মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মদতে বিভাজনের রাজনীতি করে তৃণমূল: রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়

শুভেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়, আসানসোল: পশ্চিম বর্ধমান জেলার নটি বিধানসভা আসনই বিজেপি জিতবে। তাও বিপুল ভোটে। হিন্দু ও মুসলিম বিভাজনের রাজনীতি বিজেপি করে না। এইসব বিভাজনের রাজনীতি তৃণমূল কংগ্রেস করছে। তাও সেটা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের মদতে। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলছেন “সবকা সাথ সবকা বিকাশ”। জেলা বিজেপির তরফে আসানসোলের কোর্ট মোড়ে বুধবার সকালে “চায়ে পে চর্চা”য় যোগ দিয়ে এমনই মন্তব্য করলেন বিজেপির রাঢ়বঙ্গের পর্যবেক্ষক তথা রাজ্যের সহ-সভাপতি রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্য বিজেপির এই নেতাকে কড়া ভাষায় পাল্টা আক্রমণ করেছেন পশ্চিম বর্ধমান জেলার তৃনমুল কংগ্রেসের সভাপতি জিতেন্দ্র তেওয়ারি।
এদিন সাংবাদিকদের রাজু বন্দ্যোপাধ্যায় আরও বলেন, ‘বিজেপি একটা সর্বভারতীয় দল। তাই তো দলের নেতা ও কর্মীরা রাজ্যে আসেন। কিন্তু তাদেরকে বহিরাগত তকমা দেওয়া হয়। কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেস অন্য রাজ্য থেকে অবাঙালি প্রশান্ত কিশোরকে ৪০০/৫০০ কোটি টাকা নিয়ে এসেছে। সে কি? সে বহিরাগত নয়? রোহিঙ্গা বা বাংলাদেশী যাদের কাজ আমাদের দেশের ক্ষতি করা। সেইসব মানুষদের আমাদের করের টাকায় জামাই আদর করে রেখেছেন দিদি’।
এ দিন চায়ে পে চর্চা অনুষ্ঠানে আসানসোল উত্তর বিধানসভার থেকে বেশ কিছু সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে জেলা সভাপতি লক্ষণ ঘোড়ুইয়ের উপস্থিতিতে বিজেপিতে যোগদান করেন। তাদের হাতে বিজেপির পতাকা তুলে দেওয়া হয়।
মঙ্গলবার আসানসোলে এক সাংবাদিক বৈঠকে তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা যুব সভাপতি রূপেশ যাদব অভিযোগ করে বলেছিলেন, বিজেপি সিআইএসএফকে দিয়ে অবৈধভাবে কয়লা কারবার চালাচ্ছে।
এই প্রসঙ্গে রাজু বন্দ্যোপাধ্যায় সাংবাদিকদের এদিন বলেন, ‘এই ক্ষেত্রে সিবিআই তদন্ত করতে বলছেন না কেন ওনারা। এই এলাকার সব কয়লা মাফিয়াদের সাথে রাজ্যের শাসকদলের ওতপ্রোতভাবে যোগাযোগ রয়েছে। তার প্রমাণ আপনারা কিছু দিনের মধ্যেই পাবেন।আইন শৃঙ্খলা দেখার দায়িত্ব রাজ্য সরকারের। রাজ্য সরকার এভাবে দায় এড়িয়ে যেতে পারেন না। এখানে পুলিশ, তৃণমূল কংগ্রেস ও মাফিয়াদের যোগসাজশ রয়েছে। আর সেই কারণেই কয়লা ও বালি চুরি হয়। এই কয়লা ও বালির চোরাকারবার এদের সবার মদতে হয়’।
বাঁকুড়ায় আদিবাসী পরিবারে অমিত শাহ বাসমতি চালের ভাত খেয়েছেন। বাইরের থেকে খাবার সেই পরিবারের কাছে আনা হয়েছিলো বলে মঙ্গলবারই তৃণমূল কংগ্রেসের সুপ্রিমো মমতা বন্দোপাধ্যায় মন্তব্য করেছিলেন। এই প্রসঙ্গে এদিন তিনি বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী মিথ্যাচার করছেন। এ ব্যাপারে তিনি বিনামূল্যে করোনার চিকিৎসা প্রসঙ্গ টেনে আনেন। রাজু বন্দোপাধ্যায় বলেন, রাজ্যে একদিকে বলা হচ্ছে বিনামূল্যে করোনার চিকিৎসা চলছে। অন্যদিকে মানুষ সেই চিকিৎসার পরে ১৪-১৫ লক্ষ টাকার হাসপাতালের বিল সবার সামনে দেখাচ্ছেন’।
দলের জেলার যুব সভাপতি অরিজিৎ রায়ের বিরুদ্ধে ৩৬ জন মন্ডল সভাপতি মধ্যে ৩২ জন মন্ডল সভাপতির লেখা সর্বভারতীয় ও রাজ্যের নেতাদের একটি চিঠি দিন কয়েক আগেই প্রকাশ্যে এসেছে। যা নিয়ে বিজেপির অন্দরে শোরগোল পড়েছে। এই প্রসঙ্গে রাজু বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘এইসব তৃণমূল কংগ্রেসের কাজ । বিজেপির মন্ডল সভাপতিরা এমন কাজ করে না। তৃণমূল কংগ্রেস এটা ফেক নিউজ করে ছড়াচ্ছে। আমি তো এখানকার পর্যবেক্ষক হয়ে কিছুই জানি না’।
এদিন চায়ে পে চর্চা অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন রাজ্য কমিটির সদস্য কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায়, পবন সিং, বিবেকানন্দ ভট্টাচার্য, জেলার সাধারণ সম্পাদক শিবরাম বর্মন, যুব মোর্চার রাজ্য সম্পাদক বাপ্পা চট্টোপাধ্যায় , জেলা সহ-সভাপতি উপাসনা উপাধ্যায়।
আরও পড়ুন: আমেরিকায় আতঙ্ক… আমরা ডুবে যাচ্ছি, আকুল আর্তি মার্কিন চিকিৎসকের
এদিকে, রাজু বন্দোপাধ্যায়কে পাল্টা আক্রমণ করে জেলা তৃণমুল কংগ্রেসের সভাপতি জিতেন্দ্র তেওয়ারি বলেন, ‘কারা দেশে বিভাজনের রাজনীতি করছে, তা সবাই জানে। আমাদের কাছে সবাই সমান। যাদের কাছে তা নয়, তারাই হিন্দু ও মুসলমান দেখে। কয়লা চুরি ও কারবার সম্পর্কে জিতেন্দ্র তেওয়ারি বলেন, ‘২০১১ সালের পরে এই এলাকায় কয়লা চুরি বন্ধ হয়ে গেছিলো। ২০১৬ সালের পরে আবার তা শুরু হয়েছে। আমি তো বলছি সিবিআই কেন, আমেরিকা থেকে জর্জ বুশকে এনে তদন্ত করাক কেন্দ্র সরকার। তার আগে দেশের কয়লামন্ত্রীর পদত্যাগ করা উচিত। কেননা তিনি একজন মন্ত্রী হয়ে এই চুরি বন্ধ করাতে পারছেন না’।