বাংলায় ৮ হাজার পুরোহিত কি তৃণমূলের ক্যাডার! প্রশ্ন ভিএইচপির

রক্তিম দাশ, কলকাতা: বাংলার ৮ হাজার পুরোহিতকে মাসিক একহাজার টাকা ও বাড়ি দেবেন বলে ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর এই ঘোষণায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ প্রশ্ন তুলেছে, এই ৮ হাজার পুরোহিত কি তৃণমূলের ক্যাডার! একুশের কথা মাথায় রেখে হিন্দু ভোটকে নিজেদের দিকে টানতে তৃণমূলের এই দূরঅভিসন্ধি বলে অভিযোগ করেছেন তাঁরা।
পুরোহিত ভাতার সমলোচনা করে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের পূর্ব ক্ষেত্রর সাংগঠনিক সম্পাদক স্বপন মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘আমার দিদি ইমাম ভাতা দিয়ে চরম ভুল করেছিলেন। সেটা ছিল তুষ্টিকরণ। সেই ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করতে গিয়ে আবার ভুল করলেন। উনি ৮ হাজার পুরোহিত বলেছেন। সেটা বাংলা জুড়ে ৮ হাজার না ৮ লাখ! এর কি কোনও সার্ভে করা হয়েছে? এদিয়ে তৃণমূলের ক্যাডারদের টাকা পাইয়ে দেওয়া হবে ভোটের মুখে। বাড়ি করার নামে কাটমানি তোলা হবে। যদি এই টাকা দুঃস্থ পুরোহিতদের কাছে যেত আমাদের আপত্তি ছিল না। কিন্তু তাতো হবে না। সামনে ২০২১। এরকম নাটক উনি আরও করবেন। এটা সেই নাটকের একটা অংশ। উনি যা ভুল করে গেলেন ২০২১ তার প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে উনাকে। হিন্দু-মুসলমান বিরোধ লাগানোর আরও একটা চক্রান্ত। এসব করে সমাজের কল্যাণ হয় না।’
বঙ্গীয় পুরোহিত সভার সদস্য চুনিলাল চক্রবর্তী অভিযোগের সুরে বলেন, ‘যখন ইমাম ভাতা চালু হল তখন কেউ আমাদের কথা বলেননি। আজ কেন দেওয়া হবে? কী কারণে দেবেন? লকডাউনের সময় আমাদের তো কেউ খোঁজ নেয়নি। আজ কেন পুরোহিতদের জন্য দরদ উথলে উঠল? এটা ভোট কেনার জন্য করা হল। হিন্দু শাস্ত্রে আছে পুরোহিতরা দান গ্রহণ করেন না। আমরা ভিক্ষা করি না। যজমানরা আমাদের দান নয় দক্ষিণা দেন।’
বিশ্ব হিন্দু পরিষদের পূর্ব ক্ষেত্রর সম্পাদক অমিয় সরকার বলেন, ‘বাংলায় মন্দিরে আগুন লাগছে। বিগ্রহ ভেঙে দেওয়া হচ্ছে। সেগুলো দেখছেন না। এতদিন পুরোহিত ভাতার কথা মনে পড়েনি। ভোটের সময় মনে পড়ল। মনে রাখতে হবে টাকা-পয়সা দিয়ে রাজধর্ম পালন হয় না।’
আরএসএসের দক্ষিণবঙ্গ প্রান্তকার্যবাহক জিষ্ণু বসু বলেন, ‘যেখানে হিন্দুদের অস্তিত্বই বিপন্ন। সেখানে এধরণের ফাজলামো হিন্দুদের অপমান করা। পুরোহিতের ব্যবস্থা সমাজ করে, একথা রবীন্দ্রনাথ তাঁর স্বদেশি সমাজে বলেছেন। এটা সরকারের কাজ নয়। সরকারের কিছু করার থাকে তাহলে নদিয়ার মারু হাজরা-শান্তনা হাজরার ঘর তৈরি করে দিন। যাঁদের ঘর জেহাদিরা ভেঙে দিয়েছে। গতবছর সন্দেশখালিতে খুন হওয়া প্রদীপ আর দেবদাসের পরিবারকে দিন। প্রদীপের বিধবা স্ত্রীর দায়িত্ব সরকার নিক। এসব ভাতার কথা বলে সরকার জাতপাতের রাজনীতি করছে। সমাজকে ভাঙার চেষ্টা করছে।’
আরও পড়ুন:বাগবাজার গঙ্গার ঘাটে শহিদ বিজেপি কর্মীদের স্মৃতিতে তর্পণ অনুষ্ঠান বিজেপির
বিজেপির ক্ষমতায় আসার ভূত দেখছে তৃণমূল, বলে মনে করেন শিক্ষাবিদ তথা পদ্মশ্রী কাজি মাসুম আখতার। তিনি বলেন, ‘তৃণমূলের বিরুদ্ধে সংখ্যালঘু তোষণের রাজনীতির অভিযোগ উঠছে। তাই একুশে হিন্দু ভোট বিজেপির দিকে চলে যেতে পারে। হিন্দু ভোট নিতে হবে, যেভাবে মুসলিম ভোট নিতে ইমাম ভাতা দেওয়া শুরু হয়েছিল তাই এই ঘোষণা। ইমামদের মাসিক ভাতার থেকে পুরোহিতদের কম টাকার ঘোষণা করে বৈষম্য করা হল কেন? পুরোহিতদের বাড়ি দিলে, ইমামরাও চাইবেন। ধর্মকে কেন্দ্র করে এই রাজনীতি কিন্তু বুমেরাং হবে।’