গ্রামে ফিরতেই বর্বরোচিত আক্রমনের শিকার! প্রতিবাদে কাজ বন্ধ মেদিনীপুর করোনা হাসপাতালের যোদ্ধাদের

তারক হরি, পশ্চিম মেদিনীপুর: দিন রাত এক করে করোনা আক্রান্তদের সেবায় যারা নিজেদের নিয়োজিত করছেন তাঁদেরই বেধড়ক মার খেতে হল নিজেদেরই গ্রামের কিছু লোকজনদের হাতে। ঘটনাটি ঘটেছে বৃহস্পতিবার বিকেলে মেদিনীপুর কোতয়ালি থানার অন্তর্গত কুলদা গ্রামে। মেদিনীপুর শহরের এই করোনা হাসপাতালে অস্থায়ী কর্মী হিসেবে বেশিরভাগই মেদিনীপুর সদর ব্লকের কুলদা এলাকার মানুষ। পূর্বে করোনা হাসপাতালে কাজ করার জন্য এই কুলদা গ্রামের কিছু পরিবারকে সামাজিক বয়কট করা হয়েছিল। পরে পুলিশ, প্রশাসন ও স্বাস্থ্য দফতরের উদ্যোগে আলোচনা করে সেই সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করা হয়েছিল।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় পনেরো দিন বাদে বৃহস্পতিবারই ছুটি নিয়ে গ্রামের বাড়ি ফিরেছিলেন করোনা হাসপাতালের কয়েকজন অস্থায়ী কর্মীরা, কিন্তু তাতেই আপত্তি জানায় গ্রামের বেশ কিছু মানুষ। সেই ব্যক্তিরা জানান, তাঁদের গ্রামে থাকতে দেওয়া হবেনা বলে বচসা শুরু হয়ে যায়। ঘটনায় আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন স্বাস্থ্যকর্মী। ওই আক্রমণকারীদের হাত থেকে স্বাস্থ্যকর্মীদের রক্ষা করতে গিয়ে পরিবারের সদস্যরাও আক্রান্ত হয়েছেন।
এক স্বাস্থ্যকর্মী শেখ সাহাজুদ্দিন বলেন, “গ্রামে ঢুকতেই ওরা কয়েকজন আমাদের ঘিরে ধরে। বলে গ্রামে ঢোকা যাবেনা। আমরা বলি কেন গ্রামে থাকতে পারব না? বচসা শুরু হয়ে যায়। এরমধ্যেই ওরা লাঠি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। আমাকে মারার পাশাপাশি হুশেন আলি, হাসপাতালের নিরাপত্তারক্ষী সাত্তার এবং তাঁর মা’কে মারধোর করেছে। ওদের দাবি, গ্রামে থাকতে হলে হাসপাতালের কাজ ছাড়তে হবে।”
হাসপাতালে অস্থায়ী কর্মী সরবরাহকারী ঠিকাদার শেখ জিয়াউদ্দিন বলেন, “গ্রামের জনা পাঁচেক ছেলে শেখ নাসের আলি, শেখ লুকুমুদ্দিন, হাজাঙ্গীর, শেখ ইমামুদ্দিন এরাই মারধর করছে। যারা নিজেদের জীবন বাজি রেখে করোনা হাসপাতালে পরিষেবা দিচ্ছেন তাঁদেরকে এভাবে হেনস্থা, মারধর মোটেই ভালো কাজ করেনি।” এদিকে আট নয় মাস পেরিয়ে গেলেও শিকেয় উঠেছে করোনা সচেতনতা। কোথাও কোথাও মানুষজন অবাধ ঘোরাফেরা করছে, ন্যূনতম স্বাস্থ্য সচেতনতা নেই, সেখানে যারা করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করছেন, নিজেদের পদে পদে বিপজ্জনক মুহূর্তে থেকেও মানুষের সেবা করছে তাদের এভাবে হেনস্থা কাম্য নয়।
ঘটনায় আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন স্বাস্থ্যকর্মী সহ তাদের পরিবারের সদস্যরা। তাঁদের মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়েছে। ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়ার পরই তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে ঘটনার পরই মেদিনীপুর করোনা হাসপাতালে আপাততঃ কাজ বন্ধ করে বিক্ষোভ শুরু করেছেন ৫০ জনেরও বেশি অস্থায়ী কর্মী। দোষীদের গ্রেফতার করা না হলে তাঁরা কেউই কাজে যোগদান করবেন না বলে জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে জেলার উপ মুখ্যস্বাস্থ্য আধিকারিক সৌম্যশঙ্কর সারেঙ্গি বলেন, “ঘটনার কথা শুনেছি। বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়েছে। পুলিশ নিশ্চয়ই ব্যবস্থা নেবে। হাসপাতালের কর্মীরা কাজ বন্ধ করে দিলে রোগীদের পরিষেবার ক্ষেত্রে বড় সমস্যা হবে। আমরা কর্মীদের সঙ্গেও কথা বলছি, যাতে পরিষেবা চালু থাকে।”