অভিষেক গঙ্গোপাধ্যায়, কলকাতা: ভারতীয় জনতা পার্টি মৃতদেহের রাজনীতিতে বিশ্বাসী। কটাক্ষ করলেন পুরো প্রশাসক মন্ডলীর চেয়ারম্যান তথা পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। রবিবার গোঘাটের বিজেপি কর্মীর রহস্য মৃত্যু ঘিরে এমনটাই মন্তব্য করলেন রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ। তিনি বলেন, ‘বিজেপি মরা ধরার রাজনীতি করছে। যেখানে যে মারা যাচ্ছে টেনে নিয়ে বলছে সে বিজেপির কর্মী।’ একদিকে বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ মরা ধরার রাজনীতিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিশানা করছে। অন্য দিকে তৃণমূলের হয়ে ব্যাট ধরে বিজেপিকে পাল্টা কাঠগড়ায় তুলছে।
সব মিলিয়ে এই মুহুর্তে মরা ধরার রাজনীতিতে সরগরম রাজ্য রাজনীতি। এ প্রসঙ্গে ফিরহাদ আরও বলেন, ‘যে কোনও মৃত্যুই অত্যন্ত দুঃখের। কেউ মারা গেছেন, তাতে কারুর মায়ের কোল খালি হয়েছে। কোনও না কোনও বনের ভাই চলে গিয়েছে বা বাবা ছেলে হারিয়েছেন। সে সময় যে কাউকে ধরে নিয়ে বিজেপি কর্মী বানিয়ে দিচ্ছে। বিজেপির কিছু উন্মাদ নেতা একই সঙ্গে আবার বলছে মেরে দেব, জ্বালিয়ে দেব, পুড়িয়ে দেবো বলে সন্ত্রাসের কথা বলছে।বাংলার মানুষ এই কথায় বিভ্রান্ত হবে না। এটা বাংলা তো, এখানে রামকৃষ্ণ, বিবেকানন্দ, নজরুল, রবিন্দ্র নাথ পথ দেখায়।’
গোঘাটে গাছে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার হয় বিজেপি কর্মীর দেহ, অভিযোগের আঙুল শাসক দল তৃণমূলের দিকে। পুরো ঘটনায় ক্রমশ সুর চড়াচ্ছে বিজেপি নেতৃত্ব। আভিযোগের তীর শাসক দল তৃণমূলের দিকে। কিন্তু ফিরহাদ এদিন বিজেপির আভিযোগ সম্পূর্ণ খারিজ করে দিলেন। রাজ্যে একের পর এক বিজেপি কর্মীর রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় রাজ্যে গণতন্ত্র হত্যা হচ্ছে বলে দাবি করছেন তাঁরা। এমনকি গণেশ রায় মৃত্যু রহস্যের সমাধান এর জন্য সিবিআই তদন্তের দাবি জানিয়েছে রাজ্য গেরুয়া শিবির।যদিও এই যাবতীয় দাবি অস্বীকার করেছে তৃণমূল। স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের কথায়, পারিবারিক বিবাদ বা এলাকায় বিজেপির গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ফলেই এই ঘটনা ঘটতে পারে। পুরো ঘটনাটির সম্পূর্ণ তদন্ত করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন পুলিশ প্রশাসন।
গোঘাটের বিজেপি কর্মী গণেশ রায়ের (৬০) রহস্য মৃত্যুতে ফের একবার উত্তাল হয়েছে রাজ্য রাজনীতি। পাশাপাশি ফিরহাদ এদিন অবসাদে না ভোগার জন্য বিজেপি না করার নিদান দিয়ে বলেন, ‘যারা বিজেপি করে তারা অবসাদে ভোগে। সেই কারণে নিজের অন্যায় বোধ হয়। গেরুয়া ঝান্ডা হাতে থাকলেও মনে অপরধ বোধ থাকে। যে বিজেপি করলাম? মানুষকে ঘৃণা করলাম? ছোট বেলা থেকে যে শিক্ষায় বড় হলাম তার অপমান করলাম। তখন ই আসে অবসাদ। তাই অবসাদ কাটানোর জন্য বিজেপি না করাই ভালো।’
প্রসঙ্গত, রবিবার গোঘাটের রেল স্টেশন সংলগ্ন এলাকার একটি গাছে গণেশ রায় নামে বিজেপি কর্মীর ঝুলন্ত দেহ খুঁজে পায় স্থানীয়রা। সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয়রা পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ এসে গাছ থেকে তার দেহ নামিয়ে ময়না তদন্তের জন্য পাঠায়।
গণেশ রায়ের পরিবারের দাবি, তাঁকে খুন করে গাছে টাঙিয়েছে শাসকদল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা। তাঁদের কথায়, শনিবার বিকেলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে ছিলেন এই বিজেপি নেতা। তারপর তাঁর আর কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। কিন্তু অন্যান্য সময় বাড়ি থেকে কোথাও বাইরে গেলে পরিবারের লোকজনকে জানিয়ে যেতেন তিনি। এই ঘটনার ব্যতিক্রম ঘটায় চিন্তার ভাঁজ পড়েছিল পরিবারের লোকজনের কপালেও। শেষমেশ যে তাঁর এই পরিনতি হবে তা ভাবতেও পারেননি পরিবারের লোকজন।