সুন্দরবনের বিধবা গ্রামের বিধবাদের জন্য নিয়মিত খাবারের ব্যবস্থা সমাজসেবীর
শ্যাম বিশ্বাস, উওর ২৪ পরগনা: সুন্দরী, শ্যামলী, কামধেনু, ষাটোর্ধ্ব বিধবাদের জন্য খাবারের রান্নাঘর। এদের স্বামীরা নদীতে মাছ ও কাঁকড়া ধরতে গিয়ে, কেউ আবার জঙ্গলে মধু ভাঙতে গিয়ে বাঘের পেটে চলে গেছে। তাই আজ এরা স্বামী হারা, অসহায় দারিদ্রতার মধ্যে দিন কাটছেন। এদের মধ্যে কেউ কেউ বিধবাভাতা পেলেও সংসার ঠিকমত চলছে না, তাই এদের গ্রামে গ্রামে ভিক্ষাবৃত্তি করে সংসার চালাতে হয়, কিন্তু বয়সের ভারে তা আজও বন্ধ জীবন আর চলেনা।
বসিরহাট মহকুমার হিঙ্গলগঞ্জ ব্লক এর কালিতলা গ্রাম পঞ্চায়েতের পারঘুমটি গ্রাম। প্রায় শতাধিক বিধবা মহিলা রয়েছে এই গ্রামে, তাই গ্রামের মানুষের কাছে বিধবা গ্রাম বলেই পরিচিত। তাদের একদিকে যেমন স্বামী হারিয়ে অসহায় একাকীত্ব হয়েছে। অন্যদিকে বাড়ির একমাত্র রোজগেরেকে জঙ্গলে পেটের আহার জোগাড় করতে গিয়ে বাঘে টেনে নিয়ে গেছে। এদের একমাত্র জীবিকা ছিল জঙ্গলের মধু ভাঙ্গা, কেউ চোরাপথে আবার কেউ বনদপ্তরের চোখ এড়িয়ে জঙ্গলে পাড়ি দিত মধু ভাঙত। তাই সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগারের মুখে পরতে হতো এদের। আজ স্বামী হারানো শুধু জঙ্গলের অতীত স্মৃতি বুকে আঁকড়ে রেখে দুবেলা খাবারের খোঁজে বেরিয়ে পড়ে বিধবা গ্রামের বিধবা মহিলারা।
আরও পড়ুন: মালদায় গ্রামে ঢুকতে বাধা সাংসদ খগেন মুর্মুকে
লকডাউন জেরে খাবারের সমস্যা দেখা দিয়েছে। ওদের জন্য তৈরি হয়েছে পারঘুমটি গ্রামের স্কুলে খাবারের হেশেল। প্রতিদিন দু’বেলা নিয়ম করে টেবিল চেয়ারে বসিয়ে ডাল, ভাত, ডিম, মাংস, খাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন সমাজসেবী ও শিক্ষক তুষার মন্ডল। তিনি বলেন, এই অসহায় বিধবা মহিলাদের কথা কেউ ভাবছে না। তাই আমার মনে হয়েছে এই সংকটকালে তাদের দুটো পেট ভরে খাওয়ালে মনের তৃপ্তি পাওয়া যাবে। কোথায় যাবে দুমুঠো ভাতের জন্য। তারা ঠিকমত চলতে পারেনা, ভুরু কুঁচকে গেছে, চোখের চামড়া গুটিয়ে গেছে, সব মিলিয়ে এই অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পেরে আমরা খুশি। যতদিন লকডাউন চলবে ততদিন আমরা তাদের খাওয়ার ব্যবস্থা করেছি। এই অর্থ যারা সমাজে ধনী পরিবার আছে তারা স্বেচ্ছায় তাদের খাবারের জন্য সবরকম ব্যবস্থা করছেন, আমরা তাদের কাছে কৃতজ্ঞ।