বিদ্যালয় চত্বরে তামাকে রাশ টানবে কে? বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবসে উঠছে প্রশ্ন
শান্তনু অধিকারী, সবং: বিদ্যালয় স্তর থেকেই তামাক বিরোধী প্রচারকে জোরদার করে তুলতে রয়েছে আইন। রয়েছে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই দেওয়াল লিখন। বিদ্যালয়ের ১০০ গজ বৃত্তের মধ্যে তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি কিংবা সেবন সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। সেই আইন ভাঙার জন্য রয়েছে শাস্তির নিদানও। কিন্তু কার্যত দেখা যায় সেই আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বিদ্যালয় সংলগ্ন দোকানগুলিতে ধূমপায়ী কিংবা তামাকপ্রেমীদের রমরমা। বিশ্বজুড়ে তামাক বিরোধী সচেতনতা গড়ে তুলতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ৩১ মে দিনটি বিশ্ব তামাক মুক্ত দিবস হিসেবে পালন করে আসছে ১৯৮৭ থেকে। আজ সেই বিশ্বতামাক মুক্ত দিবসেই তাই উঠছে প্রশ্ন― বাস্তবে কতখানি সার্থক হয়েছে সেই আইন?
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক সবংয়ের ৪নং অঞ্চলের একটি উচ্চতর মাধ্যমিক স্কুলের প্রধানশিক্ষক জানালেন, ‘আদৌ না। শুধুমাত্র দেওয়ালে লিখে স্কুলের ১০০গজের মধ্যে ধূমপান বন্ধ করা যায় না।’ প্রসঙ্গত তাঁর স্কুলের প্রবেশপথের সামনেই রয়েছে একাধিক পান-সিগারেটের দোকান। যেখানে দেদার চলে ধূমপান কিংবা গুঠখা, খৈনির বেচাকেনা। কিন্তু বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষকের হাতেই তো দেওয়া হয়েছে ক্ষমতা! আইনভঙ্গকারীর থেকে জরিমানাস্বরূপ ২০০টাকা আদায়ের। পাল্টা প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ‘যেটা পুলিশের কাজ, সেটা কি একজন শিক্ষকের দ্বারা সম্ভব? শিক্ষক হিসেবে কেবল বুঝিয়ে অনুরোধ করা যায়। এর বেশি কিছু নয়।’ আক্ষেপ নিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘অনেক বলে কয়েও বন্ধ করতে পারিনি। বেশি বলতে গেলে ধূমপায়ী কিংবা তামাকাসক্তদের রোষের মুখে পড়তে হয়।’
বাস্তবে সবং এলাকার প্রায় প্রতিটি স্কুলের চিত্রই কমবেশি একই রকম। স্কুলের গেটের সামনেই একাধিক দোকান―যেখানে চা-পান-তামাকখোরদের রমরমা। ২নং অঞ্চলের মালপাড় বিবেকানন্দ শিক্ষানিকেতনের প্রধানশিক্ষক রমাপ্রসাদ ভট্টাচার্যও স্বীকার করলেন― এভাবে কোনও প্রধানশিক্ষকের পক্ষে জরিমানা আদায় সম্ভব নয়। তবে তিনি এও মানছেন, ‘স্কুলে দেওয়াল লিখন ও তামাকবিরোধী নিয়মিত শপথবাক্য পাঠের ফলে স্কুলের মধ্যে তামাকসেবনে অনেকটাই রাশ টানা গেছে।’
তবে রাশ টানা যায়নি তামাক সেবনের সার্বিক চিত্রে। শিক্ষাঙ্গনের নাকের ডগাতেই চলছে সিগারেট ও অন্যান্য তামাকজাত পন্যের দেদার বিকিকিনি। দশগ্রাম, বেনেদিঘি, সবং, ভিষিণ্ডীপুর, চাঁদকুড়ি, বাদলপুর, বসন্তপুর, তিলন্তপাড়া প্রায় সর্বত্রই এক চিত্র। নেই প্রশাসনিক নজরদারিও। তবে কি এভাবে ব্যর্থতাতেই পর্যবসিত হবে কোটপা-২০০৩ আইন?
এই প্রসঙ্গে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা বলেন, ‘মানুষের সচেতনতা গড়ে তোলা ছাড়া উপায় নেই। লকডাউনের পূর্বে পুলিশ প্রশাসনকে সাথে নিয়ে স্বাস্থ্যদপ্তরের একটি টাস্কফোর্সের মাধ্যমে নজরদারি চালানো হচ্ছিল। হাতেনাতে ফলও মিলছিল। কিন্তু লকডাউন পর্বে সে উদ্যোগে ভাঁটা পড়েছে। তবে বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবসকে সামনে রেখে আবারও নজরদারির কাজ শুরু করবে জেলার স্বাস্থ্যদপ্তর।’ তিনি প্রধানশিক্ষকদের সমস্যার কথা মেনে নিয়েই বলেন― ‘স্কুল গেটের বাইরে তামাক সেবন বন্ধ করা শুধুমাত্র শিক্ষকদের পক্ষে যেমন অসম্ভব, তেমনি কেবলমাত্র প্রশাসনের পক্ষেও সম্ভব নয়। তাই প্রয়োজন ছাত্রছাত্রীদের সংঘবদ্ধ প্রতিরোধ। তাহলেই সার্থক হবে উদ্দেশ্য।’
সবং থানার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক সুব্রত বিশ্বাস অবশ্য আশ্বস্ত করে জানালেন, ‘কোনও বিদ্যালয়ের তরফে এ বিষয়ে কোনও অভিযোগ জানালে কিংবা সহযোগিতা চাইলে পুলিশ প্রশাসন অবশ্যই সাহায্য করবে।’ প্রশাসন ও ছাত্র-শিক্ষকদের যুগলবন্দিতেই আপাতত নিহিত ‘নো টোবাকো’র সার্থকতার সম্ভাবনা।