সুখবর বেঙ্গল সাফারি পার্কে, তিন শাবকের জন্ম দিল বাঘিনী শীলা
কৃষ্ণা দাস, শিলিগুড়ি: সুখবর বেঙ্গল সাফারি পার্কে। বুধবার ভোরবেলায় তিনটি ব্যাঘ্র শাবকের জন্মকে কেন্দ্র করে আপাতত খুশির হাওয়া বইছে সেখানে। শিলা যে ফের মা হতে চলেছে, সে খবর অবশ্য আগেই প্রকাশ্যে এসেছিল। জানা গিয়েছিল, সব ঠিকঠাক থাকলে চলতি মাসেই নতুন সদস্যের আগমন ঘটতে পারে পার্কে। হলও তাই। ভাই-বোনের সংখ্যা বাড়ল কিকা ও রিকার। পার্ক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে মা এবং তিন সন্তান সম্পূর্ণ সুস্থ রয়েছে। এখন মোট ৭টি রয়েল বেঙ্গল টাইগার রয়েছে বেঙ্গল সাফারি পার্কে। যা নিয়ে রীতিমতো উচ্ছ্বসিত পার্কে ডিরেক্টর ধর্মদেও রাই। পর্যটন মন্ত্রী গৌতম দেব জানান, করোনা আবহে এটা সত্যি খুব খুশির খবর। মূখ্যমন্ত্রীকে তিনি শাবক তিনটির কথা জানান। শুনে মূখ্যমন্ত্রীও খুব খুশি হয়েছেন।
দিন, পার্ক ডিরেক্টর আরও জানান, যেহেতু বাচ্চাগুলি সদ্যজাত, সবে আজই জন্ম গ্রহন করেছে তাই কেউই তাদের সামনে যাচ্ছে না। ফলে এই মুহূর্তে বাচ্চাগুলোর লিঙ্গ চিহ্নিত করা সম্ভব হয় নি। তবে মা সহ শাবকেরা প্রত্যেকেই ভালো আছে৷ শাবকেরা আপতত মাতৃ দুগ্ধ খাচ্ছে বলে জানান ধরমদেব রাই। তিনি আরও জানান, পার্ক কতৃপক্ষ ইতিমধ্যেই শীলা সহ শাবকদের বিশেষ নজরদারীতে রেখেছে। তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থাও নেওয়াও হচ্ছে। পর্যাপ্ত খাওয়া দাওয়া পানীয় সহ ইতিমধ্যেই চিকিৎসকদের নিয়মিত নজরদারিতে রয়েছে শীলা এবং বর্তমানে সদ্যজাত তিন শাবকেরা। সেইসঙ্গে পশুদের মাতৃকালিন অন্যান্য বিষয় গুলিকেও খুবই যত্ন সহকারে দেখাশোনা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
ওডিশার নন্দনকানন থেকে প্রথম বেঙ্গল সাফারি পার্কে নিয়ে আসা হয়েছিল রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার শিলা ও স্নেহাশিসকে। তাদের সন্তান কিকা ও রিকা বর্তমানে বেঙ্গল সাফারি পার্কের জঙ্গলে খেলে বেড়াচ্ছে। আরেক সন্তান ইকা জন্মের কিছুদিন পর মারা যায়। স্নেহাশিস এখন আলিপুর চিড়িয়াখানার বাসিন্দা। তার জায়গায় জামশেদপুর থেকে নিয়ে আসা হয় ভিভানকে। করোনা রুখতে লকডাউন চলায় সাফারি পার্ক এখন বন্ধ। তাই মানুষের যাতায়াত নেই। কাছাকাছি আসার জন্যও এই সময়টাকেই বেছে নেয় শিলা ও ভিভান। ফলস্বরূপ ফের সন্তান প্রসব করল শিলা। সাধারণত ১১০ দিনের মাথায় রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার তাদের শাবক প্রসব করে। এক্ষেত্রে কিছুটা আগেই প্রসব হল বলে মনে করা হচ্ছে। শুরুতে তিন শাবকের জন্ম দিয়েছিল শিলা। কিকা-ইকা-রিকা। তাদের দেখতে প্রচুর পর্যটকের ভিড় জমেছিল সাফারি পার্কে।
