
যুগশঙ্খ ডিজিটাল ডেস্ক: বাঁচার জন্য খাওয়া নাকি খাওয়ার জন্য বাঁচা – এ ভাবনার কোনও মিমাংসা নেই। তবে যার জন্যই যা হোক না কেন, রসনা তৃপ্তিতে তৎপর হই আমরা সবাই। আলুসেদ্ধ ভাত পরম তৃপ্তি দিলেও, মাঝে মাঝে আমাদের স্বাদকোরকগুলি একটু বদল চায়। আর সেই বদল অবশ্যই সাধ এবং সাধ্যের মধ্যে রেখেই আমরা করতে চাই। কেউ কেউ আবার সারা পৃথিবীর কড়াই খুন্তির লড়াইকেই চেখে দেখতে চান। সেই কথা মাথায় রেখেই যুগশঙ্খ ডিজিটালে বিশ্ব কুইজিন । আজ পাঁচমেশালি ।
শেষ পাতে মিষ্টি, তা বোধহয় সকল ভারতীয়ই পছন্দ করেন । আর বাঙালি হলে তো কথাই নেই । ভারতীয়রা অনুকরণের মাধ্যমে অনুসরণ করতে ভালোবাসেন । তাই অনেক বিদেশি খাবার নিজের স্বাদ মতো করে নিয়েছে ভারতীয়রা । যেমন পুডিং । ভারতীয় খাবারে পুডিং বেশ জনপ্রিয় । তবে এই সুস্বাদু খাবারের উৎপত্তি স্থল ব্রিটেন । ব্রিটিশের হাত ধরে পুডিং মিশেছে ভারতীয় খাদ্য তালিকায় । অতীত ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, মধ্যযুগে এই বিশেষ খাবার বানাতে শুরু করেন পশ্চিম ইউরোপের মেয়েরা । এর সত্যতা মিলেছে ১৬১৫ সালে প্রকাশিত ‘দ্য ইংলিশ হাউজওয়াইফ’ নামে গার্ভাস মারখামের বইয়ে । বইটিতে তিন ধরনের পুডিং তৈরির রেসিপি বলা হয়েছিল—সেদ্ধ পুডিং, রুটি পুডিং ও ভাতের পুডিং । ১৮৩৭ সালে যুক্তরাজ্যের আলফ্রেড বার্ড, কর্নফ্লাওয়ার সহযোগে যে প্রণালি ব্যবহার করে পুডিং তৈরি করেন, সেটিকেই প্রথম বিক্রয়যোগ্য পুডিং তৈরির প্রণালি হিসেবে বিবেচনা করা হয় । আলফ্রেড বার্ড কর্নফ্লাওয়ার ব্যবহার করেছিলেন কারণ, তাঁ স্ত্রীয়ের ডিমে অ্যালার্জি ছিল ।
মজার ব্যাপার হচ্ছে, ১৮৬১ সালে প্রকাশিত ইসাবেলা বিটনের লেখা ‘দ্য বুক অব হাউজহোল্ড ম্যানেজমেন্ট’- এ পুডিং তৈরির উপকরণ হিসেবে দুধ, চিনি কিংবা ফলমূলের পাশাপাশি গরুর চর্বিরও উল্লেখ পাওয়া যায় । উনিশ শতকের শেষে এবং বিশ শতকের গোড়ায় এই রেসিপি এবং বার্ডের কাস্টার্ড পাউডার ব্যবহার করে তৈরি খাবার ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে । সেই পরিবর্তনের ধারাবাহিকতায় আজ পুডিং এর উপকরণ ক্রমাগত পাল্টাচ্ছে । তেমনই দুটো রেসিপি রইল আজ বিশ্ব কুইজিনের পাঁচমেশালি – তে।
গাজরের পুডিং
