বাগুইআটি জোড়া খুনে এখনও অধরা মূল অভিযুক্ত

যুগশঙ্খ, ওয়েবডেস্ক: বাগুইআটি কাণ্ডে এখনও বিশবাঁও জলে পুলিশ। দুই ছাত্র খুনের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত সতেন্দ্র চৌধুরী এখনও অধরা। এই ঘটনায় পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার প্রশ্ন তুলে সোচ্চার হয়েছে স্থানীয় মানুষ। পরিস্থিতির আঁচ পেতেই সরব হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রশাসনিক বৈঠক থেকে সরব হন মুখ্যমন্ত্রী কিভাবে ছোট ছোট ছেলেদের সঙ্গে এই ধরনের ঘটনা ঘটল, পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। এর পরেই তিনি ডিজিকে ডেকে পাঠিয়ে ঘটনায় অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে কঠোর শাস্তির নির্দেশ দেন। ফিরহাদ হাকিম সাংবাদিকদের সামনে জানান, এই ঘটনায় অত্যন্ত দুঃখিত মুখ্যমন্ত্রী। দোষীরা শাস্তি পাবে, কাউকে রেয়াত করা হবে না। ক্রমশ উত্তপ্ত হতে থাকা পরিস্থিতির মধ্যেই বাগুইআটি থাকার আইসি, এসআইকে সাসপেন্ড করা হয়। ঘটনা প্রসঙ্গে বাগুইআটি থানার পুলিশের ভূমিকা নিয়ে সরব হন ফিরহাদ হাকিম।
এদিকে বাগুইআটি থানার দুই ছাত্র অতনু দে ও অভিষেক নস্কর দুইজনে সম্পর্কে তুতো ভাই। গত ২২ অগস্ট নিখোঁজ ছিল দুজনে। দু’জনেই বাগুইআটির হিন্দু বিদ্যাপীঠের দশম শ্রেণির ছাত্র। ২৪ অগস্ট বাগুইআটি থানায় অভিযোগ করে পরিবার। তার পরেই তদন্ত শুরু করে পুলিশ। প্রায় ১১ দিন পর বসিরহাটের মর্গে তাদের দেহ পাওয়া যায়। দেহের অবস্থা পচাগলা অবস্থায় ছিল বলে জানা যায়। কিন্তু এতদিন ধরে বসিরহাট মর্গে পড়ে থাকার পর, কেন পুলিশ এ ব্যাপারে কিছুই বুঝতে পারল না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিধাননগর পুলিশ সূত্রে খবর, পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ীই খুন করা হয়েছে অতনু ও অভিষেককে। বেশ কিছুদিন আগেই সেই প্ল্যান করা হয়। অভিজিৎ-সহ বাকি অভিযুক্তদের জেরা করে তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, কয়েকদিন আগে বিধাননগর এলাকায় অভিজিতের সঙ্গে একটি হোটেলে দেখা করে সত্যেন্দ্র চৌধুরী। সেই হোটেল কাজ করত অভিজিৎ। বাকি তিনজনকেও জোগাড় করে সত্যেন্দ্র। পরে ওই হোটেলেই হত্যার ছক কষা হয়। যদিও প্রধান টার্গেট ছিল অতনু। কিন্তু সেদিন অতনুর সঙ্গে পিসুতুতু ভাই অভিষেক থাকায় খুন হতে হয় তাকেও। অত্যন্ত পরিকল্পনা মাফিক এই কাজ করা হয়। যে নম্বর থেকে মেসেজ করা হয়েছে সেই নম্বরগুলি থেকে মেসেজ ছাড়া করা ছাড়া আর কোথাও যোগাযোগ করা হয়নি। যাতে পুলিশ সেগুলি ট্র্যাক না করতে পারে।
এখনওপর্যন্ত মোট ৪ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। যে গাড়িতে অতনু ও অভিষেককে অপরহণ করে খুন করা হয় সেটিকে বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিস। ধৃতদের মধ্যে ছিল অভিজিৎ বোস। তার বাড়ি হাওড়ায়। বাকিরা শামিম আলি, শাহিন আলি, দিব্যেন্দু দাস। তাকেই জেরা করেই ওই গাড়িটির সন্ধান পাওয়া যায়। কেষ্টপুর থেকে গাড়িটিকে উদ্ধার করা হয়েছে। ওই গাড়িতেই দুই ছাত্রকে অপহরণ ও বাসন্তী হাইওয়ের উপরে তাদের শ্বাসরোধ করে খুন করা হয় বলে পুলিশ সূত্রে খবর। গাড়িটি কার নামে রয়েছে তা খোঁজ খবর করে দেখা হচ্ছে। কিন্তু মূল অভিযুক্ত সত্যেন্দ্র চৌধুরী এখনও পলাতক।
স্থানীয় সূত্রে খবর, সত্যেন্দ্র চৌধুরীর বাড়ি বিহারের সীতামারিতে। আনুমানিক বয়স ২৬ বছর। গত কয়েকবছর ধরে এই এলাকায় থাকত সত্যেন্দ্র। অতনুদের বাড়ি থেকে কিছুটা দূরের তার ছোটো একটি মোটর পার্টসের দোকান রয়েছে। অতনুদের বাড়ির পাড়াতে শ্বশুরবাড়ি। স্ত্রী ও বাচ্চাকে নিয়ে অতুনদের পাশে সবুজ পল্লিতে থাকতো সে। বছর চারেক আগে প্রেম করে বিয়ে হয় অতনুদের পাড়ায়। সেই সূত্রে অতনুর সঙ্গে মেলামেশা।