হিন্দুত্ববাদীদের কপাল থেকে কলঙ্ক দূর হল: শঙ্করাচার্য সারদা পীঠ

ইন্দ্রাণী দাশগুপ্ত, নয়াদিল্লি: ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ মামলার রায়ে অভিযুক্তরা বেকসুর খালাস পাওয়াতে হিন্দুত্ববাদীদের কপাল থেকে কলঙ্ক দূর হলো বলে মন্তব্য করলেন শঙ্করাচার্য সারদা পীঠ । তিনি আরও বলেন, পৃথিবীতে ভারতবর্ষে এমন একটা দেশ যেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষদের ২৮ বছর ধরে লড়াই করে প্রমাণ করতে হয় যে তারা অপরাধী নয়। যে মানুষগুলো অভিযুক্ত তকমা নিয়ে পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন তাদের যন্ত্রণার হিসাব এখন কে দেবে?
একই প্রশ্ন তুলে অখিল ভারত হিন্দু মহাসভা সভানেত্রী রাজশ্রী চৌধুরী বলেন, সেই সময়কার পুলিশ এবং মুলায়ম সিং সরকার ইচ্ছা করে হিন্দুত্ববাদী নেতাদের দেশের জনগণের চোখে কালিমালিপ্ত করার জন্য মামলায় জড়িয়ে দিয়েছিলেন ।আজ হিন্দু ধর্মের সেই মহান নেতা এবং নেত্রীরা সাথেসাথে সমগ্র হিন্দু ধর্মের উপর জোর করে লেপে দেওয়া কলঙ্কের কালি মুছে দিল সিবিআই এর বিশেষ আদালতের রায়। ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর হাজার হাজার করসেবক রাম মন্দির প্রতিষ্ঠার দাবিতে জমা হয় অযোধ্যায় । তারপরেই উন্মত্ত জনতা বাবরি মসজিদের কাঠামোর উপর উঠে পড়ে সেটি ভাঙতে শুরু করে ।যার ফলে মারাত্মক হিংসা ছড়িয়ে পড়ে অযোধ্যা সহ সমগ্র ভারতবর্ষে। এই সময় পুলিশের পক্ষ থেকে দু’টি মামলা করা হয়েছিল।
যাতে বলা হয়েছিল এল কে আদভানি মুরলী মনোহর যোশী উমা ভারতী মতো প্রসিদ্ধ নেতা-নেত্রীরা করসেবকদের প্ররোচনা দিয়েছিলেন যাতে তারা বাবরি মসজিদের কাঠামো ধ্বংস করতে উদ্যত হয় । অপর একটি মামলায় বলা হয়েছিল এই ঘটনা পূর্বপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র ছিল । বুধবার দীর্ঘ ২৮ বছর পর সিবিআই-এর স্পেশাল কোর্টে বিষয় রায়দান করে বলেন সমস্ত ঘটনাটাই হঠাৎ করে হয়েছিল এক্ষেত্রে কেউ প্ররোচনা দেয় নি বা কোনো পূর্ব পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র ছিল না । তাই অভিযুক্তরা সবাই বেকসুর খালাস পান।
এই প্রসঙ্গে শঙ্করাচার্য সারদাপীঠ বলেন আমরা দীর্ঘদিন ধরেই হিন্দুত্ববাদী নেতারা এই দাবি করে আসছিলাম। আমাদের হিন্দুধ্রম মূলত একটা সহনশীল ধর্ম। সেই কারণে আমাদের দেশে সংখ্যালঘুরা ১৫% হলেও ৮৫% সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষদের প্রতিক্ষেত্রে সংখ্যালঘুদের কাছে জবাবদিহি করতে হয় । পৃথিবীর কোনও দেশে এই নিয়ম নেই । যেখানে খ্রিস্টধর্ম প্রধান যেখানে মুসলিম ধর্ম প্রধান সেখানে সেই ধর্মমতগুলির নিয়ম অনুযায়ী রাষ্ট্রীয় জীবন অতিবাহিত হয় । অন্যান্য ধর্মালম্বী মানুষদের মত সেখানে গৌণ । ভারত বর্ষ শুধু ব্যতিক্রম । তাই একটা মিথ্যে মামলার রায় পেতেই এল কে আডবাণী যোশীর মতো নেতাদের ২৮ বছর লাগে । শঙ্করাচার্য আরো বলেন ওই মসজিদের ভিতরে রামলালা নিত্য পুজো হত । তাই সেটিকে ভেঙে ফেলে রামলাল আর মূর্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে আমরা কেন কোন হিন্দুই কখনই উৎসাহ দিতে পারে না। কিন্তু সেখানকার তৎকালীন কংগ্রেস সরকার এবং বেশ কিছু অহিংসবাদী রাজনৈতিক দল জোর করে আমাদের মাথায় এই অপবাদ লেপে দিয়েছিল । তারা চেয়েছিল সারাদেশের চোখে বিশেষত আমাদের সংখ্যালঘু ভারতীয়দের চোখে আমাদের ধর্ম সম্বন্ধে বিরূপ মনোভাব প্রতিপন্ন করতে।
সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবেই তারা এই কাজ করেছিল । যার ফলে সারাদেশে এক হিংসার আবহ তৈরি হয়। শুধু ভারতবর্ষে নয় সেই সময়ে পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ হিন্দুদের উপর মারাত্মক অত্যাচার করা হয়। অথচ ঘটনাটা কিন্তু এরকম ছিল না । রামলালা জন্য জড়ো হওয়া লক্ষ লক্ষ করসেবক ধর্মীয় ভাবাবেগে এই ধরনের একটা ঘটনা ঘটিয়ে ফেলে ছিল। কিন্তু কিছু হিন্দু বিরোধী রাজনীতিবিদরা করসেবকদের এই ধর্মীয় আবেগকে ঘৃণ্য রাজনীতি রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করে এবং হিন্দুত্ববাদী নেতাদের কালিমালিপ্ত করে। এখন প্রশ্ন হলো এই মিথ্যে অপবাদ মাথায় নিয়ে যে সমস্ত হিন্দুত্ববাদী মহান নেতারা পরলোকগমন করেছেন তাদের উত্তরসূরিদের কাছে এই ষড়যন্ত্রের মূল হোতারা কিভাবে জবাবদিহি করেন সেটাই দেখার।
এই প্রসঙ্গে অখিল ভারত হিন্দু মহাসভার সভানেত্রী রাজশ্রী চৌধুরী বলেন আজ কোর্টের রায়ে প্রমাণ হয়ে গেল হিন্দুত্ববাদী নেতারা কোন ধ্বংসাত্মক কাজ কে প্রশ্রয় দেয় না । সঙ্গে আরো একটা বিষয় পরিষ্কার যে সেই সময় আইবি রিপোর্ট যেকোনো মুহূর্তে গন্ডগোলের সম্ভাবনা থাকা সত্বেও তৎকালীন মুলায়াম সরকার সেটিকে গুরুত্ব দেয়নি। বরং তার বদলে হিন্দুত্ববাদী নেতাদের কালিমালিপ্ত করে সারাদেশে যে হিংসার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল তার জন্য ভিলেন খাড়া করার চেষ্টা করেছিল। রাজশ্রী দাবি করেন, হিন্দুত্ববাদকে কালিমালিপ্ত করার জন্য কংগ্রেসের এটা পূর্ব পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র ছিল এবং এই কারণেই কংগ্রেসের এই প্রবীণ হিন্দুত্ববাদী নেতাদের কাছে অবিলম্বে ক্ষমা চাওয়া উচিত।