রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নির্দেশ অমান্য করে ঋণ শোধ করতে না পারা মানুষের ওপর চাপ সৃষ্টি ঋণদানকারী সংস্থার!

প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়, বর্ধমান: অভাবের সংসারেও স্বনির্ভর হাওয়ার জন্য ঋণদানকারী সংস্থা থেকে বহু পুরুষ ও মহিলা ঋণ নিয়েছিলে। পূর্ব বর্ধমানের বহু প্রান্তিক মানুষজনের কেউ দশ হাজার আবার কেউ তিরিশ সাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। সেই ঋণ তারা শোধও করে আসছিলেন। কিন্তু ভারতে কোভিড ভাইরাস হানা দেওয়ার পর থেকে সব কিছুর ওলটপালট ঘটে যায় ।
কোভিড অতিমারী পরিস্থিতির জন্য দেশজুড়ে লকডাউন জারি করা হয়। তারপর থেকেই ঋণ গ্রহিতা জেলার রায়না, জামালপুর, মেমারি, খণ্ডঘোষ সহ বিভিন্ন ব্লকের মানুষজনের রুটি রুজিতে টান পড়ে গিয়েছে। প্রান্তিক মানুষজন এখনও কার্যত বাড়িতেই বসে রয়েছেন। সেই কারণে সদিচ্ছা থাকলেও তারা নির্দিষ্ট সময়ে ঋণ শোধ করতে পারছেন না । আর ঋণ শোধ করতে না পারার কারণে ওই সকল প্রান্তিক মানুষজনকে এখন হজম করতে হচ্ছে ঋণদানকারী সংস্থার লোকেদের দুর্ব্যবহার ও হুমকি। এই অবস্থা থেকে নিস্কৃতি পেতে ব্লক ও জেলা প্রাসনের দ্বারস্থ হয়েছেন ঋণ গ্রহিতারা।তারা সবিস্তার লিখিত ভাবে প্রশাসনের কর্তাদের কাছে জানিয়েছেন। ঋণদানকারী সংস্থার সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যা সমাধানের পথ খোঁজা হবে বলে তাঁদের প্রশাসনের কর্তারা আশ্বস্ত করেছেন।
ঋণদানকারী সংস্থার লোকজনের দুর্ব্যবহার হুমকির প্রতিবাদে কিছুদিন আগে জেলার বিভিন্ন ব্লকের বিডিও অফিসে ডেপুটেশন দিয়েছেন ঋণ গ্রহিতারা। কোন কোন ঋণ গ্রহিতা আবার সংশ্লিষ্ট থানারও দ্বারস্থ হয়েছিলেন। রায়না ১ ব্লকের নড়ুগ্রাম পঞ্চায়েতের কুলিয়া গ্রামের ঋণ গ্রহিতারা ঋণদানকারী সংস্থার বিরুদ্ধে প্রশাসনের সর্বস্তরে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন।
কুলিয়া গ্রামের বাসিন্দা, আনোয়ার বেগম, সুমিতা সরেন প্রমুখরা বলেন, ‘দেশে করোনা হানার আগে পর্যন্ত তাঁরা নিয়মিতভাবে ঋণ পরিশোধ করে আসছিলেন। কিন্তু মাসের পর মাস লকডাউন চলায় তাঁরা কাজকর্ম করতে পারেননি। এখনও তাঁদের কাজকর্ম সেভাবে নেই। সেই কারণে ঋণ শোধ করতে পারছেন। তার জন্য ঋণদানকারী সংস্থার লোকজন বাড়িতে এসে দুর্ব্যবহার করছেন, হুমকি দিচ্ছেন এমনকী গালিগালাজও করে যাচ্ছেন। অপর ঋণ গ্রহিতা মাধবী সরেন, মমতাজ বেগম বলেন, ঋণ নিয়ে কেউ চাষে খরচ করেছেন। কেউ ব্যবসার কাজে লাগিয়েছিলেন। আবার কেউ টোটো-রিকশা-ভ্যান কিনেছেন। এবছর চাষে ফলন ভালো হয়নি। যেটুকু ফসল ফলেছে, সেটাও লোকসানে বিক্রি করতে হয়েছে। মাধবী সরেন বলেন, ‘এখন তাঁদের পেটের খাবার যোগাড় করার অর্থেও টান পড়ে গিয়েছে। ঋণ শোধ করবেন কি করে। কিন্তু ঋণদানকারী সংস্থার লোকজন কিছুই শুনতে চাইছেন না। প্রশাসন কোনও ব্যবস্থা না নিলে তাঁদের আত্মহত্যা করা ছাড়া আর কোনও উপায় থাকবে না’।
আরও পড়ুন:পুজো কমিটিকে অনুদান, খয়রাতির প্রসঙ্গ তুলে রাজ্যকে আক্রমণ দিলীপের
ঋণদানকারী সংস্থার লোকজন ঋণ শোধের জন্য এই ভাবে চাপ সৃষ্টি করাটা রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নির্দেশের পরিপন্থী বলে মনে করছেন জেলার লিড ব্যাঙ্কের ম্যানেজার রঞ্জন গুহ। তিনি জানিয়েছেন রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের নির্দেশ অনুযায়ী, অতিমারী চলাকালীন রেজিস্টার্ড কিংবা আন রেজিস্টার্ড সংস্থায় বেতনভুক নয়, এমন মানুষজনের কাছে ঋণ আদায়ের জন্যে ‘চাপ’ দেওয়া যাবে না। যদি কোনও সংস্থা ঋণ আদায়ের জন্যে চাপ দেয়, তাহলে তারা ভুল করছে। “ প্রশাসনের একটি বিশেষ সূত্র মাধ্যমে জানা গিয়েছে, ১১টি ক্ষুদ্র ঋণ দান সংস্থা রয়েছে জেলায়। তার মধ্যে আরবিআইয়ের রেজিস্টার্ড ভুক্ত রয়েছে মাত্র দু’তিনটে সংস্থা।
এই বিষয়ে রায়না ১ ব্লকের বিডিও সৌমেন বণিক বলেন, “সব মাইক্রো ফিনান্স সংস্থার লোকদের ডেকে আলোচনা করে উদ্ভূত সমস্যা সমাধানের পথ বের করা হবে’’।
জেলাপরিষদের সহ সভাধিপতি দেবু টুডু জানিয়েছেন, ঋণদানকারী সংস্থার লোকজন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গাইড লাইন না মানলে সংশ্লিষ্ট সংস্থার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে প্রশাসন।