ঐতিহাসিক রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি হেরিটেজ ঘোষিত, সম্মানিত ইতিহাস

শরণানন্দ দাস, কলকাতা: কালজয়ী বাঙালি ঐতিহাসিক, প্রত্নতাত্ত্বিক মহেঞ্জোদারো সভ্যতার পুনরাবিষ্কর্তা রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের বনগাঁর বসতবাড়িটি ‘ হেরিটেজ’ ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। এই ঘোষণার মাধ্যমে ইতিহাসকেই সম্মানিত করা হলো এমনটাই মনে করছেন ইতিহাসবিদ থেকে বুদ্ধিজীবী মহল। এই খবরে খুশি ঐতিহাসিকের বংশধরেরা।
বনগাঁর ছয়ঘরিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের ছয়ঘরিয়া গ্রামে রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের পৈত্রিক ভিটে। যদিও তাঁর জন্ম মুর্শিদাবাদ জেলার বহরমপুর শহরে। তবে জীবদ্দশায় বহুবার তিনি এই বাড়িতে এসেছেন। বিশেষ করে পারিবারিক দুর্গাপুজোর সময় তিনি প্রতিবছর এই বাড়িতে আসতেন। নিজের হাতে গ্রামবাসীদের বস্ত্রদান, প্রসাদ বিতরণ করতেন। এখনও পরিবারের বংশধরেরা প্রতিবছর রীতি মেনে দুর্গাপুজো করেন।
ছয়ঘরিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান প্রসেনজিৎ ঘোষ জানান, গত বছর ১১ মার্চ মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্য হেরিটেজ কমিশনের কাছে এই বাড়িটিকে হেরিটেজ ঘোষণা করার জন্য লিখিতভাবে আবেদন জানানো হয়। এরপর ডিসেম্বর মাস নাগাদ রাজ্য হেরিটেজ কমিশনের সচিব পর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদল বাড়িটি পরিদর্শন করে। তারপর সম্প্রতি রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্মৃতিবিজড়িত বাড়িটি হেরিটেজ ঘোষণা হওয়ায় খুশি প্রত্যেকেই।
রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় বাঙালি মনীষীর এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। মহেঞ্জোদারো সভ্যতার প্রাচীন আবিষ্কার তাঁর শ্রেষ্ঠ কীর্তি। কুষাণ সম্রাট কণিষ্ক সম্পর্কে তিনি যেসব তথ্য আবিষ্কার করেন তা প্রামাণ্য বলে বিবেচিত হয়েছে। বাংলায় পাল বংশের সম্পর্কিত বহু তথ্য তিনি আবিষ্কার করেন। পাহাড়পুরে খনননকার্যেরও পরিচালক ছিলেন তিনি।
তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে দুই খণ্ডে বাংলার ইতিহাস, পাষাণের কথা, শশাঙ্ক ও ধর্মপাল। এছাড়াও তাঁর আরো একটি উল্লেখযোগ্য কাজ হলো ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্তে প্রাপ্ত প্রস্তরখোদিত লিপির বর্ণনামূলক সংকলন গ্রন্থ সম্পাদনা করা।
বাঙালির একটা বদনাম রয়েছে আত্মবিস্মৃত জাতি হিসেবে। রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের বসতবাড়িটিকে হেরিটেজ তকমা দিয়ে সেই বদনাম কিছুটা লাঘব হলো বলাই বাহুল্য।