
নিজস্ব প্রতিনিধি কলকাতা: আমফানের ক্ষতিগ্রস্থদের ক্ষতিপূরণ বন্টন নিয়ে রাজ্যের বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের কাছে বিস্তারিত রিপোর্ট তলব করল কলকাতা হাইকোর্ট। আমফানের ক্ষতিপূরণ চেয়ে দায়ের হওয়া জোড়া জনস্বার্থ মামলার অনলাইন শুনানিতে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি থোট্টাথিল ভাস্করণ নায়ার রাধাকৃষ্ণণ ও বিচারপতি মৌসুমী ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ আগামী ১০ দিনের মধ্যে রাজ্যের সংশ্লিষ্ট দফতরকে বিস্তারিত রিপোর্ট পেশের নির্দেশ দিয়েছে। মামলার পরবর্তী শুনানি আগামী ১৭ আগস্ট।
গত ১৬ মে আমফানের তান্ডবে লন্ডভন্ড হয়ে যায় সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকা। ব্যাপক ক্ষতি হয় পূর্ব মেদিনীপুরের একাধিক ব্লকেও। ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিল রাজ্য সরকার। কিন্তু অভিযোগ সরকারি সেই ক্ষতিপূরণ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন বহু মানুষ। আমফানের ক্ষতিপূরণের দাবিতে গত দুমাস ধরে বয়ে গিয়েছে অনেক ঝড়। রাজনৈতিক স্তর থেকে প্রশাসনিক স্তরে হয়েছে অনেক অভিযোগ, শাসক ও বিরোধী মধ্যে হয়েছে বাদানুবাদ। তবুও বহু মানুষ এখনও আমফানের ক্ষতিপূরণ থেকে বঞ্চিত। তাই ঝড়ে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্থদের ক্ষতিপূরণ চেয়ে গত সপ্তাহে কলকাতা হাইকোর্টে দুটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়। একটি মামলা দায়ের করেন খয়রুল আনম শেখ নামে পেশায় একজন চাষী ও সমাজ কর্মী। ওপর মামলাটি করেন ব্যারাকপুরে বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিং।
সেই দুটি মামলার অনলাইনে শুনানিতে রাজ্যের তরফে এডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত আদালতে জানান, ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণের টাকা নিয়ে কোনও অভিযোগ নেই। এই মামলার কোনো ভিত্তি নেই। তবে তিনি জানান, রাজ্যের বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর এই বিষয়টি তদারকি করেছে। তাদেরকেও মামলায় পক্ষভুক্ত করা হোক বলে আবেদন জানান তিনি। তার আবেদনের প্রেক্ষিতে ডিভিশন বেঞ্চ মামলাকারীদের রাজ্যের বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরকে এই মামলায় পক্ষভুক্ত করার নির্দেশ দেয়। এবং রাজ্যের আবেদনের প্রেক্ষিতে বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের কাছে বিস্তারিত রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছে ডিভিশন বেঞ্চ।
মামলাকারীর আইনজীবী নুর ইসলাম শেখ ও শমিক বাগচিরা জানান, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা এবং পূর্ব মেদিনীপুরের অধিকাংশ ব্লকেই বহু মানুষ এখনও আম পানের ক্ষতিপূরণের টাকা পাননি। এমন ভুরি ভুরি ক্ষতিগ্রস্থ তালিকা রয়েছে। যারা ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন তাদের আর্থিক সামর্থ্য আছে, পাকা বাড়ি আছে। তারমধ্যে রয়েছে পঞ্চায়েত প্রধান থেকে শুরু করে পঞ্চায়েতের সদস্য, একাধিক রাজনৈতিক ব্যক্তিরা। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে বঞ্চিত হয়েছেন গরিব, সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষ। এনিয়ে একাধিক অভিযোগ হলেও তার কোন উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন।
আরও পড়ুন: মুখ্যমন্ত্রীকে ২০,২৮ আগস্ট লকডাউন প্রত্যাহারের দাবি জানাল ছাত্র পরিষদ
অভিযোগ, আবেদন করলেও পঞ্চায়েত অফিস থেকে আবেদন খারিজ করে দেওয়া হয়। এই সমস্ত দুস্থ গরিব মানুষ যাদের সত্যিই ক্ষতি হয়েছে, অথচ আর্থিক সামর্থ্য নেই তাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আর্জি নিয়ে তিনি হাইকোর্টে মামলা করেন মামলাকারী।
পাশাপাশি, হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত কোনও বিচারপতির তত্ত্বাবধানে একটি তদন্ত কমিটি করার আবেদন জানানো হয়েছে মামলায়। যে কমিটি খতিয়ে দেখবে, এ পর্যন্ত কত টাকা দেওয়া হয়েছে, কতজন ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন, কারা কারা ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন। যারা ক্ষতিপূরণ পাননি তারা কেন বঞ্চিত হয়েছেন, এই সংক্রান্ত খুঁটিনাটি বিস্তারিত বিষয় খতিয়ে দেখতে এই কমিটি গঠনের আবেদন জানান মামলাকারির আইনজীবীরা। তার ভিত্তিতে আদালতের রিপোর্ট দিক এবং আদালতে তার ব্যবস্থা করুক।