বিপাশা চক্রবর্তী, কলকাতা: বাবা মায়ের সঙ্গে নিবিষ্ট চিত্তে কাজ করে চলেছে একজন ক্ষুদে। নাম অদ্রিজ দাস। বয়স ১১। পঞ্চম শ্রেণীর পড়ুয়া। বাবা-মা মাস্ক তৈরি করছে, তাই তারও মনে হয়েছে এই কাজে সাহায্য করা উচিত। তাই দিনরাত এক করে কাজ করে চলেছে ছোট্ট অদ্রিজ।
পিকনিক গার্ডেনে বাসিন্দা অমিত দাস জানালেন, তিনি তাঁর স্ত্রী সুস্মিতা, ছেলে অদ্রিজ বাড়িতে বসে মাস্ক তৈরির কাজ করে চলেছেন। প্রতিদিনই অল্প অল্প করে কাজ চলছে। ইতিমধ্যেই ৩৫০ টি মাস্ক তৈরি করে সেটি একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। তারা যৌন কর্মীদের মধ্যে সেই মাস্ক তুলে দিয়েছে। তবে লক্ষ্য ৫০০ মাস্ক তৈরি করে বিলি করা। আমরা তিনজন ছাড়াও আরও একজন আছেন। তিনি তার ঘর থেকে কিছু কাজ করে দিয়ে যাচ্ছেন। এইভাবেই কাজ চলছে।
অমিতবাবু আরও জানান, লকডাউনে এই মাস্ক বানিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর পরিকল্পনা সুস্মিতাই প্রথম আমাকে বলে। প্রথমত ওঁর উদ্যোগেই এক কাজ শুরু করি। এক সময় সুস্মিতা নিজের জামা কাপড় নিজেই তৈরি করবে বলে সেলাই শিখে ছিল শখ করে। এখনও নিজের জামা নিজে তৈরি করে। বাড়িতে পড়ে থাকা নতুন কাপড়গুলো আজ মানুষের উপকারে কাজে আসছে। আজ সত্যিই সুস্মিতার সেলাই শেখা আর আমার সেলাই মেশিন কিনে দেওয়াটা আজ চরমভাবে সার্থকতা লাভ করছে, এটা ভেবেই ভালো লাগছে।
অমিতবাবু আরও জানালেন, ‘চলো গাছ লাগাই’ বলে আমাদের একটি ছোট গ্রুপ আছে। আমরা প্রতি রবিবার বিভিন্ন এলাকাতে গাছ লাগিয়ে থাকি। গ্রুপের সদস্য ৬০। প্রত্যেকের ১০০ টাকা করে দেন। তাতেই আমরা কাজ করি নিজেদের উদ্যোগে। এখন আমরা যে মাস্ক তৈরি করছি, সকালে গিয়ে গ্রুপের সদস্যরা গরিব মানুষের হাতে বিনামুল্যে তুলে দিচ্ছেন। মাস্ক সম্পূর্ণ সুতির কাপড়ে তৈরি। কেচে নিয়ে ব্যবহার করা যাবে।
আমাদের গ্রুপের সদস্য মলয় নিজের বাড়িতে বসে কাজ করছেন। আর আমি আর আমাদের ছেলে অদ্রিজ সুস্মিতার এঁকে দেওয়া কাপড়গুলো কেটে দিচ্ছি আর সুস্মিতার হাতে তৈরি হচ্ছে মাস্ক।
অমিত দাস-এর কথায়, চারিদিকে শুধু মৃত্যু সংবাদ। বহু মানুষ দুবেলা খেতে পারছে না। এই মারণ ভাইরাসের হাত থেকে পৃথিবীকে বাঁচাতে সারা বিশ্বজুড়ে চলছে লকডাউন।এর মধ্যেই বহু সাধারণ মানুষ এগিয়ে এসেছে একে অপরের জন্য। এই অবস্থায় আমরাও যদি মানুষের জন্য কিছু করতে পারি সেটাই আমাদের মানবজীবনের সার্থকতা বলে মনে করব।