মণীশ হত্যায় হোয়্যাটসঅ্যাপ চ্যাট ফাঁস, ফাঁসানো হচ্ছে অর্জুনকে, চ্যাট প্রকাশ্যে আসতেই তোলপাড় পুলিশের অন্দরমহল

নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: পুলিশ হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের চ্যাট ফাঁস নিয়ে রীতিমত তোলপাড় শুরু হল রাজ্য পুলিশের অন্দরে। কিছুদিন আগে অর্জুন সিং এক হোয়্যাটসঅ্যাপ চ্যাটের স্ক্রিনশট দেখান সাংবাদিকদের। ওই চ্যাট দেখিয়ে ব্যারাকপুরের বিজেপি সাংসদ দাবি করেন, মণীশ শুক্ল খুনে তাকে ফাঁসানোর চেষ্টা হচ্ছে। যদিও সেই মুহূর্তে ওই চ্যাট জাল বলে দাবি করেছিলেন রাজ্য পুলিশের একাধিক শীর্ষ আধিকারিক।
কিন্তু বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজ্য পুলিশের একাধিক হোয়্যাটসঅ্যাপ গ্রুপ ভেঙে দেওয়া শুরু হলে ফের সেই বিতর্কই মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। সিআইডি সূত্রে খবর, ইতিমধ্যেই পুলিশের একাধিক হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ভেঙে দেওয়া হয়েছে। আধিকারিকদের সন্দেহ, গ্রুপের কোনও সদস্যই ফাঁস করেছেন ওই চ্যাট। আবার তারা দাবি করছেন, কেউ জাল একটি স্ক্রিনশট বানিয়েছে। জাল যদি হয়, তা হলে ঘটনার পরেই কেন ওই সমস্ত গ্রুপ ভেঙে দেওয়া হল, তার কোনও উত্তর দেননি রাজ্য পুলিশের আধিকারিকরা।
আসলে রাজ্য পুলি়শের তদন্তকারী আধিকারিকরা এখন নিজেরাই একে অপরের ওপর বিশ্বাস রাখতে পারছেন না, এমনটাই অভিযোগ উঠেছে। এখন থেকে বিধানসভা ভোটের জল মাপতে শুরু করে গোপনে বহু বিজেপি নেতার সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে শুরু করে দিয়েছেন অনেকেই। তাদেরই কেউ নিয়মিত অর্জুন সিংয়ের কাছেও পুলিশ হোয়্যাটসঅ্যাপ গ্রুপের অন্দরের খবরও পাচার করছেন, এমনটাই সন্দেহ করছেন আধিকারিকরা। এরকম চললে পুলিশের যে কোনও পদক্ষেপ আগে থেকে জেনে সতর্ক হয়ে যাবেন অনেকেই। একই সঙ্গে ভুল বার্তা পৌঁছবে জনসাধারণের কাছেও।
অর্জুন সিং তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যোগদানের পরেই ১ বছরে ৯৩ টা মামলা দায়ের হয়েছে ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটে।
ওই চ্যাট প্রকাশ্যে এনে অর্জুন সিংয়ের দাবি, মণীশ খুনে তাকে ফাঁসানোর চেষ্টার এটাই প্রত্যক্ষ প্রমাণ। ওই গ্রুপের সকল সদস্য রাজ্য পুলিশের ১৯৯৮ ব্যাচের আধিকারিক। কেউ বর্তমানে সিআইডিতে, আবার কেউ বর্তমানে দক্ষিণ ২৪ পরগনা বা উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন থানা বা জিআরপিতে কর্মরত। ওই চ্যাটে এক আধিকারিককে মন্তব্য করতে দেখা গিয়েছে, ‘শুনছি চার্জশিটে অর্জুনের নাম আছে, খবর পেলাম’। তার জবাবে অন্য এক আধিকারিক লিখেছেন, ‘ওটা তো রাখতেই হবে’। সেই সঙ্গে হাসির ইমোজি। এর পরেই মন্তব্য করা হয়েছে এক আধিকারিক সম্পর্কে, তিনি আবার মণীশ খুনের মামলায় যুক্ত। সিআইডি সূত্রে খবর, অর্জুন ওই চ্যাট প্রকাশ করার পরেই শোরগোল পড়ে যায় গোয়েন্দা সংস্থার অন্দরমহলে।
রাজ্য পুলিশের এক শীর্ষ কর্তা এবং সিআইডির এক কর্তা ওই আধিকারিকদের কাছে ব্যাখ্যা চান, কী ভাবে এ রকম চ্যাট প্রকাশ্যে এল? সূত্রের খবর, রাজ্য পুলিশের ১৯৯৮ ব্যাচের আধিকারিকদের প্রায় সবাই রয়েছেন ওই হোয়াটস্অ্যাপ গ্রুপে। এক আধিকারিক বলেন, ‘‘১৯৯৮ সালের আধিকারিকদের ওই গ্রুপ থেকেই এর আগে আরও এক বার চ্যাট ফাঁস হয়েছে।” তবে এভাবে পুলিশের চ্যাট প্রকাশ্যে চলে আসায় অস্বস্তিতে পুলিশমহলও। সূত্রের খবর, প্রশাসনের সর্বোচ্চ স্তর থেকে আইপিএস-দেরও সতর্ক করা হয়েছে। কে বা কারা এভাবে পুলি়স বিভাগের মধ্যে থেকে বিরোধী রাজনৈতিক দলকে সাহায্য করছেন, তা খুঁজতে অন্তর্তদন্ত শুরু হয়েছে রাজ্য পুলিশের অন্দরমহলে।