বাংলাদেশে মঠ-মন্দিরের সম্পত্তি দখল করে নিচ্ছে হাসিনা সরকার, অভিযোগ গোবিন্দ প্রামাণিকের

যুগশঙ্খ প্রতিবেদন, ঢাকা: ‘বাংলাদেশের মঠ-মন্দিরের দেবোত্তর সম্পতি দখল করে নিচ্ছে স্বয়ং শেখ হাসিনা সরকার এবং অর্পিত সম্পত্তিও হিন্দুরা যাতে আর ফেরত না পায় তার জন্য সব ধরণের কৌশল করা হচ্ছে’- এমন অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশের শীর্ষ হিন্দু নেতা ও জাতীয় হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব অ্যাডভোকেট গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক। দৈনিক যুগশঙ্খকে বুধবার একান্ত সাক্ষাতকারে তিনি বলেছেন, ‘মঠ-মন্দিরের দেবোত্তর সম্পত্তি সরকার দখল করে তা ভূমিহীনদের বসবাসের জন্য বন্দোবস্ত দিতে চায় হাসিনা সরকার। এ জন্য ভূমি মন্ত্রক সর্ম্পকিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির গত ৮ নভেম্বর বৈঠকে এ বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ সুপারিশ সংবিধানের ১২, ২৮ ও ৪১ অনুচ্ছেদের সম্পূর্ণ পরিপন্থী।’
গোবিন্দ প্রামাণিক বলেন, ‘এমনিতেই ধর্মের কারণে হিন্দুরা রাষ্ট্রীয় বৈষম্যের শিকার। তারপরে দেবোত্তর সম্পত্তি নিয়ে ভূমি মন্ত্রকের সুপারিশ গৃহীত ও বাস্তবায়িত হলে তা বাংলাদেশে হিন্দুদের ধর্মীয় স্বাধীনতা একেবারে ধ্বংস হয়ে যাবে। রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলনীতি ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’বলে আর কিছু থাকবে না।’
বাংলাদেশ জুড়ে দুই শতাধিক মঠ-মন্দিরের সম্পত্তি হাসিনা সরকারের পৃৃষ্ঠপোষকতায় দখল করা হয়েছে দাবি করে গোবিন্দ বাবু বলেন, ‘ঢাকায় এখন যেখানে রাজধানী মার্কেট সেই জায়গাটা ছিল মদেনশর মহাদেব শিব মন্দিরের। এই জায়গাটা মুক্তিযোদ্ধাদের নামে দখল করা হয়েছে। ৯১/৯২ ঋষিকৃশ দাশ রোডের সিতনাথ মন্দিরের ৬ বিঘা জমি, ৩৮ টিপু সুলতান রোডের শঙ্খনিধি মন্দিরের এক বিঘা এবং লালবাগের রাধা গোবিন্দ জিও মন্দিরের তিন বিঘা জমি দখল করেছে। লালবাগে মঠের জায়গায় হয়েছে পুলিশ স্টেশন ও জলের পাম্প।’
তিনি বলেন, ‘এর আগে যখন আওয়ামি লিগ ক্ষমতায় ছিল তখন ঢাকার স্বামীবাগ আশ্রমের দয়াগঞ্জ শিব মন্দির (এখন যেখানে ইসকন মন্দির), রমনা কালীমন্দির, গেন্ডারিয়া যমুনামাই আশ্রম, বঙ্গভবনের পাশে রাম-সিতানাথ মন্দিরের জায়গা দখল করেছিল। পরে বিএনপি ক্ষমতায় এসে তা উদ্ধার করে।’
যুগশঙ্খকে গোবিন্দ প্রামাণিক বলেন, ‘ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার ১৭ দিন স্থায়ী ‘তাসখন্দ যুদ্ধ’ স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম দিয়েছে ‘অর্পিত সম্পত্তি’ নামক ‘বিষফোড়া’। প্রায় ৫৩ বছর ধরে লালিত ‘বিষফোড়া’কে প্রশাসনিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে প্রণয়ন ও জারি করতে হয়েছে অধ্যাদেশ, আইন, বিধিমালা এবং সরকারি আদেশ। ১৯ বছর আগে সংসদে গৃহীত অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন ও হাইকোর্টের রায়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও এ পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন হয়নি। নানা অজুহাতে ও ছলচাতুরিতে আজও অর্পিত সম্পত্তির প্রকৃত মালিক বা উত্তরাধিকারী বা সহ-অংশীদারদের মধ্যে প্রত্যর্পণ করেনি।’
আরও পড়ুন: গভীর রাতে আচার্য সদনের সামনে থেকে আন্দোলনকারী প্রাথমিক চাকরিপ্রার্থীদের সরিয়ে দিল পুলিশ
এর মধ্যে অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণের যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণের আগেই অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইনের আওতায় প্রাপ্ত সরকারি সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা বিধিমালা-২০২০ প্রণয়ন ও তার চূড়ান্তকরণের পদক্ষেপ নিয়েছে। এটা করা হয়েছে যাতে হিন্দুরা সম্পত্তি ফিরে না পায় তার জন্য’- বলেন গোবিন্দ প্রামাণিক। দেবোত্তর দখল ও অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যার্পণে নানা টালবাহানা করায় শেখ হাসিনা সরকারের প্রতি হিন্দুরা ক্ষুব্ধ বলে জানিয়ে হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব বলেন, ‘হিন্দুরা মঠ মন্দিরের দেবোত্তর সম্পত্তি সরকারকে দখল করতে দেবে না। এ জন্য তারা প্রয়োজনে রক্ত দেবে।’
তিনি বলেন, ‘ইতিমধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে দেবোত্তর সম্পত্তি দখল রুখে দিয়েছে হিন্দুরা। এরমধ্যে ফরিদপুর জেলার মধুখালী মহাশ্মশান ও ২০০ বছরের পুরাতন দূর্গাগনেশ গঙ্গা মন্দিরের জায়গা আশ্রায়ণ প্রকল্পের নামে দখলের বিরোধিতা করে প্রতিবাদ করা হয়েছে। রাজশাহীর পুঠিয়ায় মন্দিরের সামনে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল তৈরির ঘোষণা দেয়ার প্রতিবাদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়ায় আদালতের রায়ের পরও সম্পত্তি না পেয়ে দেশ ত্যাগের হুমকি দিয়েছে একটি পরিবার। গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি উপজেলার সার্বজনিন মন্দিরের জায়গায় ইউনিয়ন ভূমি অফিস নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণের প্রতিবাদ করেছে হিন্দুরা।’