ছিঃ… মানবজাতির মাথায় কলঙ্কের চিত্র আঁকল কেরলের মাল্লাপুরম! বাজি ভরা আনারস খাইয়ে হত্যা হাতি

যুগশঙ্খ ডিজিটাল ডেস্ক: মানুষ নামে প্রকৃত অর্থ কি সেটাই মনে আজ ভুলতে বসছে “মানুষ’’। কারণ যত দিন যাচ্ছে মানুষ তাদের সেই বোধ, মানবিকতা হারাতে বসেছে। তিরুঅনন্তপুরমের ঘটনা আজ গোটা মানবজাতিতে লজ্জিত করল। হিংস্রতা যখন নিছক মজা বা উপভোগের বিষয় হয়ে দাঁড়ায় তখন তার ভয়াবহতা যে কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় তারই নিদর্শন তুলে ধরল কেরলের মাল্লাপুরম। বাজিভরা বারুদ খাইয়ে এক গর্ভবতী হাতিকে হত্যার ঘটনায় এখনও কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
লকডাউনের মধ্যেই এই ভয়াল ঘটনায় প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে দেশ জুড়ে। হিংসার প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে উঠেছেন বন্যপ্রাণপ্রেমী মানুষ।
উঠে আসছে কেরলের মাল্লাপুরমে ওই হাতিটির যন্ত্রণার দুঃসহ কাহিনি। তদন্তকারীদের অনুমান, এপ্রিলের শেষে বা মে মাসের শুরুতেই বাজিভর্তি আনারস খাইয়ে দেওয়া হয় হাতিটিকে। শুরু হয় মুখের ভিতর বাজি ফাটা। মুখ-পেট-সহ সারা শরীর ভয়াবহ ক্ষতিগ্রস্থ হয় হাতিটির। অথচ সেই অসহ্য যন্ত্রণা নিয়ে গ্রামের মধ্যে ঘুরে বেড়াতে থাকে। কিন্তু মুখের গহ্বরে ফাটল ধরায় সে কিছু খেতে পারছিল না। খাওয়ার খোঁজে লোকালয়ে এসেছিল।
মানুষের নৃশংতার সাক্ষ্য শরীরে নিয়ে সে আবার বনে ফিরে যায়। একদিকে গর্ভের সন্তানকে বাঁচাতে অন্য দিকে অস্বাভাবিক যন্ত্রণা, মুক্তি পেতে সে জলে নামে। ২৭ মে বিকেল ৪ টে নাগাদ তার মৃত্যু হয়।
বনবিভাগের এক অফিসার কেরলের ওই হাতিটির ছবি-সহ গোটা ঘটনার বিবরণ সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করেন। তিনি লিখেছিলেন, “যন্ত্রনায় ছফট করছিল সে। তবু কারও কোনও ক্ষতি করেনি হাতিটি। একটিও ঘরও ভাঙেনি সে। খিদের জ্বালায় ছটফট করেছে কিন্তু কিছু খেতে পারেনি ক্ষতের কারণে।”
ফরেস্ট অফিসার মোহন কৃষ্ণণ যখন সংবাদ মাধ্যমকে তার বিবৃতি দিলেন তখন সেটা দেখে স্তম্ভিত হয়ে গেছিলেন সমস্ত সাংবাদিক।
তিনি বলেছিলেন,”ডাক্তার যখন হাতিটির ময়নাতদন্ত করেন তখন তিনি বলেন যে হাতিটি ৬ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিল। কাঁপা গলায় আরও জানান, যে হাতিটির মধ্যে একটা সিক্সথ সেন্স কাজ করেছিল। সে জানতো তার মৃত্যু আসন্ন। শুঁড় সহ গোটা শরীর রক্তময়, যন্ত্রণায় জ্বলছিল সারা দেহ। এই অবস্থায় সে তার সন্তানের কথা ভেবে চলে যায় নদীর মাঝে জলের মধ্যে যাতে সেই রক্তাক্ত জায়গায় পোকা-মাকড় না বসে। যতক্ষণ প্রাণ ছিল সে চেষ্টা করেছিল যাতে তার সন্তানের কষ্ট একটু হলেও কম হয়। আর শেষ অবধি সে ওই মাঝ নদীতেই প্রাণ ত্যাগ করে।
জানা গিয়েছে, কেরলের Silent valley national park এর একটি ১৫ বছরের অন্তঃসত্ত্বা হাতি মাল্লাপুরমের এর একটি গ্রামের কাছে চলে আসে খাবারের সন্ধানে। সেখানে গ্রামবাসীরা তাকে একটা আনারস খেতে দেয়। অবলা প্রাণীটা সেটি খেয়েও নেয়। আনারসটির ভেতরে ছিল বারুদ ভর্তি। খাওয়া মাত্রই বাজিগুলো তার মুখে ফেটে যায়। রক্তাক্ত হয়ে ওঠে সারা মুখ।
তবুও নিজের সন্তানের কথা ভেবে সেই রক্তাক্ত শরীর নিয়েই ছুটে বেড়ায় সারা গ্রাম একটু খাবারের খোঁজে। শেষ অবধি সে খাবার পায়নি আঘাত ও করেনি কোনও গ্রামবাসী কে, ভাঙেনি কোনও ঘর। সোজা চলে এসে মাঝ নদীতে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত। বহু চেষ্টাতেও তাকে সরানো যায়নি সেখান থেকে।