে নিয়ে নয়, এই রকম দাবি ছিল রাজনৈতিক শিবিরের একাংশের। সে সব দাবির সত্যতা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে এ বার। কারণ শোভনের সঙ্গে বৈশাখীকেও সাংগঠনিক ও নির্বাচনী বিষয়ে বিজেপি কাজে লাগাতে চাইছে বলে মুরলীধর সেন লেন সূত্রের খবর। শোভনের দিল্লিতে বৈঠকের যোগ দেওয়ার খব্রে অনেকেই মনে করে ছিল ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনের জন্য পুরোপুরি গুছিয়ে নিয়ে ময়দানে নামতে চাইছে তিনি। কিন্তু বৈঠকে অনুপস্থিতি ফের একবার শোভনের রাজনৈতিক ক্যরিয়ার অনিশ্চিয়তার প্রশ্ন থেকেই গেল। জল ঘোলা রয়ে গেল।
আরও পড়ুন: প্রয়াত স্বনামধন্য নৃত্যশিল্পী অমলাশঙ্কর
ছন্দপতন ঘটে গেল শুক্রবার সকালেই। দিল্লির বৈঠকে আর না থেকেই এদিন কলকাতায় ফিরে আসছেন মুকুল রায়।এদিনের বৈঠকে অনুপস্থিত ছিলেন মুকুল রায়ও। সে প্রসঙ্গে দিলীপ বলেছেন, ‘গতকালের প্রস্তুতি বৈঠকে মুকুল রায় ছিলেন। নিজেই বৈঠকে না থাকার কথা জানিয়েছেন। আমরা জানি, করোনা ও শারীরিক কারণে অনেকদিন ধরে তিনি চুপচাপ রয়েছেন। সম্ভবত কলকাতা ফিরে যাবেন।’