মালদায় রাতের অন্ধকারে রেশন সামগ্রী পাচার করতে গিয়ে গ্রেফতার দুই
মিল্টন পাল, মালদা: করোনা সংক্রমণের জেরে দেশজুড়ে চলছে লকডাউন। এরই মধ্যে একদিকে রেশনের চাল চুরি অন্যদিকে রেশন ডিলারের বিরুদ্ধে অভিযোগ গ্রামবাসীদের। চাল চুরির ঘটনায় ইতিমধ্যে তদন্তে নেমে পুলিশ দু’জনকে গ্রেফতার করেছে। ঘটনা তদন্তে নেমেছে পৃথক দুটি থানার পুলিশ।
প্রথম ঘটনাটি ঘটেছে মালদার হবিবপুর থানা ঘোষ পাড়া এলাকায়। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, করোনা সংক্রমণ জেরে দেশজুড়ে চলছে লকডাউন। এই পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে বিনামূল্যে রেশন সামগ্রী দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। লকডাউনের মধ্যে রেশন বন্টন নিয়ে মালদা জেলার একাধিক গ্রামে কম সামগ্রী দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে রেশন ডিলারের বিরুদ্ধে। শুক্রবার ভোররাতে গ্রামের বাসিন্দারা দেখতে পান একটি পিকআপ ভ্যানে করে রেশন ডিলারের বাড়ি থেকে রেশনের সামগ্রী নিয়ে পাচার করছে। সেই সময় গাড়িটিকে আটক করে গ্রামের বাসিন্দারা।
দেখা যায়, গাড়ির ভেতরে রেশনের চাল বস্তা ভর্তি করে পাচার করা হচ্ছে। গাড়িটিকে আটকে হবিবপুর থানার পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। পুলিশ এসে চালক, খালাসিকেকে আটক করে। ধৃতদের নাম খোকন ঘোষ ও সুদীপ্ত পাল।
ওই গ্রামের বাসিন্দা বিথী কর্মকার বলেন, এই লকডাউন পরিস্থিতিতে মানুষ খাদ্য সামগ্রী পাচ্ছে না। রেশন ডিলারের কাছে রেশন আনতে গেলে তাঁরা জানাচ্ছেন যে পরিমাণ রেশন সামগ্রী দেওয়ার কথা সঠিক পরিমাণে দেওয়া হচ্ছে। আমরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখতে পাচ্ছি কার্ড প্রতি সঠিক রেশন দেওয়া হচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে ওই ডিলারের বাড়ি থেকে রাতের অন্ধকারে বস্তাবন্দি চাল গাড়িতে করে পাচার করা হচ্ছিল। আমরা চাই এর সঠিক তদন্ত করা হোক। যাতে মানুষ সঠিক পরিমাণে খাদ্য সামগ্রী পায়।
হবিবপুর ব্লক উন্নয়ন আধিকারিক শুভজিৎ জানা বলেন, ওই সামগ্রী রেশন ডিলারের কিনা সেটা তদন্ত করা হচ্ছে। ঘটনায় গাড়ি সহ দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে এই ঘটনার সঙ্গে যেই যুক্ত থাকুক না কেন তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা ইতিমধ্যেই বাজারগুলি পরিদর্শন করেছি।যাতে কোনওভাবেই রেশন সামগ্রী বাজারে বিক্রি করা না হয়।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, চালক, খালাসি গ্রেফতার করা হয়েছে। ঘটনা তদন্ত শুরু হয়েছে। ঘটনার পর থেকেই অভিযুক্ত রেশন ডিলার গা ঢাকা দিয়ে রয়েছে। তাদের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে।
অন্যদিকে মালদা বৈষ্ণবনগর থানার ভগবানপুর এলাকায় কম পরিমাণে রেশন সামগ্রী দেওয়া হচ্ছে বলে গ্রামের বাসিন্দারা অভিযোগ জানান। বিষয়টি নিয়ে রেশন ডিলার আসরাফুল শেখকে বলা হলেও সে কোনও কর্ণপাত করছে না। উল্টে গ্রামবাসীদের ওপর রেশন ডিলারের দুষ্কৃতীরা হুমকি দিচ্ছে।
গ্রামের বাসিন্দা সাদ্দাম সেখ বলেন, রেশন ডিলার আশরাফুল শেখ সঠিক পরিমাণে রেশন সামগ্রী দিচ্ছেন না। যাদের দশটি কার্ড রয়েছে তাদেরকে পাঁচটি কার্ডের রেশন সামগ্রী দেওয়া হচ্ছে। কিছু বলতে গেলেই আশরাফুল শেখের লোকজনকে দিয়ে গ্রামবাসীদেরকে হামলা চালানো হচ্ছে।
এদিন সকালে রেশন ডিলারের বাড়িতে গেলে গ্রামবাসীদের ওপর লাঠি নিয়ে হামলা চালায়। ইতিমধ্যেই আমরা গোটা ঘটনা জানিয়ে বৈষ্ণবনগর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গোটা ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে বৈষ্ণবনগর থানার পুলিশ।
মালদা জেলা পরিষদের সভাধিপতি গৌর চন্দ্র মন্ডল জানান, যেখানেই রেশন নিয়ে দুর্নীতি হচ্ছে তার বিরুদ্ধে প্রশাসন ব্যবস্থা নিচ্ছে।এর বিরুদ্ধে যদি দোষ প্রমাণিত হয় তাহলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।