ফ্রান্স দ্বন্দ্বে বিপদের মুখে তুরস্কের অর্থনীতি

আংকারা, (সংবাদ সংস্থা): ফ্রান্সসহ ন্যাটো জোটের মিত্রদের সঙ্গে তুরস্কের বিরোধের জের ধরে ডলারের অনুপাতে তুরস্কের মুদ্রার রেকর্ড পরিমাণ দরপতন হয়েছে। আর এই বিরোধে নতুন মাত্রা যোগ করেছে হজরত মুহাম্মদকে নিয়ে কার্টুন বিতর্ক।
সূত্রের খবর, গত মাসে তুরস্কের মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধি পেয়েছে ১১ দশমিক ৭ শতাংশ। বাজার বিশ্লেষকরা মনে করছেন লিবিয়া, সিরিয়া, সাইপ্রাসের আশেপাশে এবং ককেশাস অঞ্চলে তুর্কী প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের শক্তি প্রদর্শনের কারণে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীরা ক্ষুণ্ণ হয়েছে। যার প্রভাব পড়েছে তুরস্কের অর্থনীতিতে। এছাড়া সুদের হার বাড়ানোর বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অসম্মতির বিষয়টিও মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধির প্রধান কারণ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
কেননা তাদের যুক্তি, সুদের হার বাড়ানো হলে মুদ্রাস্ফীতি কম হতে পারে আর তুরস্কের মুদ্রা লিরা কিনতে উৎসাহিত করতে পারেন বিনিয়োগকারীরা। তা না হওয়ায় এই বিপর্যয়। তবে এক সাক্ষাৎকারে তুরস্কের এক আন্তর্জাতিকভাবে ব্যবসায়ী বলেন, তুরস্কের মুদ্রা লিরা দুর্বল হয়ে যাওয়ার পেছনে নতুন কারণ সংযুক্ত আরব আমিরশাহি ও আমেরিকার সঙ্গে তৈরি হওয়া ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা।
এই প্রসঙ্গে পিওতর ম্যাটিস নামে তুরস্কের একজন বিশ্লেষক বলছেন, তুরস্কের ব্যবসায়ীদের মধ্যে উদ্বেগ রয়েছে যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জো বাইডেন জয়ী হলে রাশিয়া থেকে এস-৪০০ (অ্যান্টি এয়ারক্রাফট) মিসাইল সিস্টেম কেনার কারণে বড় ধরণের নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে। পাশাপাশি তুরস্কের সঙ্গে ফ্রান্সের দ্রুত অবনতি হওয়া পারস্পরিক সম্পর্কের বিষয়টিও বাজারে উদ্বেগের কারণ বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
এদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিদেশ মন্ত্রকের পক্ষ থেকে তুরস্ক মিসাইল সিস্টেমটি চালু করলে নিরাপত্তার স্বার্থে গুরুতর পদক্ষেপ নেয়া হতে পারে বলে সতর্ক করা হয়েছে। অন্যদিকে, তুরস্কের সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্কের দিক দিয়ে সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান ইউরোপীয় ইউনিয়ন। কিন্তু সাইপ্রাসে গ্যাস অনুসন্ধানের উদ্যোগ নেয়ায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারা এরদোয়ানকে কড়া সতর্কবার্তা দিয়েছেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি সম্মেলনের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে, সংস্থাটি পূর্ব ভূমধ্যসাগরে তুরস্কের সাম্প্রতিক অনুসন্ধানমূলক কার্যক্রম উস্কানিমূলক এবং একতরফা। এই ঘটনায় ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ এরদোগানের সমালোচনা করেছেন।
তবে, এরদোগান ফরাসি প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে তার দেশের মুসলিমদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করার অভিযোগ তুলেছেন। এরপর আরব বিশ্বের সঙ্গে যোগ দিয়ে তিনি ফরাসী পণ্য বর্জনের আহ্বান জানিয়েছেন। উল্লেখ্য, এ বছর তুরস্কের মুদ্রা লিরা ২৬ শতাংশ মান হারিয়েছে এবং তুরস্ক জানিয়েছে মুদ্রার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে গত ১৮ মাসে তারা ১০ হাজার কোটি ইউরোর বেশি অর্থ ব্যয় করেছে।