তিন নতুন সদস্যের আগমনে সাফারি পার্ক কর্তৃপক্ষ বেজায় খুশি। বনমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ও উচ্ছ্বসিত। এর আগেও অবশ্য তিনটি সন্তানের জন্ম দিয়েছে মা বাঘ শিলা। তবে এবার শিলার সঙ্গী কিন্তু অন্যজন। এর আগে স্নেহাশিসের সঙ্গে সুখের সংসার সেরেছে সে। ২০১৮ সালের ১১ মে-তে ওই দম্পতির তিন সন্তানের জন্ম হয়। ২ সেপ্টেম্বর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ওই তিন বাঘ শাবকের নামকরণ করে কিকা, রিকা এবং ইকা। কিন্তু ২৯ অক্টোবর শারীরিক দুর্বলতার কারণে মারা যায় ইকা। এরপর থেকেই বেঙ্গল সাফারিতে বাঘের কৃত্রিম প্রজনন সম্ভব কি না তা নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করেছে বন দফতর।
আরও পড়ুন: দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর দিঘা মোহনায় রুপোলী শস্য ইলিশ…দাম আকাশছোঁয়া
এখন একের পর এক রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের প্রজনন ঘটিয়ে ভবিষ্যতে বাঘ প্রজনন সেন্টার হিসেবে বেঙ্গল সাফারি পার্ক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে চলেছে বলেই মনে করছেন বনকর্তারা। গত কয়েক বছরে বেঙ্গল সাফারি পার্ক স্থানীয় মানু্ষ ও পর্যটকদের মন জয় করে নিয়েছে। পর্যটকরা উত্তরবঙ্গে বেড়াতে এলেই একবারটি ঢুঁ মারছেন এই পার্কে। করোনা পরিস্থিতির জন্য পার্ক বন্ধ থাকায় ভ্রমণপিপাসুদের মন খারাপ। পার্ক খুললেই ধীরে ধীরে কিকা-রিকার মতো নতুন অতিথিদেরও সামনে আনা হবে বলে জানানো হয়েছে। পার্কের ডিরেক্টর ধর্মদেব রাই বলেন, ”এই তিনটি শাবক ছেলে না মেয়ে তা এখনও জানা যায়নি। জানতে পারলেই তা প্রকাশ্যে আনা হবে। আপাতত তিনটি শাবক ও তাদের মাকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। ভালই আছে তারা।”
বছরের শুরুতেই স্নেহাশিসকে নতুন সংসার পাততে কলকাতার আলিপুর চিড়িয়াখানায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। স্নেহাশিস যেতেই কিছুটা মন মরা হয়ে গিয়েছিল শিলা। এদিকে প্রথম বাঘ প্রজননে সাফল্য লাভ করায় দ্বিতীয়বারের প্রস্তুতি শুরুর পরিকল্পনা করে ফেলেছিল পার্ক কর্তৃপক্ষ। কিন্তু স্নেহাশিসের পর শিলার সঙ্গে কে সংসার করবে তা নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিল তারা। সেসময় পার্কে আরেক পুরুষ বাঘ বিভান ছিল। তবে স্নেহাশিসের সময় অবশ্য বিভানকে খুব একটা পছন্দ হয়নি শিলার। কিন্তু এখন স্নেহাশিস না থাকায় বিভানকেই নিজের সঙ্গী হিসেবে মেনে নেয় শিলা। দুজনের বোঝাপড়ার জন্য প্রায় তিন মাস সময় লেগে যায়। প্রথমে তাদের পাশাপাশি দু’টি এনক্লোজারে এক মাস রাখা হয়। এরপর দু’জনকে নাইট শেল্টারে একসঙ্গে রাখা হয়েছিল। কিন্তু পুরো প্রক্রিয়াতেই নির্জন ও নিরিবিলি পরিবেশের প্রয়োজন হয়, তাই দম্পতিকে লোকচক্ষুর আড়ালে রাখা হয়েছিল। এরই মধ্যে করোনার জন্য লকডাউন জারি হলে পর্যটকহীন হয়ে যায় সাফারি পার্ক। এতে প্রজননে আরও বেশি সহায়ক পরিবেশ হয়ে যায়। প্রতিকূল আবহাওয়াতে দ্বিতীয়বারও বাঘ প্রজননে সাফল্য লাভ করায় খুশি বেঙ্গল সাফারি পার্ক।