সামনেই শীতকাল । লাল গাজরের সময় । যদিও এখন সারা বছরই গাজর পাওয়া যায় । যাই হোক । আপনার হাতের কাছে যে গাজর আছে তাকে ডুমো করে কেটে নিন । যতটা পরিমাণ বানাতে চান সেই মতো গাজর নেবেন । আমি এখানে মাঝারি সাইজের ৪টে গাজরের হিসেবে সব কোয়ান্টিটি বলব । একটা প্যানে জল নিয়ে ফোটান, তারপর আগে থেকে কেটে রাখা গাজরগুলো দিয়ে সেদ্ধ বসান । এই সময় একটি কাঁচের বাটিতে চিনা গ্রাস নিয়ে ১৫ মিনিটের জন্য ভিজিয়ে রাখুন । মনে রাখবেন জলটা হালকা গরম দেবেন । গ্যাসের অন্যদিকে আরেকটি প্যান নিয়ে তাতে হাফ লিটার দুধ গরম করুন । দুধ ফুটে গেলে ওতে চিনি দিয়ে নাড়তে থাকুন । আপনি যেমন মিষ্টি পছন্দ করেন তেমন চিনি দেবেন । চিনি দুধে মিশে গেলে হাফ কাপ কনডেন্স মিল্ক মেশান ।
আরও পড়ুন: ঘরোয়া পদ্ধতিতে ফরসা হওয়ার সহজ উপায়
ইত্যবসরে গাজর সেদ্ধ হয়ে গেলে জল ছেকে নিয়ে মিক্সিতে পেস্ট করে নিন । এবার ওই দুধে গাজরের পেস্ট মিশিয়ে নাড়ুন । ১৫ মিনিটের জন্য যে চিনা গ্রাসকে ভিজিয়ে ছিলেন সেটি এবার অল্প আঁচে বসিয়ে পাতলা মিশ্রণ তৈরি করে ওই দুধ গাজরের মিশ্রণে দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে ফোটান । ফুটে গেলে একটি কাঁচের পাত্রে পুরো মিশ্রণটা ঢেলে ওপর থেকে ড্রাইফ্রুটসের কুচি ছড়িয়ে দিয়ে ঠান্ডা হতে দিন । তারপর ফ্রিজে কমপক্ষে ৪-৫ ঘণ্টার জন্য রেখে দিন । যখন খাবেন তখন ফ্রিজ থেকে বার করে ছুরি দিয়ে সুন্দর করে কেটে প্লেটে সাজিয়ে খান ও খাওয়ান । আলফ্রেডের স্ত্রীয়ের মতো যদি আপনারও ডিমে অ্যালার্জি থাকে তাহলে এই পুডিং রেসিপিটি আপনি ট্রাই করে দেখতে পারেন ।
মিষ্টিকুমড়োর পুডিং
মিষ্টিকুমড়োর ছক্কা, কালো জিরে ফোড়ণ দিয়ে কুটি ভাজা, নিদেন পক্ষে ঘি আর কাঁচালংকা সহযোগে মিষ্টি কুমড়ো সেদ্ধ খেতে আমরা অভ্যস্ত। তো সেই কুমড়োর পুডিং কেমন করে বানাবেন তা দেখা যাক। ভাল মিষ্টিকুমড়ো বড় বড় করে কেটে সেদ্ধ বসান। এরপর ওই সেদ্ধ কুমড়ো ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে নিন । এবার একে একে ওই পেস্টে স্বাদ অনুযায়ী চিনি দিন, ২৫০ মতো দুধ দিন। ব্লেন্ড করুন । ভালোভাবে মিশে গেলে আরও ২৫০ দুধ, ২টো ডিম, ফ্রেশ ক্রিম, ভ্যানিলা এসেন্স দিয়ে আবারও ব্লেন্ড করুন । এবার মিশ্রণটিকে ছোট ছোট পাত্রে কিংবা একটি বড় পাত্রে ঢালুন । একটি প্যানে জল গরম করে তারওপর মিশ্রণে ভরা পাত্রটি রেখে একটি অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল দিয়ে মুড়ে দিয়ে প্যানটি ঢেকে দিন । ভাপে জমাট বাধতে দিন । ২০-২৫ মিনিট পর ঢাকনা খুলে দেখুন জমাট বেধেছে কিনা । যদি সঠিকভাবে না হয় তাহলে আরও কিছুক্ষণ রাখুন । এরপর নামিয়ে ঠান্ডা করে ফ্রিজে রাখুন । খাওয়ার আগে নামিয়ে ওপরে কোনও ফ্রুটসিরাপ ছড়িয়ে খান ।