রাতের কলকাতায় হেনস্থা যুবতীর, বাঁচাতে গিয়ে আক্রান্ত প্রতিবাদী মহিলা

অভীক বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা: মহিলারা যতই স্বাধীনচেতা হন না কেন, শহরের তাঁদের সুরক্ষা নিয়ে বারবার প্রশ্ন থেকেই যায়। ঠিক যেমনটা ঘটল শনিবার রাতে ইএমবাইপাসে। সোশ্যাল মিডিয়ায় আলাপ হওয়া এক ব্যক্তির সঙ্গে কিছু না জেনেই অজানা অ্যাডভেঞ্চারে বেরিয়ে পড়েছিলেন এক তরুণী। ভুল ভাঙল তখন, যখন তিনি বলা সত্ত্বেও তাকে বাড়ি ফেরাতে রাজি হননি অভিযুক্ত যুবক। শেষ পর্যন্ত তার সাহায্যে এগিয়ে আসেন এক দম্পতি। যদিও পালাবার সময় প্রতিবাদী মহিলাকে ধাক্কা মেরে পালিয়ে যায় ওই যুবক। আহত ওই মহিলা ভর্তি রয়েছেন হাসপাতালে।
পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক ৩১ বছরের ওই তরুণী জানিয়েছেন, অমিতাভ বোস নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে তার বন্ধুত্ব হয়েছিল। বেশ কিছুদিন ধরে প্রেমালাপ চলার পর অমিতাভ তাঁকে একদিন দেখা করেন। সেই মতো শনিবার রাত সাড়ে আটটা নাগাদ তিনি ইএমবাইপাসে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় ওই যুবকের সঙ্গে দেখা করতে যান। অমিতাভ তাকে নিজের গাড়িতে চাপিয়ে প্রথমে এদিক-ওদিক ঘোরাঘুরি শুরু করেন। তাঁর ভালো ব্যবহার প্রথমে তরুণীরও সন্দেহ হয়নি। ধীরে ধীরে রাত হয়ে গেলে ওই তরুণী তাকে বাড়ি নামিয়ে দেওয়ার অনুরোধ করেন।
কিন্তু তখনই যেন আচমকা পালটে যায় ওই যুবকের আচরণ। তরুণীর বাড়ির দিকে গাড়ি না ঘুরিয়ে ইএম বাইপাস দিয়ে তীব্র গতিতে গাড়ি চালাতে শুরু করেন। তরুণী তাকে আটকানোর চেষ্টা করলে তিনি ওই তরুণীকেও শারীরিক হেনস্থা করা শুরু করেন। আতঙ্কিত তরুণী এই গাড়ি থেকে জোরে চিৎকার করা শুরু করেন। এরপর কালিকপুরের কাছে অভ্যুদয় হাউজিং কমপ্লেক্স-এর সামনে বিষয়টি নজরে পড়ে পাশের গাড়িতে বসে থাকা এক দম্পতির।
জানা গিয়েছে, শনিবার রাতে আনন্দপুরে মায়ের কাছে গিয়েছিলেন নীলাঞ্জনা চট্টোপাধ্যায়। সঙ্গে ছিলেন তাঁর স্বামী ও মেয়ে। মায়ের জন্মদিন সেলিব্রেট করে রাত ১২টা নাগাদ সেখান থেকে ফেরার সময়েই তারা দেখেন, পিছনের একটি হন্ডা সিটি থেকে কোনও মেয়ের চিৎকার পাওয়া যাচ্ছে। এটা শুনে স্বামী দীপ সৎপতিকে তাঁদের গাড়িতে করে পিছনের গাড়িটির পথ আটকাতে বলেন নীলাঞ্জনা।
সূত্রের খবর, পিছনের গাড়িটির পথ আটকানোর সঙ্গে সঙ্গে হন্ডা সিটি থেকে এক তরুণীকে রাস্তায় ফেলে দেওয়া হয়। তরুণীর জামা-কাপড় অনেক জায়গায় ছেঁড়া ছিল ও তাঁর চোখে-মুখে মারধরের চিহ্নও ছিল বলে খবর। গাড়ি থেকে নেমে তরুণীকে তোলার চেষ্টা করেন নীলাঞ্জনা। এমন সময় হন্ডা সিটির চালক প্রবল গতিতে গাড়িকে ব্যাক গিয়ারে দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। যাওয়ার সময় নীলাঞ্জনার বাঁ পায়ের ওপর দিয়ে চলে যায়। রাস্তার ওপরেই পড়ে যান নীলাঞ্জনা। যদিও ওই যুবক পালিয়ে যাওয়া পর্যন্ত পুলিশের দেখা মেলেনি।
এদিকে আক্রান্ত ওই তরুণীও আহত ছিলেন। বাধ্য হয়ে সাহায্যের জন্য তিনি ১০০ ডায়াল করেন। কসবা ট্রাফিক গার্ডের এক সার্জেন্ট ঘটনাস্থলে পোঁছন। তিনিই অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করেন। তাতেই বাইপাসের ধারে একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় নীলাঞ্জনাকে। এর পরই আনন্দপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন আক্রান্ত তরুণী। যদিও পলাতক ওই যুবকের এখনও খোঁজ পাওয়া যায়নি।