আম্ফানের ফলে দিঘায় ভয়ঙ্কর দৃশ্য, ভাঙল একাধিক মাটির বাড়ি ও গাছ
মিলন পণ্ডা, দিঘা (পূর্ব মেদিনীপুর): বুধবার দুপুর থেকে বিকেলের মধ্যে রাজ্যের উপকূলবর্তী এলাকায় আছড়ে পড়ার কথা ছিল আম্ফান নামক ঘূর্ণিঝড়। সেইমতো বুধবার সকাল থেকে সৈকত নগরী দিঘা, মান্দারমনি, শঙ্করপুর, তাজপুর, হলদিয়া সহ একাধিক উপকুল এলাকায় একেবারে ভয়ঙ্কর রূপে ফুলে-ফেঁপে ওঠে।
এদিন দুপুর থেকে সৈকত নগরী দিঘার সমুদ্র চত্বরের গার্ডওয়াল টপকে ঢেউ একেবারে স্থলভাগের প্রবেশ করতে শুরু করে। এছাড়াও জেলার বেশ কয়েকটি উপকূলবর্তী এলাকায় কয়েক হাজার গাছ ঝড়ের প্রভাবে ভেঙে পড়ে যায়।পাশাপাশি একাধিক মাটির বাড়ি ভেঙে পড়েছে। তবে ঘূর্ণিঝড় আম্ফান মোকাবিলার জন্য প্রশাসনের তৎপরতা ছিল একেবারে তুঙ্গে।ঝড়ের মধ্যের মোকাবিলা বাহিনী রাস্তার উপর থেকে গাছ কেটে পরিস্কার করার কাজ শুরু করেছে।
মঙ্গলবার রাত থেকেই দিঘা সহ পূর্ব মেদিনীপুর জেলার একাধিক উপকুল এলাকায় প্রবল বেগে ঝোড়ো বাতাসের সঙ্গে সঙ্গে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। রাত থেকেই দিঘা সহ একাধিক উপকুল ক্রমশ ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করতে থাকে। এদিন সকাল থেকে ঘূর্ণিঝড় আম্ফান যতই দিঘার দিকে ক্রমশ এগিয়ে আসছিলো ততই বাতাসের তীব্রতা ও তার সঙ্গে সমুদ্র সৈকতে ঢেউয়ের উচ্চতা আরোও বৃদ্ধি পাচ্ছিল। তবে এমন পরিস্থিতিতে সমুদ্র সৈকতের আশেপাশে যাতে কোন মানুষ না যেতে পারেন সে জন্য পুলিশ প্রশাসনের নজরদারি ছিল । দিঘার বিভিন্ন ঘাটে ঘাটে ওয়াচ টাওয়ারের মাধ্যমে মঙ্গলবার রাত থেকেই বিশেষ নজরদারি শুরু করে দেয় পুলিশ।
ঘূর্ণিঝড় আম্ফান মোকাবিলা করার জন্য মঙ্গলবার রাতেই দিঘায় পৌঁছান রাজ্যের পরিবহন,পরিবেশ, জল সম্পদ উন্নয়ন ও সেচ দপ্তরের মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। সেইমতো বুধবার সকাল হতেই তিনি দিঘার ইরিগেশন বাংলাতে গোটা ঝড়ের গতিবিধির ওপর নজর রাখেন। এদিকে মন্ত্রীর নজরদারির পাশাপাশি প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা সকাল থেকেই ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলা করতে একেবারে গ্রাউন্ড জিরোতে নেমে পড়েন।
দুর্যোগ মোকাবেলার জন্য শুকনো খাবারের প্যাকেট মজুদ রাখা হয়েছে। বুধবার সারাদিন দিঘা সহ আশেপাশের উপকূলবর্তী এলাকাগুলিতে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর ব্যাটালিয়ন দিঘা,মান্দারমনি, শঙ্করপুর, হলদিয়া ও নন্দীগ্রাম এলাকাতে দুর্যোগ মোকাবিলার কাজে হাত লাগায়। এছাড়াও সিভিল ডিফেন্সের ২০০ জন সদস্যের টাস্কফোর্স দিঘায় দুর্যোগ মোকাবিলার কাজে হাত লাগায়।
বুধবার সকাল থেকে দিঘার পাশাপাশি তাজপুর, শংকরপুর, মন্দারমনি সহ বিভিন্ন সৈকত একেবারে উত্তাল হয়ে পড়ে। জেলার বিভিন্ন জায়গায় একাধিক গাছসহ কাঁচা বাড়ি ভেঙে পড়ে যায়। তবে তবে জেলা প্রশাসনের বিশেষ টিম গিয়ে সঙ্গে সঙ্গে ওই সমস্ত ভেঙে পড়া গাছ সরিয়ে ফেলার কাজে হাত লাগায়। বুধবার সকালে শংকরপুর থেকে তাজপুর যাওয়ার রাস্তায় বোল্ডারের বাঁধ ভেঙে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। যার ফলে ওই রাস্তা দিয়ে গাড়ি চলাচল একেবারে বন্ধ হয়ে যায়। বর্ডারের তৈরি বাঁধ টপকে জল স্থলভাগের প্রবেশ করায় বেশ কিছু জায়গায় জল ঢুকে পড়ে।যদিও আম্ফানের ঝড়ে কোন প্রাণঘানি খবর এখন পর্ষন্ত জানা যায়নি।
পূর্ব মেদিনীপুর জেলার জেলাশাসক পার্থ ঘোষ বলেন আমরা ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের ওপর সবসময় নজর রেখেছি যাতে সাধারণ মানুষের কোনো ক্ষতি না হয়। আমরা কয়েক হাজার মানুষকে বাড়ি থেকে সরিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে এসেছি।সবমিলিয়ে আম্ফানের প্রভাব দিঘা যেন অদ্ভুত ভয়ঙ্কর।