কাগজের কাপে চা কফি নয়!! হতে পারে ক্যান্সার, আইআইটি খড়গপুর এর গবেষণায় উঠে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য

তারক হরি, পশ্চিম মেদিনীপুর: করোনা আবহে তো কাপ প্লেটের চল উঠেই গিয়েছে। ভরসা বলতে কাগজের কাপ। প্লাস্টিকের দূষণ থেকে মুক্তি থেকে কাগজের কাপ আগেই শুরু হয়েছিল। এতদিন যা নিরাপদ ভাবা হচ্ছিল তা আদতে মারাত্মক বিষ! চা কিংবা কফি শপে বারবার ব্যবহার করা কাপ কিংবা গ্লাস এড়ানোর জন্য আমরা জনপ্রিয় করে তুলেছি একবারের জন্য ব্যবহার করা কাগজের এই কাপকে। অথচ এই কাগজের কাপই আমাদের শরীরে ঢুকিয়ে দিচ্ছে ক্যাডমিয়াম,ক্রোমিয়াম, পালাডিয়াম ইত্যাদি মারাত্মক রাসায়নিক যৌগ। হ্যাঁ এরকমটাই বলছে খড়্গপুর আইআইটির গবেষকরা।
আইআইটির সিভিল ইঞ্জিনিযারিং এর অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর সুধা গোয়েল এবং এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং এণ্ড ম্যানেজমেন্টের রিসার্চ স্কলার বেদ প্রকাশ রঞ্জন এবং ছাত্রী অনুজা জোসেফ এ বিষয়ে গবেষণা করেন। সেই গবেষণায় কাগজের চায়ের কাপকেই প্রশ্নচিহ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে। অধ্যাপক সুধা গোয়েল জানিয়েছেন “আমাদের গবেষণা অনুযায়ী, ২৫,০০০ মাইক্রন-আকারের (10 µm থেকে 1000 µm) কাগজের কাপগুলিতে ১০০ মিলি গরম তরল দিলেই মাইক্রোপ্লাস্টিক কণাগুলি ১৫ মিনিটের মধ্যেই বেরিয়ে আসে। এইভাবে, একজন কাগজের কাপে প্রতিদিন নিয়ম করে তিন কাপ চা বা কফি পান করলে ৭৫,০০০ ক্ষুদ্র মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা খাওয়া হবে। যা মানুষের খোলা চোখে ধরা পড়ে না।”এটা হলে কী ক্ষতি? গবেষকদের মতে, এর থেকে ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা থাকে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। কমে যায় প্রজনন ক্ষমতাও। শুধু মানুষের দেহে ক্ষতি করে তা নয়, উদ্ভিদকূলেও ক্ষতি করে এই মাইক্রোপ্লাস্টিক উপাদান। মাটিকে শুষ্ক করে তোলে। ফলে গাছের বৃদ্ধি কমে যায়।”
গবেষকরা দুটি পৃথক পদ্ধতিতে এই গবেষণা করেন। তারপরই এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন। এই ঘটনা দেখার পর গবেষকদের বক্তব্য, যে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগেই তার সব কিছু বিশ্লেষণ প্রয়োজন। কারণ, প্লাস্টিকের দূষণ থেকে বাঁচতে কাগজের কাপের ব্যবহারে জোর দেওয়া হয়েছিল। এখন দেখা যাচ্ছে, কাগজের কাপও বিপজ্জনক। তাই শুধু পরিবেশবান্ধব দেখলেই হবে না, তা মানুষের শরীরের পক্ষে তটা উপযোগী, সেটাও দেখতে হবে।
এই গবেষণার কথা শুনে আইটিআই খড়গপুরের নির্দেশক (Director) অধ্যাপক ডিরেক্টর বীরেন্দ্র কুমার তেওয়ারি বলেছেন “এই গবেষণা থেকে দেখা যাচ্ছে যে, গুরুত্ব দিয়ে সব দিক দেখার পরেই কোনও পরিবর্তন করা উচিত। এবার এমন এক পরিবেশবান্ধব উপকরণের খোঁজ করতে হবে যা মানুষের জীবনে ক্ষতি করবে না। ভারতের অনেক জায়গাতেই ইতিমধ্যেই কাগজের কাপ ব্যবহারে কড়াকড়ি করা হয়েছে, কিন্তু এর দ্রুত বিকল্প পাওয়াটাও সমস্যার হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা খুবই দ্রুত প্ল্যাস্টিক কাপের বদলে কাগজের কাপ ব্যবহার করতে শুরু করেছিলাম কারন তখন আমাদের কাছে প্রকৃতিবান্ধব একটা বিকল্প জরুরি হয়ে পড়েছিল।
তাঁর মতে, “যে আত্মনির্ভর ভারতের কথা বলা হচ্ছে সেখানে দাঁড়িয়ে নিজেদের জীবন শৈলী গ্রহনের ক্ষেত্রে আমাদের প্রত্যেকেরই ভাবা উচিৎ আমাদের দেশের অর্থনীতি এবং সেই নিরিখে আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় আর কী কী যুক্ত করতে পারি।” ভারতের কিছু ঐতিহ্যবাহী সুস্থ এবং স্থিরীকৃত জীবনযাত্রা রয়েছে এখন সেই শেকড় থেকেই আমাদের জীবনযাত্রার উপাদান খোঁজা দরকার। সেক্ষেত্রে মাটির পাত্র (ভাঁড়)সহজেই প্লাস্টিক এবং কাগজের কাপের বিকল্প হতে পারে দাবী গবেষকদের মতে।