fbpx
পশ্চিমবঙ্গহেডলাইন

লকডাউনে খোঁড়া হল স্কুলের মাঠ, স্থানীয়দের উদ্যোগে বন্ধ হল কাজ

অমিত দাস, নদিয়া: ১৮৯৯, ব্রিটিশ শাসিত ভারতবর্ষ। চারিদিকে চলেছে ব্রিটিশের চোখ রাঙানি। শহিদ হচ্ছে একের পর এক সংগ্রামী প্রাণ। একদিকে চলছে ব্রিটিশ শক্তির অত্যাচারি শাসন, অন্যদিকে ভারতীয় শিক্ষা ব্যবস্থার প্রসার। ঠিক সেই ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটেই নদীয়া জেলার সীমান্ত ঘেঁষা যমশেরপুর গ্রামে তৈরি হয় যমশেরপুর ভূপেন্দ্র নারায়ণ স্কুল। প্রথমে কবি যতীন্দ্র মোহন বাগচী’র পূর্বপুরুষদের তৎপরতায় তৈরি হয় এই স্কুল। সময় পার হয় ইতিহাসের পাতা উল্টে। এগিয়ে আসেন আরও অনেকে। বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে গড়ে ওঠে স্কুল। স্বমহিমায় স্কুলটি নিজের খ্যাতি প্রসার ঘটাতে থাকে। একের পর এক কৃতী ছাত্রছাত্রী উজ্জ্বল করে স্কুলের নাম। আজও স্কুল বিল্ডিংয়ের দিকে তাকালে রোমাঞ্চিত হয়ে ওঠে মন। সেই পুরোনো ব্রিটিশ আমলে তৈরি কনস্ট্রাকশনের দিকে তাকালে হারিয়ে যেতে হয় পুরোনো ইতিহাসে। কিন্তু সেই ঐতিহ্যবাহী স্কুল আজ স্থানীয় মানুষদের সমালোচনার মুখে।

স্কুলটির পাশেই রয়েছে তার নিজস্ব বিস্তীর্ণ মাঠ। সবুজ ঘাসে ঢাকা এই মাঠ খেলাপ্রেমীদের অমূল্য সম্পদ। শীত গ্রীষ্ম বর্ষা এসবের তোয়াক্কা না করে ভোর থেকেই ভিড় জমে মাঠে৷ শরীরচর্চা করেন বাচ্চা খেকে বুড়ো সবাই। এই মাঠ যেন তাদের দৈনন্দিন জীবনের অঙ্গ হয়ে উঠেছে। শুধু তাই নয় বিভিন্ন টুর্নামেন্টও হয় এই মাঠে। এসমস্ত কিছু কথা ভেবেই স্কুল কর্তৃপক্ষ মাঠটিকে সকলের ব্যবহারযোগ্য ভেবে আর প্রাচীর দিয়ে ঘিরেনি। কিন্তু সেই স্কুল কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তেই চাষের জন্য খোঁড়া হলো সেই মাঠটি। স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, দিন চারেক আগে স্কুল কমিটি সিদ্ধান্ত নেই মাঠে ‘একানি’ নামক দ্রব্যের চাষ করা হবে। সিদ্ধান্ত মতো কাজ হয়। লিজ দেওয়া হয় এমনই একজন ঠিকাদারকে। লকডাউনের মধ্যেই খোঁড়াখুঁড়ি শুরু হয়ে যায় মাঠ। স্থানীয়দের চোখে পড়তেই রুখে দাঁড়ান তারা। লকডাউনের জেরে মাঠে লোকজনের আনাগোনা বন্ধ। বিষয়টি জানাজানি হতেই এগিয়ে আসে স্থানীয় মানুষজন। জমায়েত হয় খেলাপ্রেমী কিছু যুবক। এগিয়ে আসে মাঠে শরীর চর্চা করতে আসা মানুষজন। তাদের সকলের তৎপরতায় জানানো হয় প্রশাসনকে। বন্ধ হয় কাজ।

আরও পড়ুন: বিশাল আকৃতির এক প্রাণীর কঙ্কাল উদ্ধারকে ঘিরে চাঞ্চল্য ডোমনা পাড়ায়

স্থানীয় সুত্রে আরও জানা গেছে, দিন চারেক আগে কয়েকজন যুবকের নজরে আসে বিষয়টি। লকডাউনের জন্য এসময় মাঠে কেউ আসছেনা। এই সময় ট্রাক্টর দিয়ে মাঠ খোঁড়া শুুরু হয়। কয়েকজন যুবক কাজ বন্ধ করতে বলে। তারা জানতে পারে চাষের জন্য লিজ দেওয়া হয়েছে এই জমির একটা অংশ। তারা তৎক্ষনাৎ স্কুলের হেড মাষ্টারমশাইকে ডাকেন। তিনি এসে স্কুল কমিটির সিদ্ধান্তের কথা জানান। এরমধ্যেই জড়ো হয় স্থানীয় মানুষজন। স্থানীয়দের কথায় স্কুল কমিটির সিদ্ধান্তের ওপর সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কোনও পারমিশন আছে কিনা তাও জানা যাইনি। তাদের দাবি এই সিদ্ধান্তে কোনও সরকারি শিলমোহর নেই।

স্কুলের এই সিন্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেন অনেকেই। এমনই একজন মাঝবয়সী ভদ্রলোক বলেন, অনেকদিন ধরে সুগারে ভুগছি। ডাক্তারের পরামর্শে রুটিন করে সকালে হাঁটতে আসি এই মাঠে। কিন্তু মাঠের এমন দশা দেখে খারাপ লাগছে। স্থানীয় এক যুবকের কথায়, লকডাউন আর করোনা ভাইরাসের সমস্যা মিটে গেলেই আমরা যারা নিয়মিত রান প্রাকটিস করি তারা সবাই আবার মাঠে আসব। সামনে অনেক কটা ডিফেন্স লাইনে যাব। কিন্তু এখন মাঠের যা অবস্থা, তাতে আর প্রাকটিস করা যাবে না।

ঐতিহ্যবাহী এই স্কুলের সঙ্গে স্মৃতি জড়িয়ে আছে অনেকেরই। তারা কতজন আজ দেশে বিদেশে কর্মরত। এই স্কুলেই রয়েছে ব্রিটিশ আমলের ইতিহাসের ছোঁয়া। আজও তাকালে সবার মন রোমাঞ্চকর হয়ে ওঠে। কিন্তু বর্তমান কংক্রিটের সভ্যতা আর বুকের তলানিতে ঠেকে যাওয়া মূল্যবোধ সত্যিই কি পারবে ইতিহাসের গা ছমছমে ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখতে? নাকি সেই মাঠের ফসল একসময় জায়গা নেবে ঐতিহ্য সম্বলিত পুরোনো স্কুল বাড়িটিতেও?

Related Articles

Back to top button
Close