
তাজ উদ্দিন, শিলচর: জনপ্রিয় ক্রিকেট আসর ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) যখন শুরু হল, ব্রেন্ডন ম্যাককালামের একটা ইনিংসই এই আসরের টি আর পি আকাশে তুলে দিল। ২০০৮ সালের ১৮ এপ্রিল বেঙ্গালুরুর চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে আরসিবি-র বিরুদ্ধে ৭৩ বলে ১৫৮ রান করেছিলেন কলকাতা নাইট রাইডার্সের ম্যাককালাম। এরপর থেকে আইপিএল-কে আর পিছনের দিকে তাকাতে হয়নি। জনপ্রিয় এই ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ মাঝে তিন বছর ১০ এবং নয় দলীয় আসর হিসেবে অনুষ্ঠিত হলেও ২০১৪ সাল থেকে প্রতি বছর আটটি দল অংশ নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। এবার নতুন করে দল বাড়ানোর প্রস্তাব এসেছে। তাই, কীভাবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যালেন্ডারকে নড়াচড়া না করে আইপিএলে দল বাড়ানো যায়, সেই চিন্তায় সৌরভ গাঙ্গুলির নেতৃত্বাধীন টিম বি সি সি আই।
২০০৮-এ আইপিএল শুরু হলেও ২০১১ সালে ফিউচার ট্যুর প্রোগ্রাম তৈরি করার সময় প্রতিবছর এপ্রিল এবং মে মাস আইপিএল উইন্ডো হিসেবে রেখে দেয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আই সি সি)। অর্থাৎ, বড় কোনও সিরিজ বা টুর্নামেন্ট সেই সময় থাকছে না। কিন্তু যে সব দেশের ক্রিকেটাররা আইপিএলে সংখ্যায় কম, তারা দ্বিপাক্ষিক সিরিজে অংশ নিতে পারছে।
প্রতি বছর আইপিএলের গ্রুপ লিগে দলগুলি ডাবল রাউন্ড রবিন লিগ পদ্ধতিতে ১৪টি করে ম্যাচ খেলার সুযোগ পাচ্ছে। সব মিলিয়ে মোট ম্যাচ হচ্ছে ৬০ টি। ২০১২ এবং ২০১৩ সালে নয়টি করে দল অংশ নেওয়ায় ৭৬ ম্যাচের আসর অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেবার লিগে ম্যাচ ছিল ১৬ টি করে। তবে ২০১১ সালে দশ দলীয় আইপিএলে ( 10 team IPL) পার্মুটেশন-কম্বিনেশনের ভিত্তিতে লিগে প্রতিটি দল ১৪ টি করে ম্যাচই খেলেছিল। আর, মোট ম্যাচের সংখ্যা ছিল ৭৪। কোনও দল নির্দিষ্ট প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে একটি, আবার কোনও দল দুটি ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছে। এই ক্রীড়াসূচির পুরোটাই ছিল লটারি ভিত্তিক। এতে শক্তিশালী দল সহজ প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ডাবল লিগ পেয়ে বাড়তি সুবিধা আদায় করে নিতে পেরেছে।
সৌরভ গাঙ্গুলিরা আগামীতে আইপিএলে নতুন দুটি দল যোগ করলেও ক্যালেন্ডারের সময়সীমা খুব বেশি বাড়াতে পারবেন না। কারণ, আই সি সি তো ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের জন্য এর চেয়ে বেশি সময় দেবে না। এমনিতে আইপিএল ছাড়া আর কোনও লিগ আন্তর্জাতিক ক্যালেন্ডারের উইন্ডো পাচ্ছে না। এতে অনেক দেশই আই সি সি-র ওপর ভিতরে ভিতরে ফুঁসছে।
২০২১-এ চতুর্দশ আইপিএলে দলের সংখ্যা বাড়ানোর ব্যাপারে ছক প্রায় সম্পূর্ণ। দল কিনতে ইতিমধ্যে মাঠে নেমে পড়েছেন গৌতম আদানি, সঞ্জীব গোয়েঙ্কা, দক্ষিণী অভিনেতা মোহনলাল। আরও অনেকেই এই তালিকায় রয়েছেন। দলের নিলাম হয়ে কাদের ভাগ্যে শিকে ছেঁড়ে সেটাও বড় প্রশ্ন।
কিন্তু অতিরিক্ত দুটি দলকে জায়গা দিতে গিয়ে কীভাবে হাঁটবে বিসিসিআই? মূলত লিগ টেবিলে ‘ডেড রাবার ম্যাচ’ রাখলে তো চলবে না। এতে আকর্ষণ মার খাবে। সে ক্ষেত্রে একটি বিকল্প হল, দুই স্তরীয় লিগ করে নেওয়া। যেহেতু অবনমন নেই, তাই দশটি দলই তাদের নয়টি প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে এক রাউন্ড খেলবে। এতে হবে মোট ৪৫টি ম্যাচ। এরপর সেরা পাঁচটি দলকে নিয়ে এলিট এবং নিচের পাঁচটি দলকে নিয়ে প্লেট রাউন্ড। এখানে সব মিলিয়ে দশ দুগুণে ২০ টি ম্যাচ। এলিট গ্রুপে প্লে-অফ এবং ফাইনাল সহ আরও চারটি ম্যাচ। আকর্ষণ বাড়াতে করানো যেতে পারে প্লেট গ্রুপের সেরা দুটি দলকে নিয়ে ফাইনালও। এমনটা হলে মাত্র ৭০টি ম্যাচ দিয়ে শেষ হয়ে যাবে ১০ দলের আইপিএল। এই প্রতিবেদককে (Md Taz Uddin ) এমনই ইঙ্গিত দিলেন বোর্ডের এক সিনিয়র কর্মকর্তা।
২০১১ সালের আসর থেকে বেশি জনপ্রিয়তা অর্জন করতে পারে দ্বিস্তরীয় আই পি এল। অবনমন ছাড়াই এমন একটা আসর করানোর পরিকল্পনা রয়েছে সৌরভ গাঙ্গুলিদের মাথায়। দেখা যাক, পর্যন্ত এই পরিকল্পনা দিনের আলো দেখতে পারে কিনা।