কলকাতায় ২৮ বছরের যুবকের ব্রেন ডেথ, অঙ্গদানের সিদ্ধান্ত নিল পরিবার

বিপাশা চক্রবর্ত্তী, কলকাতা: ফের কলকাতা শহরে সামনে এল অঙ্গদানের নজির। গত বৃহস্পতিবার অসুস্থ হয়ে বাইপাসের ধারে রুবি জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হন কৌস্তভ রায় নামে বছর ২৮-এর এক যুবক। হাসপাতালে থেকে জানানো হয় রোগীর ব্রেন ডেথ হয়েছে। এর পরেই পরিবারের পক্ষ থেকে অঙ্গদানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
কৌস্তভের জ্যাঠতুতো ভাই জানিয়েছেন, ‘৫ নভেম্বর প্রতিদিনের মতো কাজ সেরে বাবা ও জ্যাঠার সঙ্গে বাড়িতে আসে কৌস্তভ। আমাদের গড়িয়াহাটে একটি সোনার দোকান আছে। সেখান থেকেই কাজ সেরে ফেরে ওরা। বাড়িতে এসে করোনা সতর্কতায় স্যানিটাইজ করে ঠাকুরকে পুজো দেয়। কথা বলছিল সকলের সঙ্গে। এই সময় হঠাৎই ঠোঁট বেঁকে যায়। জিভ থেকে লাল পড়তে থাকে। বাঁদিকে হাত আর পা তুলতে পারে না। আমরা কসবাতে থাকি। তড়িতড়ি আমরা বাইপাসের ধারে রুবি জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে চিকিৎসকেরা ভর্তি করে নেন। সিটি স্ক্যান করা হয় কৌস্তভের। জানানো হয় ওটি করতে হবে। তবে ওটি হলেই যে রোগী সুস্থ হয়ে উঠবে তার কোনও নিশ্চয়তা নেই। তবে চিকিৎসকেরা জানান, রোগীর বয়স কম বলে আমরা এই চান্স নিতে পারি’।
কৌস্তভের ভাই আরও জানান, ‘হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময়েও আমাদের সঙ্গে কথা বলেছিল কৌস্তভ। কিন্তু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় পথেই ও পুরো অচৈতন্য হয়ে পড়ে। পরের দিন সকালে যখন ওটির জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তখন হাত পা ঠান্ডা। হাতে অক্সিমিটার লাগানো ছিল কিন্তু সেটাতেও কোনও রেটিং আসছিল না। এরপরেই চিকিৎসকেরা বলেন, এই রোগীর কোনও ওটি করা যাবে না। রোগীর সম্পূর্ণ ব্রেন ডেথ হয়ে গেছে। আপনারা মানসিকভাবে শক্ত হন। তখন পরিবারের পক্ষ থেকে আমরা সিদ্ধান্ত নিই, অঙ্গদানের। আমার ভাই এভাবে চলে যাবে এটা আমরা ভাবতে পারিনি। ওর অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলো যদি অন্য কোনও মানুষের কাজে লাগে তাহলে ভালো হয়। তাও চিকিৎসকেরা বলেছেন ফের ৬ ঘন্টা পরে আরও একটি টেস্ট করবেন তখন ফাইনাল ব্রেন ডেথ সেটি জানাবেন। আমরা ওর সিটি স্ক্যানের রিপোর্ট নিয়ে আরও অনেক জায়গায় যোগাযোগ করেছি। সব জায়গা থেকে একই কথা বলা হয়েছে’।
রুবি হাসপাতালের চিফ জেনারেল ম্যানেজার শুভাশিস দত্ত জানিয়েছে, ‘এখন অবধি হাসপাতালে তরফ থেকে অঙ্গদানের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত কিছু নেওয়া হয়নি। খুব কম বয়সে ছেলেটির এই পরিণতি। এটা খুবই মর্মান্তিক। পরিবার অঙ্গদানে প্রস্তাব দিয়েছে। তবে অঙ্গদানের ক্ষেত্রে অনেক নিয়ম আছে। হাসপাতাল ও পরিবারের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে চূড়ান্তভাবে এখনও কিছু ঠিক হয়নি’।