আন্তর্জাতিকগুরুত্বপূর্ণহেডলাইন
তুরস্ক-গ্রিসে ভয়াবহ ভূমিকম্পে বেড়ে চলেছে লাশের সংখ্যা

আংকারা ও এথেন্স, (সংবাদ সংস্থা): তুরস্ক এবং গ্রিসে শক্তিশালী ভূমিকম্পে লাশের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। ভূমিকম্পে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ৩৯ জন, আহত হয়েছেন ৮৮৫ জনের অধিক। গত শুক্রবার সন্ধায় অ্যাজিয়ান সাগরে দুই দেশের উপকূলীয় এলাকায় ভূমিকম্প আঘাত হানার পরেই এই ঘটনা ঘটে। জানা যাচ্ছে, রিখটার স্কেলে এই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৬ দশমিক ৬।
শনিবার তুরস্কের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ফাহরেতিন কোকা বলেন, ‘ইজমির ভূমিকম্পের পরে ২৪৩ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাদের মধ্যে আটজন নিবিড় পরিচর্যায় আছেন এবং তিনজনের অবস্থা গুরুতর।’ স্যোসাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, ইজমির শহরে ধসে যাওয়া ভবনের ধ্বংসস্তূপের নিচে তল্লাশি চালাচ্ছেন স্থানীয়রা। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, ভূমিকম্পের সময় তুরস্কের ইস্তাম্বুল, ইজমির ও অন্যান্য শহরের বাসিন্দারা বাড়ি-ঘর ছেড়ে রাস্তায় নেমে আসেন। একই দৃশ্য দেখা যায় গ্রিসেও।
এ প্রসঙ্গে তুরস্কের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুলেইমান সোয়লু এক টুইটে বলেছেন, ইজমিরের বায়রাকলি এবং বোর্নোভা জেলায় অন্তত ছয়টি ভবন ধসে পড়েছে। এছাড়া এই ভূমিকম্পে উসাক, দেনিজলি, মনিসা, বালিকেসির, আয়দিন এবং মুগলা প্রদেশেও হালকা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। তুরস্কের পরিবেশ মন্ত্রী মুরাত কুরুম বলেছেন, আমাদের বেশ কয়েকজন নাগরিক ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়েছেন। তিনটি ভবন ধসে পড়েছে।
শুধু তাই নয়, স্যোসাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ছবি এবং ভিডিওতে প্রকাশ, সমুদ্রের উত্তাল গর্জনে ইজমির শহরের রাস্তাঘাট জলেতে তলিয়ে গেছে। নগরীতে ভবন ধসের স্থানগুলো থেকে ঘন সাদা রঙয়ের ধোয়া উড়ছে। তুরস্কের টেলিভিশন চ্যানেল এনটিভির আকাশ থেকে ধারণ করা এক ফুটেজে দেখা যায়, পুরো শহর ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা উদ্ধারকারী দলের সদস্যদের সহায়তায় এগিয়ে আসছেন। পাশাপাশি পুলিশ সদস্যরাও ধসে পড়া ভবনের ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করছেন। ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়াদের মধ্যে কেউ জীবিত রয়েছেন কিনা তা জানতে শব্দ শোনার জন্য উদ্ধারকারীরা উৎসুক জনতাকে নীরবতা পালনের আহ্বান জানাচ্ছেন। ভূমিকম্পের পর তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোগান ক্ষতিগ্রস্তদের সম্ভাব্য সব ধরনের সহায়তার ঘোষণা দিয়েছেন।
এদিকে গ্রিসের সামোস দ্বীপের মেয়র গর্গস ডিওনিসিও বলেন, এটা ছিল ধ্বংসযজ্ঞ। আমরা কখনই এ ধরনের অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হইনি। সামাসের বাসিন্দাদের বাড়ির বাইরে অবস্থান নেয়ার আহ্বান জানিয়ে মোবাইলে ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েছে গ্রিসের বেসামরিক সুরক্ষা সংস্থা। ভূমিকম্পের পর পূর্ব সতর্কতা হিসেবে এই দ্বীপের প্রধান বিমানবন্দর বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গ্রিস এবং তুরস্ক দুটি দেশই বিশ্বের অন্যতম ভূমিকম্প সক্রিয় প্রবণ অঞ্চলে অবস্থিত। প্রায়ই এই অঞ্চলে শক্তিশালী এবং মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে। ১৯৯৯ সালে তুরস্কের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে রিখটার স্কেলে ৭ দশমিক ৪ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পে অন্তত ১৭ হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটে। ২০১১ সালেও তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ভ্যান প্রদেশে শক্তিশালী এক ভূকম্পনে ৬ শতাধিক মানুষ মারা যান। গ্রিসে সর্বশেষ প্রাণঘাতী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছিল ২০১৭ সালে। ওই বছরের জুলাইয়ে সামোসের কাছের কোস দ্বীপে শক্তিশালী ভূমিকম্পে অন্তত দু’জনের প্রাণহানি ঘটে।