তৃণমূল কর্মীর স্ত্রী’র মৃত্যুর ঘটনায় উত্তপ্ত বর্ধমান

প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়, বর্ধমান: মারধরে মৃত্যু হল এক তৃণমূল কর্মীর স্ত্রীর। মৃতার নাম সোমা পাল (৩০)। ঘটনাটি ঘটেছে পূর্ব বর্ধমানের গলসি ২ ব্লকের মহড়া গ্রামে। এই ঘটনা নিয়ে মহড়া গ্রামে রাজনৈতিক উত্তেজনার পারদ চড়েছে। মৃতের পরিবার ও এলাকার তৃণমূল নেতৃত্বের অভিযোগ বধূকে প্রাণে মারার ঘটনায় জড়িতরা সকলেই বিজেপি কর্মী। ক্ষমতা জাহির করতেই তারা বধূকে প্রাণে মেরেছে। যদিও বিজেপি নেতৃত্ব অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন। গলসি থানার পুলিশ বধূর মৃত্যুর ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে ।
মৃতার স্বামী চঞ্চল পাল পেশায় গাড়ি চালক। তাঁর অভিযোগ, শুক্রবার রাত ৮ টা নাগাদ স্থানীয় সাহেব ঘোষ, বিল্টু ঘোষ ও অমিত কেশ প্রমুখরা তাঁর বাড়িতে চড়াও হয়। তাঁকে রড় দিয়ে মারধর করে। ঘটনার সময় তাঁর স্ত্রী সোমা তাঁকে বাঁচাতে যায়।ওই সময়ে কোনও রকমে সেখান থেকে পালান। তখনই হামলাকারীরা চুলের মুঠি ধরে তাঁর স্ত্রীকে আছাড় মারে । বুকেও সজোরে লাথি মারে। মারধরে জখম হয়ে সোমা অচৈতন্য হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। প্রতিবেশীরা তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় আদড়াহাটী ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা সোমাকে মৃত ঘোষণা করেন।
চঞ্চল পাল জানিয়েছেন, ‘হামলাকারীরা সকলেই বিজেপি দলের সক্রিয় কর্মী। ঘটনার পর থেকে হামলাকারীরা সকলেই গা ঢাকা দিয়েছে। পুলিশ তাদের খোঁজ চালাচ্ছে। হামলা মারধরের কারণ প্রসঙ্গে চঞ্চল পাল বলে, ‘সাহেব ও বিল্টুকে গত বছর তিনি তাঁর জমি ভাগে দিয়েছিলেন। কিন্তু তারা ধানের সঠিক ভাগ দেয়নি বলে এবছর তাদের জমি ভাগে চাষকরতে দিতে রাজি হননি। তার বদলা নিতেই ওরা তাঁর স্ত্রীকে খুন করেছে।
চঞ্চল বলেন, ‘থানায় অভিযোগ জানালে তাঁকেও প্রাণে মেরে দেওয়া হবে বলে অভিযুক্তরা শনিবার সকালে ফের তাঁকে হুমকি দিয়ে যায়। তবুও ভয়ভীতি উপেক্ষা করে এদিন তিনি পুলিশকে ঘটনা সবিস্তার জানিয়েছেন।
গলসি ২ ব্লক তৃণমূল সভাপতি সুজন মণ্ডল বলেন, ‘মারধর করে বধূ সোমা পালকে প্রাণে মারার ঘটনায় জড়িত সাহেব ঘোষ, বিল্টু ঘোষ ও অমিত কেশ বিজেপির সক্রিয় কর্মী। ফসলের ভাগ ঠিকঠাক না দেওয়ায় বধূর স্বামী চঞ্চল পাল তাঁর জমি সাহেব ও বিন্টুকে আর ভাগে চাষ করতে দিতে রাজি হননি। তার বদলা নিতেই ওই বিজেপি কর্মীরা চঞ্চলের স্ত্রীকে নির্মম ভাবে হত্যা করেছে। সুজনবাবু দাবি করেছেন চঞ্চল তৃণমূল কংগ্রের একনিষ্ঠ কর্মী। দল চঞ্চল এবং তার পরিবারের পাশে রয়েছে।
আরও পড়ুন: বেঙ্গালুরু থেকে গুয়াহাটি আসার পথে রানওয়েতে হার্ড ল্যান্ডিং বিমানের, অল্পের জন্য রক্ষা
এলাকার বিধায়ক নবীনচন্দ্র বাগ ও জেলাপরিষদ সদস্য আপার্থিব ইসলাম ঘটনার কথা জানার পর এদিন চঞ্চলের বাড়িতে গিয়ে সমবেদনা জানিয়ে গিয়েছেন। নবীনচন্দ্র বাগ বলেন, ‘অবিলম্বে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূল শাস্তির দাবির কথা তাঁরা পুলিশকে জানিয়েছেন। যদিও সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বিজেপির বর্ধমান সদর জেলা সম্পাদক জয়দীপ চট্টোপাধ্যায়’। তিনি বলেন, ‘আসল ঘটনা হল বধূ সোমা পাল শারীরিক ভাবে অসুস্থ ছিলেন । তাঁর স্বামী চঞ্চল পাল মদ্যপ ব্যক্তি । ঘটনার দিন বধূর স্বামী মদ্যপ অবস্থায় বাড়ির সামনে চিৎকার চেঁচামেচি করছিলেন।তখন অসুস্থ সোমা ঘর থেকে বেরিয়ে আসতে গিয়ে মাথা ঘুরে পড়েযাবার পর স্ট্রোক হয়ে মারা যান। অথচ এই ঘটনা আড়াল করে ভোটের আগে তাঁদের দলের কর্মীদের মিথ্য মামলায় ফাঁসানোর চক্রান্ত করছে তৃণমূল’।