
মনীষা ভট্টাচার্য: অপরাধ শব্দটির ব্যবহার কবে থেকে তার সঠিক সাল-তামামি জানা যায় না। তবে মনে হয় সভ্যতার আদিপর্ব থেকেই এর জন্ম। নিয়মের বিরুদ্ধাচরণ দিয়ে যে অপরাধের সূচনা, তাই ধীরে ধীরে দুর্নীতির রূপ নিয়েছে।
বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে দুর্নীতি শব্দটি শুনলে রাজনীতি, আইনি ব্যবস্থা, শিক্ষাব্যবস্থা, স্বাস্থ্যব্যবস্থা-দেশের পুরো সিস্টেমের কথাই মনে আসে। রাজা থেকে কর্মচারী সবাই কোরাপ্ট। মিথ্যে দিয়ে, লোক ঠকিয়ে কিভাবে নিজের কাজ হাসিল করা যায় তারই চেষ্টাতে আমরা ব্যস্ত। কোরাপশানের চেহারাটা বোধহয় সব সময় একইরকম। ১৯৮১-’৮২ সালের দুর্নীতি আর বর্তমান সময়ের দুর্নীতি একইরকম, শুধু কিছু টেকনোলজির ব্যবহারের হেরফের। আর দুর্নীতি দমনের কায়দা-কানুনও এক।
দুর্নীতি নিয়ে এত কথা কারণ দুর্নীতির চেনা ছকে আরও একটি হিন্দি ছবি এল নেটফ্লিক্সে। ‘ক্লাস অব ৮৩’। পরিচালক অতুল সভরওয়াল। আটের দশকে মুম্বই আন্ডারওয়ার্ল্ড কেমন ছিল তার বাস্তব ছবি পাওয়া যায় সৈয়দ হোসেন জায়াদির লেখা ‘দ্য ক্লাস অব ৮৩-দ্য পানিশারস অব মুম্বই পুলিশ’ বই থেকে। এই বইয়ের ছায়াতেই পরিচালক তৈরি করেছেন এই ছবির গল্প। ছবিটির শুরুতেই রয়েছে নাসিকের পুলিশ আকাদেমির প্রশিক্ষণের দৃশ্য।
পানিশমেন্ট পোস্টিং-এ উচ্চপদস্থ বিজয় সিং(ববি দেওল)সেই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ডিন।এটি তার প্রথম ব্যাচ। সেই ব্যাচের ৫টি অপেক্ষাকৃত খারাপ ছাত্রকে নিয়ে ডিনের বহুদিনের আটকে থাকা কেসের সমাধানই ছবির বিষয়বস্তু। এই সমস্যার সঙ্গেই জড়িয়ে রয়েছে মুম্বইয়ের আন্ডারওয়ার্ল্ডের গল্প। কুখ্যাত ডনকে ধরতে গিয়েই বিজয় সিং ব্যর্থ হন। বুঝতে পারেন সেই ডনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে রাজনৈতিক মহল। প্রতিবাদের ফল স্বরূপ পানিশমেন্ট পোস্টিং। দীর্ঘ ৮ বছরের অপেক্ষার পর নাসিকের পুলিশ আকাদেমির সেই ৫ খারাপ ছাত্রের সহযোগিতায় সফলতা আসে।
আরও পড়ুন:রূপ পাল্টে আজীবন থাকতে পারে করোনা, মত ব্রিটিশ বিজ্ঞানী স্যার মার্ক ওয়ালপোর্টের
আন্ডারওয়ার্ল্ড সংক্রান্ত ছবি করতে গিয়ে যা যা উপকরণের দরকার হয় তার সবই রয়েছে ছবিতে। পরিচালক অতুল স্টারকাস্টে নজর রাখেননি। ববি দেওল, জয় সেনগুপ্ত, অনুপ সোনি ছাড়া বাকি সব মুখই নতুন। আর বলাই বাহুল্য তারা প্রত্যেকেই একে অন্যকে টেক্কা দিয়েছেন। ছবির ট্রিটমেন্ট অর্থাৎ গল্পের শুরু, মাউন্টিং এবং সমাপ্তির মধ্যে কোথাও গল্প ছিন্ন হয়নি। ববি দেওল খুবই সংযত অভিনয় করেছেন। তিনি যদি আরেকটু রুডও হতেন তাহলে মন্দ লাগত না। কোরাপ্ট নেতার ভূমিকায় অনুপ সোনির আরও কটি দৃশ্য থাকলে ভালো লাগত।তবে নতুন মুখেদের মধ্যে সমীর পরঞ্জপে(আসলাম), ভূপেন্দ্র(শুক্লা) এবং হিতেশ ভোজরাজ(ভর্দে)-এদের অভিনয় উল্লেখযোগ্য।
৯৮মিনিটের এই ছবির গত ২১ আগস্ট থেকে স্ট্রিমিং শুরু হয়েছে। ‘পুলিশ সিস্টেম অ্যায়সা সিক্কা হ্যায় জিসকা দো সাইড হোতা হ্যায়। এক সাইড ল অওর দুসরা অর্ডার। কভি কভি অর্ডার কো বানায় রাখনেকে লিয়ে ল কো বলি চড়ানা পরতা হ্যায়। অর্ডার বনা র্যায়তা হ্যায় তো সিস্টেম বনি র্যায়তি হ্যায়’-আটের দশকের এই ভাবনা আজও ভীষণ ভাবে কার্যকরী গোটা দেশে। এই জাতীয় ছবির একটা আলাদা দর্শক থাকেই, তাই আশা করা যায় এই ছবিও টার্গেট অডিয়েন্সের কাছে প্রশংসা কুড়োবে।