স্কুল শিক্ষকের নজিরবিহীন প্রচেষ্টা, এলাকায় পড়ানোর পাশাপাশি দেওয়া হল মিড ডে মিলও

শুভেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়, আসানসোল: চারমাসেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে সরকারি স্কুল বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। আধুনিক প্রযুক্তির সৌজন্যে বেসরকারি ইংরাজি মাধ্যম স্কুলের পড়ুয়ারা অনলাইনে পড়াশোনা করছে। বলতে গেলে সেইদিক থেকে পড়াশোনা শিকেয় উঠেছে সরকারি স্কুলগুলিতে। এমন পরিস্থিতিতে ঘরে বসে না থেকে, আদিবাসী প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক দীপনারায়ন নায়েক নিজের উদ্যোগে পাড়ায় পাড়ায় গিয়ে স্কুলের পড়ুয়াদের একজোট করে পড়াশোনা করাচ্ছেন। সোশ্যাল ডিস্টেন্স বা শারিরীক দূরত্ব বজায় রেখে, মুখে মাস্ক দিয়ে, হাত স্যানিটাইজার দিয়ে প্রতিদিনই চলছে এই।
পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোলের জামুড়িয়ার তিলকা মাঝি আদিবাসী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক দীপনারায়ণ নায়েক। তিনি জামুড়িয়ার জবা গ্রামের শিমূলিয়া পাড়ার পড়ুয়াদের এইভাবেই পাঠ দিচ্ছেন। শুধু পড়াশোনা করানোই নয়, নিজের উদ্যোগে দীপনারায়নবাবু মিড ডে মিলের পরিবর্তে, এইসব পড়ুয়াদের জন্য পাউরুটি, কলা, ডিম ও মিষ্টি সহ টিফিনেরও ব্যবস্থা করছেন। খোলামাঠে, পাড়ার ফাঁকা রাস্তায়, বাগান ও মন্দির এলাকায় সোমবার থেকে শুক্রবার সপ্তাহে ৫ দিন চলছে একবারে ক্লাসের মতো করে দীপনারায়ণবাবু পড়াচ্ছেন। বাংলা, ভূগোল, ইতিহাস ও অঙ্কের পাশাপাশি শরীর চর্চার ক্লাসও নিচ্ছেন দীপনারায়ণবাবু। জামুড়িয়ার বোগরার শিমুলিয়া পাড়ার পাশাপাশি কাঁঠাল পাড়া, মালতি পাড়া, বাউরি পাড়া, নীচু জবা পাড়া, ওপর জবা পাড়ায় গেলেই দেখা যাবে পড়ুয়াদের নিয়ে চলছে লক ডাউনের জন্য বিশেষ ক্লাস। আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া এই পড়ুয়াদের প্রয়োজনীয় শিক্ষা সামগ্রী হিসাবে পেন, পেনসিল, খাতাপত্রও তুলে দিচ্ছেন এই শিক্ষক।
শিক্ষক দীপনারায়ণ নায়েক বলেন, এই করোনার আবহের মধ্যেও সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ যেমন চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশ, এমনকি সাফাই কর্মীরাও ঘরে বসে নেই। সবাই নিজেকে করোনার সংক্রমণ থেকে সুরক্ষিত রেখে সমাজের প্রতি নিজের নিজের দায়িত্ব পালন করছেন। এই অবস্থায় একজন শিক্ষক হয়ে তো আমি ঘরে বসে থাকতে পারিনা। যখন সরকার আমাকে মাস গেলে সময়ে বেতন দিয়ে দিচ্ছে, সেখানে আমার কর্তব্য ও দায়িত্ব বলে তো কিছু রয়েছে। সেই কাজটাই আমি করছি। এইসব পড়ুয়াদের অভিভাবকরাও শিক্ষকের উদ্যোগে খুব খুশি। তারা বলেন, গত তিন মাস ধরে এই শিক্ষকের এই প্রচেষ্টা দেখে আমরাও অভিভূত হয়েছি। মাঝে মাঝে আমরাও কমিউনিট কিচেন করে পড়ুয়াদের মিড ডে মিলের ব্যবস্থা করছি। শিক্ষা ক্ষেত্রে শিক্ষকের এই ভূমিকা এক অনন্য নজির সৃষ্টি করছে জামুড়িয়ায়। পশ্চিম বর্ধমান জেলা প্রশাসন ও শিক্ষা দপ্তরও দীপনারায়ন নায়েকের এই প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানিয়েছে।