যুগশঙ্খ ডিজিটাল ডেস্ক: লকডাউন শুরু হওয়ার পর থেকেই দেশের অর্থনীতির চাকা কার্যত স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে। অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখতেই রাজ্যজুড়ে লকডাউন শুরু হওয়ার পর অত্যাবশকীয় পরিষেবা চালু রাখতে রাজ্য সরকার কলকাতার বুকে ৮টি সরকারি বাসরুটে পরিষেবা চালু রেখেছে। সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা প্রতি ঘন্টায় এই রুটগুলিতে ১টি করে বাস চালানো হচ্ছে। কিন্তু মঙ্গলবার সকালে শহরের দুই দফায় দুটি প্রান্তে পুলিশ দুটি রুটের মোট চারটি বাসকে থামিয়ে দিয়ে সব যাত্রীকে নামিয়ে দেয়। কারণ ওই চারটি বাসেই ২০জনের বেশি যাত্রী ছিল। তাতে ক্ষোভ ছড়ায় যাত্রীদের মধ্যে। আবার ২০জন যাত্রী নিয়ে যে বেসরকারি বাস পরিষেবা দেওয়া সম্ভব নয় সেটা জানিয়ে এবং সঙ্গে আরও কিছু প্রশ্ন জুড়ে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে এবার চিঠি পাঠালো বাস মালিকদের সংগঠন।
কেন্দ্রীয় সরকার ছাড়পত্র দিয়েছে দেশের মধ্যে কন্টেইনমেন্ট এলাকা গুলি বাদ দিয়ে সর্বত্র কারখানা ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান খোলা যাবে তবে প্রতি ক্ষেত্রে কাজ করতে হবে মাত্র ২৫ শতাংশ কর্মী নিয়েই। এই রাজ্যেও সেই একই নিয়ম বলবৎ করেছে রাজ্য সরকার। তার জেরে এদিন সকাল থেকেই নানা এলাকায় নিত্যযাত্রীদের একাংশকে ফের দেখা গিয়েছে বাসের জন্য অপেক্ষা করতে। কিন্তু শহরে এখন রাজ্য সরকারের চালানো জরুরি পরিষেবা ভিত্তিক বাস ছাড়া দ্বিতীয় কোনও বাসরুট চলছে না। এদিকে আবার রাজ্য সরকার জানিয়ে দিয়েছে বাসে ২০জনের বেশি থাকা চলবে না। এতদিন এই নিয়ে সমস্যা হয়নি। কিন্তু এদিন বাস না পেয়ে এই বিশেষ পরিষেবামূলক বাসগুলিতেই অনেকে উঠেছিলেন। তার জেরে বাসে যাত্রীদের সংখ্যাও প্রায় ৬০জনের কাছাকাছি চলে যায়।
এই ভিড় বাসই এবার শহরের দুই প্রান্তে দুই দফায় চোখে পড়ে ট্রাফিক পুলিশের। তার জেরে উল্টোডাঙ্গা আর চিড়িয়ামোড়ে এদিন পুলিশ এস৯ ও এস২১ রুটের দুটি করে মোট ৪টি বাস আটকিয়ে সেখান থেকে সব যাত্রীদের নামিয়ে দেয়। এতে কিছুটা হলেও ক্ষোভ দেখা দেয় ওই যাত্রীদের মধ্যে। তাঁদের বক্তব্য, সরকার ২৫ শতাংশ কর্মী নিয়ে বেসরকারি অফিস খোলার অনুমতি দিল আর এই কর্মীরা কীভাবে যাতায়াত করবে সেটা কেন ভেবে দেখল না। তাছাড়া ওই যাত্রীদের মধ্যে এমন অনেকেই ছিলেন যারা স্বাস্থ্য পরিষেবা, পুলিশ, সংবাদমাধ্যমের মতো জরুরী কাজের সঙ্গে জড়িত। তাঁরাই বা কীভাবে কাজে যাবেন সেটাও এদিন পুলিশ বিবেচনার মধ্যে আনেনি বলেই অভিযোগ উঠেছে।
আরও পড়ুন: করোনা প্রবহে গোটা দেশে বিপদজনক সেরা ২০-র তালিকায় কলকাতা, উদ্বেগ কেন্দ্রের
এদিকে ২০জন যাত্রী নিয়ে যে বাস চালানো সম্ভব নয় সেটা রাজ্য সরকারকে জনিয়েই দিলেন অল বেঙ্গল বাস-মিনিবাস সমন্বয় সমিতি ও জয়েন্ট কাউন্সিল অফ বাস সিন্ডিকেট। দুটি সংস্থাই এবার মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিল যে, স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে দৈনিক রাস্তায় বাস নামাতে খরচ পড়ে প্রায় ৬০০০ টাকা। কিন্তু এখন ২০জন যাত্রী হওয়ারও কোনও সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। কারণ বাজারহাট থেকে শুরু করে স্কুল-কলেজ, অফিসকাছারি, আদালত, দোকান, শপিং মল, সিনেমা হল সব বন্ধ। মানুষ কেন বিনা কারণে রাস্তায় বার হবেন। কলকাতায় যাও বা যাত্রী কিছুটা পাওয়া যেতে পারে জেলায় সেটাও মিলবে না। এই অবস্থায় লোকসান টেনে বাস চালানো সম্ভব নয়। এরই সঙ্গে ওই চিঠিতে সরকারের কাছ থেকে জানতে চাওয়া হয়েছে যে, যদি মাত্র ২০ জন যাত্রী নিয়ে বাস চালানো হয়, তাহলে জ্বালানির খরচ উঠবে কীভাবে?