
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: হাসপাতালে রোগী প্রত্যাখ্যানের ট্র্যাডিশন যেন সমানে চলেছে। রাজ্য প্রশাসনের তরফে নির্দেশ রয়েছে, গুরুতর অসুস্থ রোগীকে রেফার না করার জন্য অথবা একান্ত সমস্যা থাকলে রোগীকে ন্যূনতম চিকিৎসা দিয়ে অন্য হাসপাতালে যোগাযোগ করিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে বলুক, আদতে সমস্ত নির্দেশ রয়েছে খাতায়-কলমে। রবিবার সন্ধ্যায় গুরুতর অসুস্থ এক শিশুকে চিকিৎসক ও বেডের অভাব দেখিয়ে পরপর ফিরিয়ে দিল ৪ টি বেসরকারি হাসপাতাল। শেষ পর্যন্ত ওই শিশুকে এসএসকেএম হাসপাতাল ভর্তি করানো সম্ভব হলেও অস্ত্রোপচারের আগেই রবিবার গভীর রাতে মৃত্যু হয় তানভীর হোসেনের (৯)।
পরিবার সূত্রে খবর, তলপেটে অসহ্য ব্যথা নিয়ে যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে প্রায় ৫-৬ ঘণ্টা ধরে শহরের একাধিক বেসরকারি হাসপাতালে বাবা-মার সঙ্গে ঘুরেছে ওই ছোট্ট শিশুটি। শরীরে দ্রুত কমে যাচ্ছিল অক্সিজেনের মাত্রা। জানা গিয়েছে, তানভীরকে প্রথমে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ভাগীরথী নেওটিয়া হাসপাতালে। সেখান থেকে জানিয়ে দেওয়া হয় চিকিৎসক নেই, বেড নেই। তারপর বেলভিউ ক্লিনিকও ফিরিয়ে দেয়। তারপর ফিরিয়ে দেয় সিএমআরআই হাসপাতাল ও পার্ক ক্লিনিকও। এরপর তাকে নিয়ে যাওয়া হয় ইনস্টিটিউট অফ চাইল্ড হেলথে। কর্তৃপক্ষের দাবি, বেড না থাকায় শিশুকে ভর্তি নেওয়া সত্যিই সম্ভব হয়নি। তবে ঘণ্টাখানেক তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা করা হয়।
এরপরই ওই নার্সিংহোমের তরফে শিশুকে শহরের যে কোনও হাসপাতালে ভর্তি পরামর্শ দেওয়া হয়। সেই অনুযায়ী এসএসকেএমে শিশুকে তাঁর পরিজনেরা নিয়ে যান। ভর্তি করে অস্ত্রোপচারের প্রস্তুতি নিলেও তার আগেই রবিবার গভীর রাতে মৃত্যু হয় তানভীরের। ছেলের মৃত্যু মানতে পারছেন না শিশুর মা সাবিনা হোসেন। আক্ষেপের সুরে তিনি বলেন, “নার্সিংহোমে সঠিক সময়ে চিকিৎসা শুরু হলে সন্তান বেঁচে যেত।” একই সুর পরিবারের অন্যান্যদের গলাতেও। এ বিষয়ে এসএসকেএম হাসপাতালের সুপার রঘুনাথ মিশ্র বলেন, “আমরা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শিশুর চিকিৎসা শুরু করেছি। তবে দুর্ভাগ্যের বিষয় তাকে বাঁচানো গেল না।”