পশ্চিমবঙ্গহেডলাইন
রথের দিনেও স্তব্ধ চিৎপুরের যাত্রা একাডেমি

অভিষেকে গঙ্গোপাধ্যায়, কলকাতা, ২৩ জুন: করোনার থাবায় রথের দিনেও স্তব্ধ চিত্পুরের যাত্রা একাডেমি। অন্যান্যবার রথের দিন নিঃশ্বাস ফেলার সময় থাকেনা শহরের যাত্রা একাডেমি গুলির। কিন্তু এবারে কার্যত মাছি তাড়াচ্ছে চিতপুরের যাত্রা একাডেমি। বায়না তো নেই উপরন্তু একটা দুটো যে শো আসে তার দেখা নেই এবারে। করো না সব লন্ডভন্ড করে দিয়েছে তাদের ছন্দময় রঙিন জীবনে। যাত্রাপালা এ যেন হঠাৎ করেই নেমে এসেছে অন্ধকার। এই অন্ধকার কবে কাটবে কেউই তার দিশা দিতে পারছেন না।যাত্রাদল গুলি প্রতি বছর রথের সময় নতুন দল গড়ে। রথের দিন আত্মপ্রকাশ করে নতুন যাত্রা পালা নতুন দল। চলতি বছরে রোজগার না হওয়ায় আগামী বছর কি হবে, কিভাবে নতুন যাত্রা পালা, নতুন দল করা হবে সে বিষয়ে পুরোপুরি অন্ধকারে চিৎপুর যাত্রা পাড়া। রথের দিন নতুন যাত্রাপালা নতুন দল নিয়ে আত্মপ্রকাশ করতে পারলনা তাঁরা। যাত্রার বাজার মন্দা হওয়া সত্ত্বেও বায়না প্রতিবারই আসে। তবে এবারে রথে একটাও বায়না না আসা যাত্রা পাড়ায় নজিরবিহীন।
ফাল্গুন, চৈত্র, বৈশাখ, জৈষ্ঠ এই চারটি মাস যাত্রা দলগুলির কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই চার মাসে যাত্রা দলগুলি ১০০ থেকে ১৫০ পালা করে থাকে বিভিন্ন গ্রাম-গঞ্জে। বুকিং শুরু হয়ে যায় আরো অনেক আগে থেকে। কিন্তু এবছর করোনা আবহে বাতিল হয়ে গিয়েছে সব পালা।গ্রামে-গঞ্জে বিভিন্ন সংস্থা, ক্লাব কর্তৃপক্ষকে ফেরত দিয়ে দিতে হচ্ছে টাকা।বড় যাত্রা দলগুলি তবু কিছুটা পালা করতে পারলেও, ছোট দলগুলি ২০-২৫ বেশি পালা করতে পারেনি চলতি বছরে। এদিকে বছর শুরুতেই ২০ – ৩০ লাখ টাকা ঢেলে বসে আছে প্রযোজকরা। রোজগার না থাকায় প্রযোজকরাও আর টাকা দিতে চাইছে না কর্মীদের। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা যাত্রাপালার সঙ্গে যুক্ত রোজ মজুরি ভিত্তিতে কাজ করা কর্মীরা। অনামী শিল্পী, মিউজিক-লাইট বয়, যাত্রা দলগুলির ম্যানেজার এদের অবস্থা শোচনীয়।
এক যাত্রা কর্মীর কথায় অন্যান্যবার এই সময় নেওয়া খাবার সময় থাকে না তাদের। একের পর এক বায়না, নতুন যাত্রা পালার মহড়া সব মিলিয়ে ব্যস্ততা তুঙ্গে থাকে এই সময়টায়। এবারের ছবিটির সম্পূর্ণ আলাদা। যাত্রা দলগুলির সঙ্গে যুক্ত সাধারণ মানুষ কর্মচারী বেশিরভাগই গ্রাম থেকে আসেন কাজ করতে। গ্রামে ফিরে গেলেও অনেকেই অর্থকষ্টে ভুগছেন। চিৎপুর যাত্রা দলগুলির অফিসে অনবরত ফোন বেজেই চলেছে বিভিন্ন কর্মীদের টাকা চাওয়ার দাবিতে। পশ্চিমবঙ্গ যাত্রা একাডেমি পরিচালন কমিটির সদস্য কনক ভট্টাচার্য এদিন জানান, “অবস্থা খুব খারাপ অন্ধকারে চলে গেল যাত্রা দলগুলি। চৈত্র-বৈশাখ মাসে প্রচুর শো হয়। এবার কিছুই হতে পারল না। আমরা প্রযোজকরা এক টাকাও ঘরে তুলতে পারেনি। আমার নিজেরই ৩০ লাখ টাকা লোকসান হয়ে গেল। কি করে অভিনেতা কলাকুশলী কর্মীদের টাকা দেব।”
তবে করোনার ধাক্কা সামলে উঠতে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাস গড়িয়ে যাবে বলেই মনে করছেন অনেকে। লকডাউন উঠে গেলেও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিধি-নিষেধ জারি থাকবে। সে ক্ষেত্রে যাত্রা পালা বুকিং পেতেও অসুবিধার সম্মুখীন হতে হবে দলগুলিকে। তার উপর বর্তমান পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে আর্থিক মন্দার সম্মুখীন হতে হবে সবাইকেই। তাই সেক্ষেত্রেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও ক্লাব বিভিন্ন সংস্থা যাত্রা পালা বুকিং করবে কিনা যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে চিৎপুর যাত্রা পাড়া। তবু এবছর দুর্গাপুজো দেরিতে হওয়ায় কিছুটা হলেও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছে দলগুলি।