গুরুত্বপূর্ণপশ্চিমবঙ্গহেডলাইন
সামনেই ভোট, বীমাহীন সমস্ত রাজ্যবাসীদের জন্য স্বাস্থ্যসাথী, ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর

নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: সরকারি প্রকল্প হোক অথবা মানুষের আবেগ, বিধানসভা ভোটের আগে রাজ্যবাসীদের মন জয় করতে চেষ্টার কসুর করতে বাকি রাখছেন না মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার নবান্নে বিশেষ সাংবাদিক বৈঠকে গরীব মানুষের জন্য চালু হওয়া স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্পকে এ বার সার্বজনীন করার কথা ঘােষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। স্বাস্থ্য বীমার আওতায় না থাকা রাজ্যের সমস্ত পরিবারকে এই প্রকল্পের আওতায় ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিমার সুযােগ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে ব্যক্তি পিছু নয়, পরিবার পিছু এই প্রকল্পের সুবিধা দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত, রাজ্যে স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্প বহুদিন যাবৎ চালু হয়েছে।কিন্তু দারিদ্র্যসীমার নিচে থাকা পরিবার ছাড়া সেই প্রকল্পের সুবিধা সব পরিবার পেত না। আর সে রকমই রাজ্যের সাড়ে সাত কোটি পরিবারকে স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্পের আওতায় আনার লক্ষ্য ছিল সরকারের। কিন্তু দারিদ্র্যসীমার নিচে এবং ওপরে থাকা দুই শ্রেনীর মানুষ জনকেই এই প্রকল্পের আওতাভুক্ত করলে আরও আড়াই কোটি মানুষকে এই প্রকল্পের আওতায় আনা হবে। অর্থাৎ শুধুমাত্র দারিদ্রসীমা নয়, বীমা না থাকা পরিবাররা এই প্রকল্পের সুবিধা পেতে পারবেন।
তবে উল্লেখযোগ্য হল, গৃহকত্রীর নামে সেই কার্ড ইস্যু করবে সরকার। রাজ্যের মহিলাদের মন জয় করার লক্ষ্যে রাজ্য প্রশাসনের এই প্রচেষ্টা বলে মনে করছেন অনেকেই। মাথা পিছু ৫ লক্ষ টাকা বিমা নয়, পরিবার পিছু ৫ লক্ষ টাকা বিমা। কোন এক সময় পরিবারের কোনও এক সদস্যের জন্য পুরাে বিমার টাকা অর্থাৎ ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত চিকিৎসার সুবিধা নেওয়া যাবে। আর পুরোটাই হবে ক্যাশলেস প্রক্রিয়াতে।
মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, সরকারি হাসপাতাল ছাড়াও দেড় হাজার বেসরকারি হাসপাতাল বা নার্সিংহােমকে এর আওতায় এম প্যানেল করা হয়েছে। দুয়ারে দুয়ারে গিয়ে বা ব্লক ক্যাম্পেনিং করার সময় জনসাধারণের কাছে তথ্য নেওয়া হবে। তারপর যথাসময়ে কার্ড পৌঁছে দেওয়া হবে। আর এভাবেই বিধানসভা নির্বাচনের আগে জনসংযোগের প্রক্রিয়ায় ফেলা ফেলা সম্ভব হবে বলে মত রাজনৈতিক মহলের। অন্যদিকে রাজ্যে স্বাস্থ্য প্রকল্পের সুবিধাভুক্ত হয়ে জনসাধারণ বিরোধীপক্ষের দিকে ভোট দেবেন না এমনটাই আশা শাসকদলের।
যদিও বিজেপির দাবি, কেন্দ্রীয় সরকারের আয়ুষ্মন ভারত প্রকল্পের আওতায় সার্বজনীন স্বাস্থ্য বিমার সুবিধা দু’বছর আগে শুরু হয়েছে। ভােটের আগে ঠ্যালায় পড়ে এই প্রকল্প চালু করছে রাজ্য সরকার। এটা সম্পূর্ণ ভোটের আগে নির্বাচনী গিমিক। এর আগে রাজ্য সরকারের বহু প্রকল্প যেমন কন্যাশ্রী রূপশ্রী যুবশ্রী প্রকল্পের আওতাভুক্ত হল অনেকেই সেই সুবিধা কিছুদিন পাওয়ার পর পরবর্তীকালে পাননি। তাই মমতার এই নির্বাচনী ঘোষণায় জনসাধারণ বিশ্বাস করবেন না।
একইসঙ্গে এদিন নেতাজির জন্ম শতবর্ষ উদযাপন সংক্রান্ত আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। কিছুদিন আগেই নেতাজির জন্ম শতবর্ষে জাতীয় ছুটি এবং কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে সমস্ত তথ্য প্রকাশ করার জন্য নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি লিখেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবার নেতাজির জন্ম শতবর্ষ বর্ষব্যাপী উদযাপনের জন্য এক বিশেষ কমিটি গঠন করলেন মুখ্যমন্ত্রী।এই কমিটির চেয়ারম্যান মনোনীত হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এছাড়াও, নোবেলজয়ী অমর্ত্য সেন, অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় এই কমিটিতে রয়েছেন। এর পাশাপাশি, নেতাজি পরিবারের সুগত বসু, সুমন্ত্র বসু ও অমিত মিত্র থাকছেন এই কমিটিতে। এছাড়াও শঙ্খ ঘোষ, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত, যোগেন চৌধুরী, জয় গোস্বামী, সুবোধ সরকার, ব্রা্ত্য বসু, আবুল বাশার থেকে শুরু করে কলকাতা, যাদবপুর, প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, রাজ্যের মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, অর্থসচিব, ডিজি, রাজ্যের নিরাপত্তা উপদেষ্টা, কলকাতা পুলিশের সিপি-সহ একগুচ্ছ ব্যক্তিত্ব।
বিজেপির নাম না করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এখন অনেকেই নিজের ইচ্ছেমতো ইতিহাস তৈরি করাচ্ছে। যাঁরা স্বাধীনতা আন্দোলনের বিরোধিতা করেছিলেন, রাজনৈতিক রঙ লাগিয়ে তাঁদের এগিয়ে দেওয়া হচ্ছে। যাঁরা স্বাধীনতা আন্দোলন করেছিলেন, তাঁদের ভুলিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সাধারণ মানুষ এটা ভালভাবে নিচ্ছেন না।’ রাজ্যের মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘নেতাজির জন্মজয়ন্তী নিয়ে এই কমিটি শীঘ্রই বৈঠকে বসবে। আগামী এক বছর ধরে এই নিয়ে অনুষ্ঠান চলবে। তাঁর মানসিকতা, কথা সবই ব্লক স্তর পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়াই সরকারের লক্ষ্য।” আর নেতাজি আবেগকে হাতিয়ার করেই সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছতে চাইছে শাসক দল তৃণমূল।