সুজাপুর বিস্ফোরণ কাণ্ডে শুরু রাজনৈতিক চাপান-উতোর… ৭২ঘন্টা পার হলেও কোনও মামলা হয়নি অভিযোগ বিজেপির

মিল্টন পাল, মালদা: মালদার সুজাপুরে বিস্ফোরণের ঘটনায় ৭২ঘন্টা পার হলেও কোনও মামলা করা হয়নি। এমনকী পুলিশের পক্ষ থেকেও কোনও মামলা করা হয়নি বলে বিজেপির দাবি। এরই মধ্যে শনিবার ফরেন্সিক বিভাগের দুই সদস্যের একটি দল নমুনা সংগ্রহ করে। মালদার সুজাপুরে প্লাস্টিক কারখানায় ফরেনসিক দলের তদন্তের সময় মৃদু বিস্ফোরণের ঘটনায় প্লাস্টিক কারখানা চত্বর ধোঁয়ায় ভরে যায়। তাদের সঙ্গে ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দীপক সরকার , ডিএসপি শুভতোষ সরকার , কালিয়াচক থানার আইসি আশিস দাস সহ অন্যান্য পদস্থ কর্তারা।
ফরেনসিক দলের দুই বিশেষজ্ঞ মধ্যে ছিলেন ড. চিত্রাক্ষ সরকার এবং আকাশ দাস। এদিন মৃদু বিস্ফোরণ এবং ধোঁয়ায় ভরে যায় গোটা চত্বর। এমনকী ধোঁয়ায় আঁচে পিপিকিইট খুলতে বাধ্য হন একজন ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ ড. চিত্রাক্ষ সরকার। ঘটনার পর এলাকায় রয়েছে আতঙ্ক।
বৃহস্পতিবার মালদার সুজাপুর স্কুলপাড়া এলাকায় আচমকাই প্লাস্টিকের কারখানায় বিস্ফোরণে মৃত্যু হয় ছয়জনের। জখম হন পুরুষ ও মহিলা মিলিয়ে ১০ জন। তাদের এখনও চিকিৎসা চলছে মালদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে। এই ঘটনার পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির নির্দেশে মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম সুজাপুরে এসে মৃত ও আহতদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। এরপরই শুক্রবার রাতে মালদায় আসেন ফরেনসিক দলের দুই বিশেষজ্ঞ। রাতেই তারা প্লাস্টিকের কারখানার বিস্ফোরণস্থল ঘুরে দেখেন। এরপর পুনরায় শনিবার দুপুরে ফরেনসিক দলের দুইজন বিশেষজ্ঞ ওই প্লাস্টিকের কারখানার বিস্ফোরণস্থল খুঁটিনাটি তদন্ত করে দেখেন। বেশকিছু যন্ত্রাংশের নমুনা সংগ্রহ করা হয়।
এদিন দুপুরে পিপিই কিট পরে ফরেনসিক দলের দুই বিশেষজ্ঞ পুলিশ কর্তাদের সঙ্গে বিস্ফোরণের জায়গা যন্ত্রাংশ খুঁটিনাটি পরীক্ষা করে দেখছিলেন। সেই সময় হঠাৎই মৃদু বিস্ফোরণে ধোঁয়ায় ভরে যায় গোটা কারখানা চত্বর। অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছেন ফরেনসিক দলের দুই বিশেষজ্ঞ বলেও সূত্রের খবর । তবে এই ঘটনায় কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।যদিও ফরেনসিক কর্তাদের দাবি, কোন বিস্ফোরণ ঘটেনি। কেমিক্যাল দিয়ে ঘটনাস্থল পরীক্ষা করার সময় ধোঁয়ার সৃষ্টি হয়েছিল। পাশাপাশি বিস্ফোরণস্থল থেকে বিভিন্ন ধরনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।
এদিকে এদিন ফরেনসিক দলের তদন্ত চলাকালীন ওই প্লাস্টিক কারখানা পরিদর্শনে আসেন মোথাবাড়ি তৃণমূল দলের বিধায়ক সাবিনা ইয়াসমিন, এদিন তৃণমূলের দলীয় নেতৃত্ব উপস্থিত পুলিশ কর্তাদের সঙ্গে পুরো ঘটনাটি নিয়ে কথা বলেন। পাশাপাশি সুজাপুর এলাকায় মৃত এবং আহতদের পরিবারের সঙ্গেও দেখা করেন স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক ও নেতারা।
তিনি বলেন,এটা রাজনীতি করার জায়গা নয়। মানুষের পাশে দাঁড়ান। ঘরে বসে বিজেপি ভুল ভিত্তিহীন কথা বলেছেন। এটা কখনও উচিত নয়। মানুষকে সাহায্য করুন।
বিজেপির উত্তর মালদার সাংসদ খগেন মুর্মু বলেন, এত বড়ো বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটল যেখানে ছয়জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে অথচ পুলিশ এখনও কোন মামলা করেনি। এত বড়ো বিস্ফোরণ একটা মেশিন থেকে হতে পারে না। বড় ধরনের ঘটনা ঘটানোর জন্য একটা কিছু মজুত করা হয়েছিল। প্রকৃত ঘটনা কি তার সঠিক তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। এর তদন্ত এনআইএর মত সংস্থাকে দিয়ে করা দরকার আমি এর দাবি জানাচ্ছি।
প্রাথমিক তদন্তের পর রাজ্য ফরেনসিক দলের বিশেষজ্ঞ ড. চিত্রাক্ষ সরকার জানিয়েছেন , বৃহস্পতিবার ওই প্লাস্টিকের কারখানা মেশিনের যান্ত্রিক গোলযোগের কারণে এই বিস্ফোরণের ঘটনাটি ঘটেছিল। ঘটনাস্থল থেকে বিভিন্ন ধরনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। সেগুলি ফরেনসিক ল্যাবে পরীক্ষা করার পরেই প্রকৃত বিস্ফোরণের কান্ড সম্পর্কে বলা যাবে। তবে বিস্ফোরণের পর নষ্ট হয়ে যাওয়া কাটিং মেশিন সহ অন্যান্য যন্ত্রাংশ দেখে মনে হচ্ছে এগুলি সব হাতে তৈরি করা হয়েছে। তবে এখনই পরিষ্কার করে কিছু বলা যাচ্ছে না। খুব শীঘ্রই এই ঘটনার রিপোর্ট রাজ্য প্রশাসনের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।
আরও পড়ুন: করোনা আক্রান্ত ট্রাম্প পুত্র জুনিয়র ট্রাম্প
ফরেনসিক দলের বিশেষজ্ঞ ড. চিত্রাক্ষ সরকার আরও বলেন, প্লাস্টিকের কারখানার যেখানে বিস্ফোরণ হয়েছিল, সেখানে বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা কি রকম ছিল। কোন যন্ত্রাংশ ফেটে বিস্ফোরণের ঘটনাটি ঘটেছে তার সবটাই খুঁটিনাটি তদন্ত করে দেখা হয়েছে। বিস্ফোরণস্থল থেকে বেশ কিছু নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে যান্ত্রিক গোলযোগের কারণে এই ঘটনাটি ঘটে থাকতে পারে। এখনই সব কিছু বলা সম্ভব নয়।