সুন্দরবনে আমফান দুর্নীতির তালিকায় এবার নাম জড়ালো সিপিএমের

শ্যাম বিশ্বাস, উওর ২৪ পরগনা: আমফানের ক্ষতিগ্রস্ত রাজ্যের হয়েছিল রাজ্যের একাধিক জেলা। তার ক্ষতিপূরণ নিয়ে দুর্নীতিতে শাসকদলের একাধিক নেতার নাম জড়িয়েছে। এবার দুর্নীতির তালিকায় নাম জড়াল সিপিএমেরও। যদিও সিপিএমের পক্ষ থেকে এই অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।
জানা গেছে, উত্তর ২৪ পরগনা বসিরহাট মহকুমা সুন্দরবনের হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকে আমফান ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে প্রথম ধাপে প্রায় ১৪,০০০ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের এ
অ্যাকাউন্টে ২০,০০০ টাকা করে দেওয়া হয়। কিন্তু তাতে ব্যাপক দুর্নীতি হয়। দুর্নীতিতে নাম জড়িয়েছে তৃণমূল নেতা কর্মী-সমর্থক দের, বাদ নেই বিজেপি ও কংগ্রেসেরও। যত সময় যাচ্ছে দুর্নীতির তালিকার লিষ্ট ততই লম্বা হচ্ছে। এবার দুর্নীতির তালিকায় নাম জড়ালো সিপিএম এর।
সুন্দরবনের দুলদুলি গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান দীন মুন্ডা, গোবিন্দ কাটি গ্রাম পঞ্চায়েতের মেম্বার সহ একতলা বাড়ি আছে। এমন পরিবারের আমফানের ক্ষতিগ্রস্ত ভূয়ো ছবি দেখিয়ে, ব্যাংকের থেকে কুড়ি হাজার টাকা করে তুলে নিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে সেগুলো আবার ফেরত দিয়েছেন। উপপ্রধান সহ মোট ১১ জন তৃণমূল নেতাকর্মী সমর্থকরা ইতিমধ্যে ব্যাংকে তাদের টাকা ফেরত দিয়েছেন। সেই কথা স্বীকার করে নিয়েছে হিঙ্গলগঞ্জ এর বিধায়ক দেবেশ মন্ডল।
তিনি বলেন, আমফান নিয়ে কিছু দুর্নীতি হয়েছে, সেটা আমরা কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছি, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে সেই টাকা ফেরত দেয়া হয়েছে। আমফানের ক্ষতিগ্রস্ত নামের দ্বিতীয় তালিকা কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে প্রশাসন। কোনরকম দুর্নীতি মেনে নেওয়া যাবে না এবং তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। ইতিমধ্যে যারা টাকা নিয়েছিল ভূয়ো ছবি দেখিয়ে, তারা সকলেই টাকা ফেরত দিয়ে দিয়েছে। দুলদুলি গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামবাসী সুপ্রিয়া মণ্ডল বলেন, প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যারা তারা কেউ টাকা পেলনা। আর টাকা পেল কারা যাদের একতলা, দোতলা বাড়ি আছে তারাই। এই ব্যাপারে সঠিক তদন্ত হওয়া উচিত।
আমফান ক্ষতিগ্রস্ত দুর্নীতির তালিকায় নয়া সংযোজন, প্রাক্তন সিপিএমের জেলা পরিষদের মৎস্য কর্মদক্ষ হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকের দাপুটে সিপিএম নেতা দেবাশীষ বর্মন এর পরিবার এবং তার ছেলে বিপ্লব বর্মনের একাউন্টে কুড়ি হাজার টাকা ঢুকেছে। হিঙ্গলগঞ্জ বাজারে ঝাঁ-চকচকে তিনতলা বাড়ি, কি করে উনি এই টাকা পেলেন? এই ব্যাপারে ওই এলাকায় আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি ক্যামেরার সামনে বলেন , এই অভিযোগ সত্য নয়, অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেছেন। দেবাশীষ বর্মন এর ছেলে বিপ্লব বর্মন বলেন, আমার বাবার রাজনৈতিক মতাদর্শ কে কালিমালিপ্ত করতে চক্রান্ত করে ফাঁসানো হয়েছে। আমি কিছুই জানিনা আমার অ্যাকাউন্টে কিভাবে টাকা ঢুকেছে। সংবাদমাধ্যমের মুখ দিয়ে শুনলাম এই প্রথম।
হিঙ্গল গঞ্জের বিধায়ক দেবেশ মন্ডল বলেন, রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আদর্শ নিয়ে আমরা চলি। সিপিএম কংগ্রেস বিজেপি কর্মী সমর্থকরা যারা যারা টাকা পেয়েছেন, তারা কেউ ফেরত দিচ্ছে না। একমাত্র আমাদেরই দল দুর্নীতি প্রশ্রয় দেয় না। আমফানের দ্বিতীয় দফায় টাকা ঢোকার আগে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে রাজ্য প্রশাসন। এবং সঠিক তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। একুশের নির্বাচনের আগে তৃণমূল কংগ্রেস কোনোভাবেই এই দুর্নীতি প্রশ্রয় দেবে না। আর যারা আমাদের দলের নেতাকর্মীরা এই দুর্নীতির মধ্যে জড়িয়ে গেছে, তাদের কাউকে ছাড়া হবে না। কেননা এটা তৃণমূল কংগ্রেস, অন্যায় কে প্রশ্রয় দেয় না।